এস.এম.রকি,খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ
কৃষি প্রধান জেলা দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার জমি আলু চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় লাভের আশায় প্রতি বছর এই এলাকার আলু চাষ করেন কৃষকরা। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীসহ অন্য জেলাতেও সরবরাহ করা হয় এখানকার আলু। কিন্তু বর্তমান বাজারে অন্য সবজির দাম বেশি হলেও আলুর দাম অনেক কম। তবে হাইব্রিড জাতের চেয়ে দেশী জাতের আলুর দামে তুলনামূলক বেশী রয়েছে। এই অবস্থায় ভালো ফলনেও এই উপজেলার আলু চাষীদের কপালে চিন্তার ভাজ পড়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৩হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছে। আলুর ফলনও অনেক ভাল হয়েছে। যদিও এবার আলু চাষের জন্য লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪হাজার ৩৩৫ হেক্টর জমি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আলুর মাঠে বর্তমানে গ্র্যানোলা সাদা ও এস্টারিক্স জাতের লাল আলু পাওয়া যাচ্ছে। স্থানীয় বাজারে লাল আলুর চাহিদা বেশি থাকায় দামও একটু বেশি। সাদা আলুর বাজার রাজধানীসহ অন্যান্য জেলায়। ফলে অন্যান্য জেলার চাহিদার ওপর নির্ভর করে দাম পায় চাষিরা।
গত বছর চাষীরা এই সময় প্রতি কেজি আলু মাঠেই বিক্রি করেছিলেন ১৫-১৬ টাকা কেজি দরে। আর এবার প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫-৬ টাকা দরে। যার উৎপাদন খরচই হচ্ছে কেজি প্রতি ১০-১২ টাকা দরে। কিন্তু এবছর উৎপাদন খরচের অর্ধেক দামে আলু বিক্রির ফলে চরম লোকসানের মুখে হতাশায় পড়েছেন এই এলাকার আলু চাষীরা।
সিট আলোকডিহি গ্রামের চাষী সোহেল রানা বলেন, এক বিঘা জমিতে আলু উৎপাদন করতে সাধারণত ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকা খরচ হয়। গড়ে এক বিঘা জমিতে ৭৫ মণ আলু উৎপাদন হয়। এই হিসাবে প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ ১০-১২ টাকা। আর এবার উৎপাদন খরচও বৃদ্ধি পেয়েছে।
বালাপাড়া গ্রামের আলু চাষী লিটন ইসলাম বলেন, আমি এবার ২ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। গতবছর আলুর ভালো দাম পেয়ে লাভবান হয়েছিলাম কিন্তু এবারে আলু ৬ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে, তবুও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। এতে আলু চাষে ক্ষতির মুখে পড়েছি সাথে আগ্রহও কমে যাচ্ছে।
পাকেরহাট এলাকার চাষী দীপক রায় বলেন, গত বছর আলুর দাম বেশি ছিল এবং কম ফলনেও ভালো লাভ হয়। এবার বেশি ফলনেও লোকসান হচ্ছে। এরপরও নগদ টাকার ক্রেতা নেই। এমতাবস্থায় সরকার যদি আলু চাষীদের দিকে না তাকায় তাহলে আলু চাষে আমরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলব।
তবে পাইকারী দামে হাইব্রিড জাতের আলুর কেজি ৫-৬ টাকা কিন্তু ব্যবসায়ীরা এই আলু রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করছেন ৮-১০ টাকা এবং খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৫-১৬ টাকা কেজি। ফলে কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়লেও লাভবান ব্যবসায়ী ও পাইকার।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বাসুদেব রায় বলেন,
এ মৌসুমে আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে আর সবাই একই সাথে আলু তোলায় দাম কম। কৃষি বিভাগ মনে করছে, সময়ের সাথে দাম কিছুটা বাড়বে। এতে চাষিদের লোকসান কমে যাবে । চাষিদের যে কোনো পরামর্শের জন্য কৃষি বিভাগ সর্বদা মাঠ পর্যায়ে রয়েছে।