বিশেষ প্রতিবেদক
তুমি এখানে কেন? এখান থেকে চলে যাও। বেগমগঞ্জে তোমরা যা শুরু করেছ তাতে আমার আর মান ইজ্জত থাকবে না। তোমাদের কর্মকান্ডে বিরোধী দল সুযোগ নিবে। উত্তেজিত স্বরে চৌমুহনির পৌর মেয়র আখতার হোসেন ফয়সালকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রি ওবায়দুল কাদের। এ পর্যায়ে পৌর মেয়র ফয়সালকে উদ্দেশ্য করে আরও বলেন, এমপি (একরাম চৌধুরী) তোমাদের মিলিয়ে দিল আর রাতে তোমরা গিয়ে নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা কর। কিরণের সাথে তোমার কোন সমস্যা থাকলে আমাকে বলতে পারতে। কিন্তু তা না করে মারামারি শুরু করে দিয়েছ। এসব চলবে না এসব বন্ধ কর। যাও এখান থেকে চলে যাও। এসব বলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রি চৌমুহনি পৌর মেয়র ফয়সালকে শাসিয়ে দেন। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সচিবালয়ে মন্ত্রি তার দপ্তরে সাক্ষাৎ করতে আসা চৌমুহনি পৌর মেয়র স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা ফয়সালকে উদ্দেশ্য করে উল্লেখিত কথাগুলো বলেন।

সম্প্রতি স্থানীয় সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরণ সমর্থক আওয়ামীলীগ নেতা আনছারীর ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। এ হামলার প্রতিবাদে ১৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে উপজেলা আওয়ামীলীগের উদ্যোগে চৌমুহনি শহীদ মিনার চত্তরে এক প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী প্রতিবাদ সভায় যোগ দিতে বিভিন্ন স্থান থেকে নেতা কর্মীরা মিছিল নিয়ে শহীদ মিনার চত্তরে সমাবেত হতে থাকে। সভা শুরু হওয়ার আগে মুহূর্তে স্থানীয় সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরণের সমর্থকদের সাথে চৌমুহনি পৌরসভার মেয়র আক্তার হোসেন ফয়সালের সমর্থকদের কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
বাহিরে উত্তেজনার পরও যথাসময়ে প্রতিবাদ সভা শুরু হলে মেয়র ফয়সাল গ্রুপের একদল নেতাকর্মী মঞ্চ দখল করলে বেগমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা. জাফর উল্যাহ ও নোয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য মামুনুর রশিদ কিরণ তাদের নেমে যাওয়ার জন্য বলেন।
এসময় চৌমুহনি পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি ও চৌমুহনি পৌর মেয়র আক্তার হোসেন ফয়সাল নেমে গেলে তাৎক্ষণিক ভাবে শুরু হয় সংঘর্ষ। সংঘর্ষে বিপুল সংখ্যক বোমাবাজি ও ফাঁকা গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। স্টেজে ব্যাপক ভাংচুরের সময় সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরণ আহত হন। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে আওয়ামীলীগ নেতা বাবুল, মামুন, মাহবুব উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক রফিকুল ইসলাম মাছুম, জেলা ছাত্রলীগের সদস্য নাজমুল শিহাব, থান যুবলীগের সদস্য মামুন, অন্তর, সামছুল ইসলাম আহত হন। আহতদের অনেককে আশংকাজনক অবস্থায় স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রমতে, বিএনপি অধ্যুষিত এ নির্বাচনি এলাকায় এক সময় আওয়ামীলীগের নাম নেওয়াও পাপ ছিল। গত দুই যুগ ধরে মামুনুর রশিদ কিরণ অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে শত কোটি টাকা ব্যয় করে দলকে বেগমগঞ্জের তৃণমূলে এবং নিজকে পুরো নির্বাচনী এলাকায় একক গ্রহণীয় ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। এটাই কিরণের সমস্যা। যিনি সন্ত্রাসকে কখনোই প্রশ্রয় দেননি কিংবা সন্ত্রাসের মাধ্যমে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চাননি সে সন্ত্রাস নামক ব্যাধিটি আজ তার পিছু ছাড়ছে না। কখনো দলীয় বলয়ে কখনো রাতের অন্ধকারে অদৃশ্য সন্ত্রাস নামক দানব দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে মামুনুর রশিদ কিরণের পিছনে। বিংশ শতাব্দির শুরুতে যারা বিএনপি-জামাতের নেপথ্য পৃষ্ঠপোষক ছিল তাদের অনেকেই আজ আওয়ামীলীগের চালিকা শক্তি। বিভিন্ন সূত্রমতে, বিএনপি জামাত বেগমগঞ্জ আসনে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী হিসেবে কখনোই মামুনুর রশিদ কিরণকে আশা করেন না। মামুনুর রশিদ কিরণ যে দলীয় মার্কার বাহিরে জয়লাভের ক্ষমতা রাখেন তার প্রমাণ রেখেছেন ২০০৮ সালের নির্বাচনে। ঐ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে তিনি ৭৪ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। আর বিএনপির বিজয়ী প্রার্থী পেয়েছিলেন ৯৪ হাজার ভোট। এ নির্বাচনে ভোট গননার সময় বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ রয়েছে।
মামুনুর রশিদ কিরণ টেন্ডারবাজি, নিয়োগবানিজ্য, কমিশনবানিজ্য কিংবা টুইপাস কামাই কোনটাতেই নাই। সারা দেশের যে কয়েকজন সংসদ সদস্যকে নির্ভেজাল কিংবা অহিংস সংসদ সদস্য হিসেবে মনে করা হয় তাদের মধ্যে অন্যতম মামুনুর রশিদ কিরণ। অহিংস ও মানবতাবাদী পরোপকারী মামুনুর রশিদ কিরণের বিরুদ্ধে জামাত- বিএনপি চত্রছায়ায় যে প্রাসাদ ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে বিংশ শতাব্দির শুরুতে তা এখনও অব্যাহত আছে বলে মনে করে বেগমগঞ্জের অধিকাংশ মানুষ।
১৭ ই আগস্ট আওয়ামীলীগের প্রতিবাদ সভা যারা ভন্ডুল ও ভাংচুর করেছে তাদের হাতে দেশি-বিদেশি অনেক মারণাস্ত্র দেখা গেছে বলে স্থানীয় সূত্র জানায়। সূত্রমতে, এসব অস্ত্রকারীদের অনেকেই বিএনপি-জামাতের রাজনীতিতে জড়িত। বেগমগঞ্জ আওয়ামীলীগের এক নতো জানান, প্রতিবাদ হামলাকারীদের অন্যতম মাসুদ এর পিতা ছিলেন স্বাধীনতা বিরোধী আর কানা কশেম বিএনপি রাজনীতিতে জড়িত।
বেগমগঞ্জে সাম্প্রতিক সময়ে যা ঘটছে তাতে পরিষ্কার যে
বেগমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী রাজনীতিতে অশনি সংকেত চলছে। আগামী নির্বাচনে এ আসন থেকে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে আওয়ামীলীগের অশনি সংকেত দূর করতে হবে।

নোয়াখালীর ঐতিহ্যবাহী বেগমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী রাজনীতির অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার নীরব দ্বন্ধ-সংঘাত সম্প্রতি প্রকাশ্য রূপ লাভ করেছে। এই দ্বন্ধ সংঘাত শুরু হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন, উৎপাদন ও সমৃদ্ধির রাজনীতির একান্ত ধারক বাহক বর্তমানে নোয়াখালী ৩ বেগমগঞ্জ আসনের এমপি মামুনুর রশিদ কিরণকে ঘিরে। ব্যক্তিগতভাবে একজন সহজ-সরল উদার নৈতিক ও অহিংস গরীবের বন্ধুসুলভ মনোভাবের এমপি মামুনুর রশিদ কিরণ দীর্ঘদিন থেকে আওয়ামী পরিবারের সন্তান হিসেবে ধারাবাহিক রাজনীতিতে গড়ে উঠেছেন। এর সাথে যোগ হয়েছে তাঁর পারিবারিক দীর্ঘ দিনের ব্যবসায়িক সৌভাগ্যবান ইমেজ, সুনাম ও জনপ্রিয়তা। তাঁর স্বভাব সুলভ সাধাসিধে আচার-আচরণ যাকে নিয়ে এসেছে আওয়ামী রাজনীতির বাহিরে ও ব্যক্তি মামুনুর রশিদ কিরণ হিসেবে জনপ্রিয়তার শীর্ষে। আগামী সংসদ নির্বাচনে এখনো পর্যন্ত বেগমগঞ্জে আওয়ামী পরিবারে প্রার্থী হিসেবে কেবলমাত্র তিনিই তাঁর একমাত্র প্রতিদ্বন্ধী হিসেবে মনে করেন দলের অধিকাংশ তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। এমতাবস্থায় আগামী নির্বাচনে ১৪ দল তথা আওয়ামীলীগকে এ আসনে জিতিয়ে আনতে হলে এমপি মামুনুর রশিদ কিরণের বিকল্প নেই।
বেগমগঞ্জে এমপি কিরনের পারিবারিক ব্যবসায়িক বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কারণে তাঁর যে সাধারণ ভোট ব্যাংক রয়েছে তা অন্য কারো নেই। তাই তাঁকে ঘিরে বেগমগঞ্জে আওয়ামী রাজনীতির যে বটবৃক্ষের ছায়া ইতিমধ্যে গড়ে উঠেছে তা দলীয় অভ্যন্তরীণ বিরোধে কেবলমাত্র হিংসার বশবর্তী হয়ে কেটে ফেলার চেষ্টা হবে আওয়ামী রাজনীতির জন্য আত্মঘাতী স্বরূপ। এই মুহুর্তে তাঁর পাশে তাঁর বিশ্বস্ত ও অভিজ্ঞতালব্ধ যে সকল রাজনীতিক নেতা রয়েছেন হঠাৎ করে তাঁদের উপর হামলা পরিকল্পিতভাবে এমপি কিরণকে বিশ্বস্ত বন্ধু ও মেধাহীন করার অপচেষ্টাই মনে হয় সাধারণ জনগণের নিকট, যাহা অহিংস এমপি কিরণের বিরুদ্ধে সহিং হামলা বলেই মনে করে আওয়ামীলীগের তৃণমূল নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণ।
বেগমগঞ্জ বৃহত্তর নোয়াখালীর মধ্যস্থান হিসাবে চিহ্নিত। এখানকার রাজনৈতিক অবস্থা প্রভাহিত হয় আশপাশের জেলা চাঁদপুর, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের কিছু অংশে। এক্ষেত্রে আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদকের জেলায় রাজনীতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা অতি জরুরি। একেতো বিএনপির ঘাটি হিসেবে নোয়াখালীকে নিয়ে অপবাদ রয়েছে। তার উপরে অভ্যন্তরীন কোন্দল সংঘাতে বিরুপ প্রভাব পড়তে পারে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফলের উপরে। ফলাফল যদি প্রতিকুলে যায় তার দায় আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এড়াতে পারবেন না। জেলার রাজনৈতিক বৌদ্ধারা মনে করেন সময় থাকতে শাসিয়ে নয় প্রয়োজনে কঠোর হতে হবে আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদককে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *