তাজিদুল ইসলাম লাল, রংপুর সংবাদদাতা
বর্ষাকাল মানেই তিস্তা পাড়ের কোটি মানুষের আতঙ্ক আর আশঙ্কার। প্রতিবছর অন্তত: ৫ থেকে ৬ বারের ঢলে ভাঙ্গে বসতবাড়ীসহ আবাদী জমি এবং বন্যায় ভাসে এ অঞ্চলের মানুষ, জীব জন্ত্রুসহ গাছপালা। ব্যারেজের খুলে রাখা ৪৪টি গেট দিয়ে হু হু করে ঢুকছে উজানের পানি। এরই মধ্যে রংপুর, দিনাজপুর ও বগুড়ার প্রধান সেচ খালগুলো পানিতে টইটুম্বুর হয়েছে। একারণে রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের গ্রামগুলোতে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা বন্যা পরিস্থিতিতি মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি গ্রহণ করে রেখেছে।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকালে তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ ছিল ৫১ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার। অপরদিকে কাউনিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ ছিল ২৬ দশমিক ৮ সেন্টিমিটার। বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সর্বশেষ তথ্যে ব্যারেজ পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও আগামী কয়েকদিনের মধ্যে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।
প্রতিবছরই উজানের ঢল এবং ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে একাধিকবার তিস্তায় বন্যা দেখা দেয়। এতে অনেকের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়, আবাদি ফসল ডুবে যায়, জমির ক্ষতি হয় এবং গ্রামের রাস্তা ঘাট ভেঙ্গে যায়। বুধবার রাত থেকে বৃষ্টি ও উজান থেকে পানির ঢল নেমে আসায় তিস্তার পানি আবারও বাড়তে শুরু করেছে। পানির বাড়তি চাপে বেড়েছে উঠেছে ব্যারেজের ভাটি। তীব্র বেগে পানি গড়াচ্ছে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রামের নিম্নাঞ্চলে। এরইমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চড়ের কৃষি জমি। তাই বড় বন্যার শঙ্কায় রয়েছে তিস্তা পাড়ের মানুষ।
ঢাকা বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে সতর্কবার্তায় ভারি বর্ষণ ও ভারত থেকে পাহাড়ি ঢলের কারণে তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। সেই মোতাবেক নিচু এলাকায় বন্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ারও আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। এ কারণে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার তিস্তা নদী তীরবর্তী চরবাগডহরা, গান্নারপাড়া, বিনবিনার চর ও কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া টেপামধুপুর ইউনিয়নের হরিচরণশর্মা, আজমখা, বিশ্বনাথ, চরগনাই, রাজিব, ঢুষমারা, তালুকশাহাবাজ গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গঙ্গাচড়ার চর বাগডহরা এলাকার বুলেট জানান, উজানের ঢল ও গতকালের বৃষ্টির কারণে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। চরের কৃষকরা তামাক কাটার পর নমল করে ইরি ধান এখনও কাটা হয়নি এবং পরিমাণ বাদাম ক্ষেত পানিতে ডুবে গেছে। গান্নারপাড়ের কৃষক আতাউর রহমান জানান, গত বছরের নদী ভাঙ্গণে তার পার্শ্ববর্তী বাসিন্দা আজিজুল ইসলাম ও শহিদুলের মিলে প্রায় এক একর জমি বসতভিটাসহ নদীগর্ভে চলে গেছে। বর্তমানে তারা বাঁধে আশ্রয় নিয়ে অন্যের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা করছেন।
রিভারাইন পিপুলসহ নদী নিয়ে কাজ করা বেশ কয়েকটা সংস্থার মতে, রংপুর বিভাগের ৫ জেলার ১২টি উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে এই তিস্তা নদী। তিস্তার ভাঙ্গনে পথের ভিখারীতে পরিণত হয়েছে ২০ হাজার পরিবার। আর প্রতি বছর ২৫ থেকে ৩০ হাজার হাজার মানুষ নিরাশ্রয় হয়ে পড়েন। এদের মধ্যে কেউ কেউ চরে, কেউ বাঁধে আবার কেউ শহরে গিয়ে দিনমজুরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
কাউনিয়া উপজেলার টেপামধুপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদুল ইসলাম জানান, আমার ইউনিয়নের ৬টি মৌজা খুব ঝুঁকিতে। ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে ৬ মৌজার প্রায় সব বাড়িতেই পানি ঢুকে পড়ে। দেখা দেয় নদী ভাঙ্গন। ভাঙ্গরোধসহ আগাম বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান তিনি।