স্টাফ রিপোর্টার
রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিক আশরাফুল আলম আপন ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা পুলিশী মামলায় এখন জেলহাজতে। আদালতের পরোয়ানামূলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে। উল্লেখ্য- আশরাফুল আলম আপন ইত্তেফাকের সাবেক উপজেলা প্রতিনিধি এবং বর্তমানে তিনি ঢাকা থেকে প্রকাশিত আমার সংবাদ ও স্থানীয় দৈনিক প্রথম খবরের উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন। এছাড়া তিনি বদরগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদকেরও দায়িত্ব পালন করছেন। স্বজনদের অভিযোগ- ২০১৭ সালের ৩০ জানুয়ারী বদরগঞ্জ থানার এসআই সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলার আসামীকে ধরতে গিয়ে বাদীর লোকজনের কাছে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগসহ নানাবিধ অপকর্মের বিরুদ্ধে একাধিক সংবাদ ওই সময়ে ইত্তেফাকে প্রকাশিত হয়। এঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে পরবর্তীতে এসআই সিরাজুল ইসলাম মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আতিকুর রহমানের যোগসাজসে অন্তর্ঘাতমূলক কাজের ষড়যন্ত্র করার অপরাধে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা একটি পে-িং মামলায় গোপনে তার নাম জড়িয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে উভয় কর্মকর্তা বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যান। বিষয়টি আশরাফুলসহ সকলেরই অজানা ছিল। হঠাৎ করে আদালতের গ্রেফতাারি পরোয়ানামূলে বদরগঞ্জ থানা পুলিশ তাকে বাড়ী থেকে গ্রেফতার করলে বিষয়টি সবার নজরে আসে। ওই মামলার নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে- ২০১৬ সালের ৪ সেপ্টেম্বর বদরগঞ্জ থানার তৎকালিন এসআই সিরাজুল ইসলাম (বিপি নং ৬৮৮৮০৭২১৪৭) বাদী হয়ে অন্তর্ঘাতমূলক কাজের ষড়যন্ত্র করার অপরাধে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে (মামলা নম্বর ৬) ওই মামলা দায়ের করা হয়। মামলার এজাহারে উপজেলা জামায়াতের আমির ও সেক্রেটারিসহ চারজনের নাম উল্লেখ করার পাশাপাশি ৩০-৩৫ জন জামায়াত কর্মীকে অজ্ঞাত দেখানো হয়। ২০১৮ সালের ২২ জানুয়ারী মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আতিকুর রহমান ওই অজ্ঞাতনামা আসামীর তালিকায় সাংবাদিক আশরাফুলের নাম অন্তর্ভুক্ত করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। এব্যাপারে ওই সময়ে বদরগঞ্জ থানার দায়িত্ব পালনকারী ওসি আখতারুজ্জামান নাশকতা সৃষ্টির অপচেষ্টায় দায়ের করা মামলায় সাংবাদিক আশরাফুলের নাম জড়িয়ে আদালতে চার্জশীট দেওয়ার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, বিষয়টি আমার অগোচরে হয়েছে। হয়তো কোন কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে মামলার বাদী এসআই সিরাজুল ইসলাম ও তদন্ত কর্মকর্তা আতিকুর রহমান ওই ঘটনাটি ঘটিয়েছেন। এবিষয়ে মামলার বাদী এসআই সিরাজুল ইসলামের সাথে সেলফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি কিছুই জানি না। আর একথা বলেই তিনি ফোনকল বিচ্ছিন্ন করে দেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আতিকুর রহমান বলেন, আমি তদন্ত কর্মকর্তা হলেও সব কিছু করেছেন মামলার বাদী এসআই সিরাজুল ইসলাম। আমি যদি জানতাম সাংবাদিক আশরাফুলের নাম চার্জশীটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তাহলে সেখানে সাক্ষরই করতাম না। বদরগঞ্জ থানার বর্তমান ওসি হাবিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, আদালতের পরোয়ানামূলে সাংবাদিক আশরাফুলকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এর বেশি বলতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। এদিকে সাংবাদিক আশরাফুলকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারের ঘটনায় বদরগঞ্জ প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি অবিলম্বে তার মুক্তিসহ ওই মামলার দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি জানানো হয়েছে। এবিষয়ে বদরগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহফুজার রহমান বলেন, সাংবাদিক আশরাফুল ইসলাম জামায়াত করাতো দূরের কথা কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই জড়িত নয়। সেটা স্থানীয় প্রশাসনের লোকজনও জানেন। মুলতঃ তৎকালিণ বদরগঞ্জ থানার এসআইয়ের রোষাণলের শিকার হয়েছেন আশরাফুল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *