কুড়িগ্রামের প্রত্যন্ত এক গ্রামের ছেলে নাজিম উদ্দিন হৃদম। ছোটবেলা থেকেই কম্পিউটারে কাজ করার প্রতি বেশ মনোযোগ ছিল তার। জানা গেছে ২০১২ সালে এসএসসি পরিক্ষার পর প্রায় ৫ কিলো পায়ে হেটে গ্রামের একটি বাজারে কম্পিউটার শিখতেন তিনি। তারপর ভর্তি হন রংপুরের এক বেসরকারি পলিটেকনিকে। পড়াশোনার পাশাপাশি সব সময় পরে থাকতেন কম্পিউটার নিয়ে। ইউটিউব দেখে দেখে অনলাইনে আয় করার আগ্রহ তৈরি হয় হৃদমের, তারপর আরো বেশি জানার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ট্রেইনিং নেন তিনি। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শেষে নিজের স্কীলকে পাকাপুক্ত করতে একটি কোম্পানিতে চাকরি নেন গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে। এভাবেই কয়েকটি বাংলাদেশি কোম্পানির সাথে কাজ করে নিজেকে আরো দক্ষ করে তোলেন। কিন্তু সমাজের পরিস্থিতি ও চাকরির দুরবস্থা দেখে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। প্রথম দিকে তেমন কোন সারা না পেলেও হাল ছাড়েননি এই মেধাবী তরুন। ১ থেকে দুই বছর ধৈর্য নিয়ে লেগে থাকেন পাশাপাশি নিজের দক্ষতাকে বাড়িয়ে নিতে সব সময় প্যাক্টিস করতেন। এখন কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠান ও মার্কেটপ্লেসগুলোতে গ্রাফিক্স ডিজাইনার ও ডিজিটাল মার্কেটার হিসেবে কাজ করে মাসে প্রায় লাখ টাকা আয় করছেন এই তরুন।
নিজের মার্কেটিং দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে নিজেই গড়ে তুলেছেন একটি ডিজিটাল আইটি ফার্ম ও একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান । শুরু করেছেন একটি অনলাইন ভিত্তিক আইটি ট্রেইনিং সেন্টার যার নাম দিয়েছেন লার্ন উইথ হৃদম।
যেখানে নতুন সুবিধা বঞ্চিত নারীদের ফ্রীল্যান্সিং ও ই-কমার্স বিজনেস নিয়ে ট্রেইনিং দেয়া হয়।
নাজিম উদ্দিন হৃদমের জন্ম কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গামারী উপজেলার আন্ধারীঝাড় ইউনিয়নের হেলোডাঙ্গা গ্রামে। তার বাবা মোঃ হাফিজুর রহমান একজন রাজমিস্ত্রির সাব-কন্ট্রাক্ট ও মা মোছাঃ নাজমা বেগম গৃহিণী।
সূত্র মতে জানা যায়, হৃদম ২০২০ সাল থেকে একটি কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারে ক্লাস নিতেন। যেখানে থেকে তিনি নাম মাত্র বেতন পেতেন। হৃদম কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারে কাজ করার পাশাপাশি নিজের কাজ গুলো নিয়ে প্রচুর প্যাক্টিস করতেন। চাকরির দুর্দশা দেখে অনলাইনে ফ্রিল্যান্সারের কাজ শুরু করেন।
নাজিম উদ্দিন হৃদম এরই মধ্যে ৫০টি দেশের ক্লায়েন্টের সঙ্গে কাজ করছেন। তাছাড়া লন্ডনের এক কোম্পানিতে পার্ট টাইম চাকরি করেন। এসব কাজের বিনিময়ে ঘরে বসেই উপার্জন করছেন বৈদেশিক মুদ্রা। হৃদমের মাসে প্রায় এক হাজার থেকে দের হাজার ডলার আয় করছেন। তার অধীনে বাংলাদেশি, পাকিস্থনী ও ইন্ডিয়ান কয়েকজন যুবক ফ্রিল্যান্সিং করছেন।
নাজিম উদ্দিন হৃদম বলেন, ইউটিউবে ভিডিও দেখে ও কিছু বড় ভাইয়ের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে আর যেখানেই সুযোগ পেয়েছি অনলাইনে বা অফলাইনে কোর্স করে এসব কাজ শিখেছি। তাছাড়াই যারা সঠিক প্রশিক্ষণের অভাবে এসব কাজ শুরু করতে পারছেন না, তারা ইউটিউব ও গুগলের সাহায্য নিয়ে নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারেন। তবে অবশ্যই তাকে অধ্যবসায়ী ও পরিশ্রমী হতে হবে। তাতে নিজেরা স্বাবলম্বী হতে পারবে এবং দেশের রেমিট্যান্স বাড়বে।
নাজিম উদ্দিন হৃদমের কাছে তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে তিনি জানান, প্রথমেই একজন ভালো মানুষ হতে চাই, পরিবারেরএকজন আদর্শ ছেলে হতে চাই, দেশের জন্য দেশের মানুষের জন্য কিছু একটা করতে চাই। যার মাধ্যমে যুগ যুগ ধরে মানুষের হৃদয়ে বেচে থাকতে পারি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *