—– নজরুল মৃধা
বুধবার রাতে রংপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক হাতে প্লাকার্ড নিয়ে বসেছিলেন। ডিসিকে স্যার বলতে বাধ্য করার অভিযোগে তিনি এই প্রতিবাদ করেন। তার এধরনের প্রতিবাদ আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। উন্নত ও সভ্য রাষ্ট্রে সরকারি কর্মচারীরা সেবা নিতে যাওয়া নাগরিকদের ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করেন। তবে আমাদের দেশে সেই উপনেবেশিক আমলে শুরু হয়েছে সরকারি কর্মকর্তাকে স্যার বলার অভ্যাস। সেই অভ্যাস থেকে আমরা এখনও বের হয়ে আসতে পারিনি। তবে স্যার বলতে বাধ্য করা প্রতিবাদের অংশ হতে পারে এটাও অনেকে মেনে নিতে পারছেন না। কারণ ডিসি পদটিও সম্মানজনক পদ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্ন উঠেছে অফিস টাইম বিকেল ৪/৫টা। কিন্তু ওই শিক্ষক ডিসি অফিসে গিয়েছেন সন্ধ্যা ৬টার পরে। যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্ন উঠেছে তিনি একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তিনি কী ভাবে রংপুরের প্রথম শহীদ শংকুর নামে বিদ্যালয় পরিচালনা করতে পারেন। তিনি ওই স্কুলের বিষয়ে তদবির করতে গিয়েছিলেন এমনটা শোনা যাচ্ছে। শহীদ শংকুর নামের সাথে রংপুরবাসির আবেগ জড়িত রয়েছে। ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ আবাঙ্গলী সরফরাজ খানের বাসা থেকে ছোড়া গুলিতে শংকু শহীদ হন। ওই দিনের মিছিলে আমিও ছিলাম। আমার সামনেই শংকু মারা গেছেন। তাই শংকু নামের সাথে আমার আবেগও জড়িত রয়েছে। কদিন আগে রংপুরের বই মেলায় কথা হয়েছিল সমাজসেবক,শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ ফখরুল আনম বেঞ্জু ভাইয়ের সাথে। তিনি সেই দিন দুঃখ প্রকাশ করে বলেছিলেন, শংকুর নামে রংপুরে স্কুল হয়েছে। অথচ শংকুর পরিবারের কারও অনুমতি নেয়া হয়নি। শংকুর ছোট বোন একটি স্কুলে চাকরি করতেন। করোনা শুরু হওয়ার পরপরই তার চাকরি চলে যায়। শংকুর নামের প্রতিষ্ঠানে শংকুর বোনকে একটি ছোটখাট চাকরি দেয়া যেতে পারত। কিন্তু তা হয়নি। শংকুর নাম ভাঙ্গিয়ে ব্যবসা করা হচ্ছে।
যা হউক এখন মূল প্রসঙ্গে আসি। ডিসি যেমন একটি সম্মানীয় পদবী তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকও একটি সম্মানীয় পদবী। দুই জনের কর্মক্ষেত্র দুই রকম। এখানে স্যার বলতে বাধ্য করার অভিযোগ তুলে যে কান্ডটি করা হয়েছে তা রংপুরের সচেতন মহলের কাছে কাম্য ছিল না বলে অনেকে মনে করছেন। ওই প্রতিবাদের শিক্ষক তার কোমলমতি শিশু সন্তানকে পাশে বসিয়েছেন প্রতিবাদের অংশ হিসেবে। একজন শিক্ষক হিসেবে এখানে কী শিশুর অধিকার ক্ষুন্ন হয়নি। এমন প্রশ্ন উঠেছে অনেকের মাঝে। কথা উঠেছে তদবির করতে গিয়ে সফল না হওয়ায় এমন কান্ড হতে পারে। শিক্ষক সমাজের আলোকবর্তিকা। তারা জ্ঞানের আলো বিতরণ করেন। তাই ওই শিক্ষককে আরও ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত ছিল বলে বেশ কয়েকজনকে মন্তব্য করতে শোনা গেছে। ছড়াকার ও সাংবাদিক জয়নাল আবেদিন এ প্রসঙ্গে একটি ছড়া লিখেছেন। তার ছড়া সারমর্ম হচ্ছে অসময়ে তদবিরে গিয়েছিলেন ওই শিক্ষক। তদবির না হওয়াতে তিনি নিজেকে জাহির করতে এমনটা করেছেন। বখতিয়ার শিশির নামে একজন তার ফেসবুকে লিখেছেন, একজন শহীদের নামে বিদ্যালয় পরিচালনা করা কত টুকু যুক্তিযুক্ত একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের। দেখাগেছে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমেও ওই শিক্ষকের বিষয়টি নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন অনেকে । অনেকের মনে পীড়া দিয়েছে শিশু সন্তানকে নিয়ে প্রতিবাদ জানানোর বিষয়টি। ওই বয়সের শিশু এসবের কী বোঝে। তাকে নিয়ে প্রতিবাদ করা অনেকের কাছে শোভনীয় মনে হয়নি। রংপুরের সচেতন মহলের সাথে কথা হলে অনেকেই বলেন, এধরণের ঘটনা রংপুরবাসি আর দেখতে চায়না।
***
লেখক-কবি,সাংবাদিক,সাহিত্যিক ও সংগঠক