আশানুর রহমান আশা
মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এক চিকিৎসক দম্পতি। এই দম্পতি হলো ডা. মুহাম্মদ ময়েজ উদ্দীন আহমেদ প্রধান ও তার স্ত্রী ডা. সোহেলী জামান। এই চিকিৎসক দম্পতির ৪৮টি ব্যাংক হিসাবে ২৩ কোটি টাকা লেনদেনের সন্ধান পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি। প্রশ্ন ফাঁস মামলার পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং মামলারও প্রস্তুতি চলছে। গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে ময়েজ উদ্দিন পলাতক রয়েছেন। তবে তার স্ত্রী নিজ বাসাতেই রয়েছেন।
সিআইডির কর্মকর্তারা বলছেন, ময়েজ উদ্দিন ও সোহেলী জামান ছাড়াও আরও প্রায় ১৫ জনের বিরুদ্ধে তারা মানি লন্ডারিং মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
সিআইডি’র সাইবার পুলিশ সেন্টারের বিশেষ পুলিশ সুপার এসএম আশরাফুল আলম বলেন, ‘ময়েজকে গ্রেফতারের জন্য নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। তার স্ত্রীর ব্যাংক লেনদেনও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া অন্যদের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। তদন্ত শেষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হবে।’
সিআইডির কর্মকর্তারা বলছেন, মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসকারী চক্রের অন্যতম সদস্য ডা. ময়েজ। প্রশ্নফাঁসকারী চক্রের অন্যতম প্রধান হোতা জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া মুন্নু’র সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ট সম্পর্ক। পারভেজ, সানোয়ার, দিপুসহ এই চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্য পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এবং আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে এই চিকিৎসক দম্পতির নাম উল্লেখ করেছেন। এরপর থেকেই মূলত তারা ময়েজের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেন। তবে এর আগেই বিষয়টি জানতে পেরে আত্মগোপনে চলে যান ময়েজ।
ডা. সোহেলী জামান
ডা. সোহেলী জামান
তদন্ত সূত্র জানায়, ২০০৮ সাল থেকে ২০২০ সালের আগস্ট পর্যন্ত ময়েজ উদ্দিনের নামে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৩৯টি হিসাব ও এফডিআর পাওয়া গেছে। এসব ব্যাংক হিসাবে তিনি বিভিন্ন সময়ে মোট ১৯ কোটি ১৩ লাখ ৪১ হাজার ৫৮৯ টাকা জমা করেছেন। এর মধ্যে তিনি ১৮ কোটি ১৮ লাখ ২৪ হাজার ৪৫০ টাকা উত্তোলন করে ফেলেছেন। এছাড়া ময়েজের নামে রাজাবাজারে একটি বাড়ির সন্ধান পাওয়া গেছে। তার স্ত্রী সোহেলী জামানের নামে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৯টি হিসাব ও এফডিআর পাওয়া গেছে। এসব হিসাবে একই সময়ে তিনি ৩ কোটি ৩৫ লাখ ২৯ হাজার ৮৫১ টাকা জমা করেন। তবে এরই মধ্যে তিনি ৩ কোটি ৩৫ লাখ ২৩ হাজার ৪৩৮ টাকা উত্তোলন ও স্থানান্তর করেছেন।
সিআইডির কর্মকর্তারা জানান, ময়েজ মূলত চোখের ডাক্তার। জসিম ও তার পরিবারের সদস্যরা চোখের সমস্যা সংক্রান্ত চিকিৎসায় ময়েজের কাছে যাওয়ার সূত্র ধরে পরিচয় হয়। এক পর্যায়ে ২০০৬ সাল থেকে তারা একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলে প্রশ্ন ফাঁস শুরু করেন।
সূত্র জানায়, চিকিৎসা পেশার পাশাপাশি ফেইম নামে ময়েজ একটি মেডিক্যাল ভর্তি কোচিং সেন্টার পরিচালনা করতেন। সেই কোচিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থী সংগ্রহ করাই ছিল তার প্রধান কাজ। তার স্ত্রী সোহেলী জামানও ফেইম কোচিং সেন্টারের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউশনে কর্মরত ডা. সোহেলী জামান বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা। আমার নিজের কোনও অর্থ নেই। আমার ব্যাংক হিসাব ব্যবহার করে ময়েজ এসব অর্থ লেনদেন করেছেন। আমি এসবের সঙ্গে জড়িত না।’
গত বছরের ১৯ এবং ২০ জুলাই মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজের প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে জসীম উদ্দীন ভূঁইয়া, পারভেজ খান, জাকির হোসেন ওরফে দিপু, মোহাইমিনুল ওরফে বাঁধন ও এস এম সানোয়ার হোসেনকে গ্রেফতার করে সিআইডি। এ সময় জসিমের কাছ থেকে দুই কোটি ৪৭ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র এবং দুই কোটি ৩০ লাখ টাকার চেক উদ্ধার করে পুলিশ। এছাড়া পারভেজের কাছ থেকে ৮৪ লাখ টাকার চেক উদ্ধার করা হয়। তাদের গ্রেফতারের পরপরই প্রশ্নফাঁস চক্রের বিশাল এক সিন্ডিকেটের সন্ধান পাওয়া যায়