কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার বালিয়ামারী সীমান্তে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত বর্ডার হাটের কার্যক্রম পুনরায় চালু না করার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত আবেদন জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, চর রাজিবপুর উপজেলা শাখা। বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) চর রাজিবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) মাধ্যমে লিখিত আবেদন দেন উপজেলা জামায়াতের আমির আবুল বাশার মো.আব্দুল লতিফ।
উপজেলা জামায়াতের আমির আবুল বাশার মো.আব্দুল লতিফ নিজেই এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এছাড়াও ইউএনওর দফতর কর্তৃক আবেদনপত্রটি গ্রহণের একটি প্রাপ্তিস্বীকারপত্র এই প্রতিবেদকের কাছে এসেছে।
প্রসঙ্গত, সপ্তাহের দুই দিন (সোমবার ও বুধবার) বালিয়ামারী বর্ডার হাটের কার্যক্রম চলে। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালীন গত আগস্ট মাসে হাটটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। সেই থেকে বন্ধ রয়েছে। সম্প্রতি হাটের কার্যক্রম চালুর উদ্যোগ নেওয়ার গুঞ্জনে হাট চালু না করার আবেদন করে জামায়াত।
আবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে বন্ধ থাকা বর্ডার হাটের কার্যক্রম পুনরায় চালু হলে তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হতে পারে। এ ছাড়াও এই চালুর সুযোগ নিয়ে সীমান্তপথে মাদকের প্রসার, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা চালু হবে। হাট চালুর মাধ্যমে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যবৈষম্য বাড়বে। এসব বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বর্ডার হাট চালু না করার আবেদন জানিয়েছে উপজেলা জামায়াত।
আবেদনপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, রাজিবপুরের বালিয়ামারী ও ভারতের কালাইয়ের চর সীমান্তবর্তী এই বর্ডার হাট পুনরায় চালুর প্রক্রিয়া শুরুর খবরে রাজিবপুর ও পার্শ্ববর্তী রৌমারী উপজেলার জনগণের মধ্যে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়দের আশঙ্কার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে হাটটি পুনরায় চালু না করা আবেদন জানানো হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, রংপুর বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার এবং পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্টদের আবেদনপত্রের অনুলিপি দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা জামায়াতের আমির আবুল বাশার মো.আব্দুল লতিফ বলেন, ‘স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মতামত নিয়ে উপজেলা জামায়াতের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন দেওয়া হয়েছে। এটি দলীয় এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের পক্ষ থেকে দিয়েছি।’
আবেদনপত্রে উল্লেখ করা আশঙ্কার বিষয়ে জানতে চাইলে এই জামায়াত নেতা বলেন, ‘সীমান্ত হাট চালু হলে উপজেলায় মাদকের সরবরাহ বেড়ে যায়। ফলে যুবসমাজ ও তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে স্থানীয় অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন। এ ছাড়াও ওই হাট চালু হলে সীমান্তপথে অস্ত্র চোরাচালানের মাধ্যমে দেশের বর্তমান স্থিতিশীল অবস্থার অবনতি হতে পারে। তাতে করে দ্বিতীয় এই স্বাধীনতা নস্যাৎ করার পাঁয়তারা হতে পারে। এজন্য উপজেলাবাসী চান বর্ডার হাটটি বন্ধ থাকুক।’
ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যবৈষম্য বাড়া নিয়ে উদ্বেগ প্রশ্নে এই জামায়াত নেতা বলেন, ‘ওই হাটে ভারতের ভেন্ডর (বিক্রেতা) ৭৫ জন এবং বাংলাদেশের মাত্র ২৫ জন। এটা একটা বৈষম্য। আর বর্ডার হাটে ভারতীয় পণ্য উচ্চমূল্যে বিক্রি করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশি পণ্যগুলোর তারা অত্যন্ত কম মূল্যে ক্রয় করে নিয়ে যায়। ফলে তাদের পণ্য আমাদের এলাকার লোকজনকে অনেক বেশি দামে কিনতে হয়। এসব বিবেচনায় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মতামতের ভিত্তিতে বর্ডার হাটের কার্যক্রম পুনরায় চালু না করতে আবেদন জানানো হয়েছে।’
তবে বর্ডার হাট চালু না করার বিষয় নিয়ে হাটের বাংলাদেশ অংশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কোনও আলোচনা হয়নি বলে দাবি করেছেন তালিকাভুক্ত বিক্রেতা ও রাজিবপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বাবু মিয়া। তিনি বলেন, ‘জামায়াতের আবেদন নিয়ে আমাদের সঙ্গে কোনও আলোচনা হয়নি। জামায়াত নেতার হাট চালুর বিরোধিতার বিষয়টি তার ব্যক্তিগত চিন্তা।’
রাজিবপুর উপজেলা বণিক সমিতির সভাপতি আব্দুস সবুর ফারুকী বলেন, ‘এ নিয়ে বণিক সমিতির সঙ্গে স্থানীয় জামায়াতের কোনও আলোচনা হয়নি। তাদের আবেদনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’
জামায়াতের আবেদনের বিষয়ে জানতে চর রাজিবপুর ইউএনও তানভীর আহমেদকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *