তৈয়বুর রহমান, কুড়িগ্রাম থেকে।।

কুড়িগ্রামের উলিপুরে ব্রহ্মপুত্র নদের বামতীরে নদী  ভাঙ্গন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। গত ২ সপ্তাহের ব্যবধানে রৌমারী ও উলিপুর উপজেলার সীমানায়  প্রায় ৪০০ মিটার এলাকা জুড়ে ৪০টিরও বেশী বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে । বর্তমানে সেখানে ভাঙ্গনের অপেক্ষায়  রয়েছে, সুখের বাতি আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবনসহ চারটি গ্রামের প্রায় চার শতাধিক বাড়ি, বনজ,ফলজ গাছ পালা,সুপারি বাগান,বাঁশঝাড় ও ফসলী জমি। ব্রহ্মপুত্রের পানি যতই কমছে সেখানে তীব্র স্রোতে ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি হয়ে ভাঙ্গনের ভয়াবহতা ততোই বাড়ছে। এলাকাটিতে বর্তমানে   ভাঙ্গন আতঙ্ক  বিরাজ করছে। 

এরকম পরিস্থিতিতে এলাকার অসহায় বিভিন্ন বয়সি ছাত্র-ছাত্রীসহ বিভিন্ন পেশার ৩ শতাধিক মানুষ এই ভয়াবহ ভাঙ্গন বন্ধে সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করে বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে  নদীর তীরে ঘন্টা ব্যাপী দীর্ঘ মানববন্ধন করেন। মানববন্ধন শেষে মানুষজন নদী ভাঙ্গন থেকে  রক্ষায় আল্লাহর দরবারে দুহাত তুলে মোনাজাত করে কান্নায় ভেঙে পড়েন। 

এ সময় সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। মানববন্ধন থেকে বক্তারা  অবিলম্বে সুখের বাতি আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ গোটা এলাকা রক্ষায় সরকারের নিকট  দীর্ঘস্থায়ী প্রকল্প প্রণয়নের জোড় দাবি জানান।

কুড়িগ্রাম পাউবো বালুভর্তি জিও টেক্সটাইল ব্যাগ নিক্ষেপ করে এলাকাটি রক্ষায় জরুরী কার্যক্রম শুরু করলেও তা বাস্তবায়নে ধীরগতির অভিযোগ উঠেছে। সাহেবের আলগা  ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নুরুন্নবী বলেন, মাস দুয়েক আগে ৫ হাজার জিও টেক্সটাইল ব্যাগে বালু ভর্তি করে ডাম্পিং করায় এলাকাটির ভাঙ্গন বন্ধ ছিল। এলাকার মানুষজনের মাঝেও স্বস্তি ফিরে এসেছিল। আমরা অনুরোধ করেছিলাম এই মুহূর্তে আরো কিছু বস্তা নিক্ষেপ করলে এলাকাটি নিরাপদ থাকবে। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড আমাদের কথা শুনেননি। তিনি অবিলম্বে ভাঙ্গন বন্ধে জরুরী ভিত্তিতে প্রকল্প গ্রহণের দাবি জানান। 

এদিকে, ব্রহ্মপুত্রের পানি হ্রাস পাওয়ার সাথে সাথে স্রোতের তীব্রতায় আবারো ওই এলাকায় ভাঙ্গন ভয়াবহ রূপ নেয়।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সরজমিন ব্রহ্মপুত্র নদের বাম তীরে উলিপুর ও রৌমারী উপজেলার সীমানা লাগুয়া শৌলমারী ও সাহেবের আলগা  ইউনিয়নের সংযোগস্থলে গিয়ে ভাঙ্গনের ভয়াবহ দৃশ্য দেখা গেছে। দেড়শ থেকে ২’শ বছর আগে পূর্ব পুরুষদের আমলে গড়ে ওঠা প্রাচীন গ্রামগুলো নদী গর্ভে বিলীন হয়ে সহায় সম্বল হারিয়ে মানুষজন উদ্ভ্রান্তের মতো ছোটা-ছুটি করছে। 

এ পরিস্থিতিতে পাউবো একজন ঠিকাদারের মাধ্যমে আবারও ৫ হাজার বালু ভর্তি জিও টেক্সটাইল ব্যাগ ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় নিক্ষেপের জন্য বরাদ্দ দেন। কিন্তু বস্তা নিক্ষেপে ধীর গতির কারণে নদী ভাঙ্গন রোধে কোন কার্যকর ভূমিকা পরিলক্ষিত হয়নি। এ অবস্থায় সুখের বাতি আদর্শ গ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ হবিগন্জ,সোনাপুর,ঘুঘুমারি, সুখেরবাতি, নয়াগ্রাম চরম হুমকির মুখে রয়েছে। 

সুখের বাতি গ্রামের মরিয়ম বেগম (৬৫) এর টিনের দোচালা বাড়িটি এখন নদীর তীর থেকে মাত্র ১৫ ফিট দূরত্বে রয়েছে। তিনি বললেন, এবার বাড়ি ভাঙলে কোনঠে জামো বাবা কিছুই জানিনা । একই রকম হতাশা ব্যক্ত করলেন, সুখের বাতি গ্রামের আলেকজান (৩২) হাসনারা (৩৮)গোলেজা(৩২) রুনা (২২) নয়া পাড়া গ্রামের রাশেদা (৪০) ও সাজেদা (৫৫)।

যেকোনো মুহূর্তে তাদের বাড়িঘর নদী করবে বিলীন হয়ে যাবে বলে তাদের আতঙ্কে দিন কাটছে। এমন অবস্থা অনেকের। 

এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, এলাকাটি রক্ষায় বালুভর্তি জিও টেক্সটাইল ব্যাগ নিক্ষেপ এর কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়াও স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাব অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *