নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর
রংপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি-সম্পাদকসহ ১৯ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সমাজসেবার হটকারী সিদ্ধান্তে মামলার ঘটনায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। সেই মামলা নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে সাংবাদিকদের মাঝে। বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে নাগরিক সমাজসহ সচেতন মহল। উঠেছে সমালোচনার ঝড়। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহারের দাবী জানিয়েছেন রাজনীতিবীদ আজাদুল ইসলাম আজাদ, আবুল কালাম মুকুল, সাবেক ছাত্রদল নেতা আবিদ হাসান গুড্ডুসহ সাংবাদিকরা।
জানা গেছে, ১৯৬৫ সালে রংপুরের পায়রা চত্ত্বরে একটি ভবনে প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর শহর উন্নয়নের জন্য সরকার প্রেসক্লাবের সেই জায়গাটি অধিগ্রহণ করে তার বদলে জাহাজ কোম্পানীর সামনে স্টেশন রোডস্থ ছোট একটি ড্যামেজ ভবন তৎকালীন জেলা প্রশাসক বরাদ্দ দেয়। এরপর প্রেসক্লাবের তৎকালীন কমিটি ১৯৯১ সালে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন নেয় যা ১৯৯৩ সালে কমিটি পরিবর্তন হলে সমাজসেবা কর্তৃপক্ষ বা প্রেসক্লাবের তৎকালীন কমিটির কেউ আর খোঁজ রাখে না।
সুত্র মতে, পরবর্তীতে রংপুরের সিনিয়র সাংবাদিকরা ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রতীকি মূল্যে স্টেশন রোডস্থ বাহারবন কাচারীরস্থ বর্তমান জায়গাটি খরীদি দলিলে সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রি করে নেয়। এরপর ১৯৯৬ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোয়াজ্জেম হোসেনকে নির্মাণ কমিটির চেয়ারম্যান করে নিজস্ব অর্থায়নে পর্যায়ক্রমে বর্তমান প্রেসক্লাব ভবন গড়ে তোলা হয়।
প্রেসক্লাব সুত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালে সাবেক সভাপতি অনিয়ম ও দূর্নীতি করে একক সিদ্ধান্তে সদস্যদের নির্মাণ কাজে দেয়া ২৪ লাখ টাকা ১২টি চেকের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে আত্মাসাত করেন তিনি। এরই প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়ায় তাকে ক্লাবের সদস্য পদ থেকে বহিস্কার করা হয় এবং আত্মসাতকৃত টাকা আদায়ের জন্য তার বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা হয় যা এখনও চলমান।
ফ্যাসিবাদী আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর সে সময়কারী সুবিধাবাদী কতিপয় নামধারী সাংবাদিকদের নিয়ে ক্লাব বহিস্কৃত সদস্য বৈষম্য বিরোধী সাংবাদিক আন্দোলনের নামে প্রেসক্লাবের বিরুদ্ধে সমাজসেবার কাছে অভিযোগ করে এবং ভূয়া একটি কমিটি করে সমাজসেবায় দাখিল করে। সেই সাথে সমাজসেবাকে বিভিন্নভাবে ম্যানেজ করে প্রেসক্লাবের বিরুদ্ধে অবৈধ হস্তক্ষেপের জন্য চাপ দেয়। সমাজসেবা এ বিষয়ে প্রেসক্লাবের কাছে প্রায় ৩২ বছর ধরে রেজিস্ট্রেশন নবায়ন না করার অভিযোগ তুলে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। এর প্রেক্ষিতে সমাজসেবার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষ। সেই মামলা থাকাকালীন হঠাৎ করে ১৫ জানুয়ারী সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক স্বাক্ষরিত এক আদেশে প্রেসক্লাব পরিচালনার জন্য ৪ সদস্য বিশিষ্ট তত্ত্বাবধায়ক মন্ডলী নিয়োগ করে। এ আদেশের বিপক্ষে ন্যায় বিচার চেয়ে প্রেসক্লাব পূনরায় সমাজসেবার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে আদালতের বিচারক সমাজসেবা কর্মকর্তাদের কাছে তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগে কেন চিঠি দেওয়া হলো এ বিষয়ে ৩০ দিনের মধ্যে স্বÑশরীরে হাজির হয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। এরপর অন্যান্য দিনের মত ২২ জানুয়ারী ক্লাব খুলে সকল সাংবাদিক ক্লাবে প্রবেশ করে। এ ঘটনায় ওই রাতে ক্লাবের বহিস্কৃত সদস্য ও কুচক্রী মহলের ইন্ধনে শহর সমাজসেবা কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বাদী হয়ে মেট্রোপলিটন কোতয়ালী থানায় প্রেসক্লাবের সভাপতি মোনাব্বর হোসেন মনা (দৈনিক আগামীর সন্ধান), সাধারণ সম্পাদক মেরিনা লাভলী (চ্যানেল আই). মাহফুজ আলম প্রিন্স (আনন্দ টিভি), ইসমাইল হোসেন প্রিন্স (বৈশাখী টিভি), আঞ্জু মনোয়ারা বেগম রেখা মনি (বিজনেস বাংলাদেশ), তাজিদুল ইসলাম লাল, দৈনিক বায়ান্নর আলো ও দেশ রূপান্তর), আব্দুর রউফ সরকার (আগামীর সন্ধানে), জাহাঙ্গীর আলম বাদল (আরটিভি), জিতু কবীর (জাগো নিউজ), বাবলুর রহমান বারী (দিগন্ত টিভি), সাইফুল ইসলাম (খোলা কাগজ সময়ের আলো), ফরহাদুজ্জামান ফারুক (ঢাকা পোস্ট), এহসানুল হক সুমন (প্রতিদিনের বাংলাদেশ), তাজুল ইসলাম তুহিন (দৈনিক যুগের আলো), আবুল কাশেম (আরটিভি), রেদওয়ান হিমেল (সময় টিভি), নাইম হোসেন (নিউজ এইট), জিএম জয় (দাবানল), সদরুল আলম দুলু (ইউএনভি) এবং অজ্ঞাতনামা ৮/১০ জন দেখিয়ে মামলা করা হয়।
সাংবাদিক রেদোয়ান হিমেল বলেন, সদস্যরা নিয়মিত প্রেসক্লাবে বসে তাদের নিজস্ব গতিতে পেশাগত দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তাদের মধ্যে কোন সমস্যা নেই। সাংবাদিকতাকে কলুষিত করতে একটি মহল ইন্ধন দিয়ে অতিউৎসাহী হয়ে নানান ঘটনা রটে বেরাচ্ছেন।
রংপুর প্রেসক্লাবের প্রবীন সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম জাহাঙ্গীর বলেন, সমাজসেবার নিবন্ধন নেওয়ার পর তারা আমাদের সাথে কোন যোগাযোগ করেনি এবং আমরাও সমাজসেবা থেকে কোন সুযোগ-সুবিধা বা সহযোগিতা পাইনি। হঠাৎ করে একটি পক্ষের কাছে ম্যানেজ হয়ে সমাজসেবা হটকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিরপেক্ষতাকে বিতর্কিত করতে উঠে পড়ে লেগেছে। তিনি বলেন, সমাজসেবা দীর্ঘদিনের নিবন্ধন নবায়ন না করায় তা জরিমানাসহ নিবন্ধন ফি নিতে পারেন। অন্যত্থায় নিবন্ধন বাতিল করতে পারেন। এর বেশি কিছু না। কিন্তু তারা যা করেছে, তা কোন ক্রমেই সচেতন মহলে গ্রহণযোগ্য নয়।
রংপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি, ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিএনপি নেতা মোনাব্বর হোসেন বলেন, গত ২০২৩ সালে প্রেসক্লাবের নির্বাচনে আমাকে বিএনপি আখ্যা দিয়ে ঠেকানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তারা পারেনি। দল, মত, নির্বিশেষে প্রেসক্লাব নিজস্ব গতিতে চলছে। মামলা চলমান থাকার পর বিতর্কিত সাংবাদিকদের পক্ষ নিয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তর অবৈধ হস্তক্ষেপ করে রংপুরের পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করে তুলেছে।
মামলার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন রংপুর মেট্রোপলিটন কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতাউর রহমান।
এ ব্যাপারে রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল বলেন, বিষয়টি অবগত হয়েছি। যেহেতু সমাজসেবা, সেহেতু আমরা পর্যবেক্ষন করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়ুন