ভুরুঙ্গামারী(কুড়িগ্রাম)প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীতে আদালতের নির্দেশে ২৫ বছর পর জমির দখল বুঝিয়ে পেয়েও মিথ্যা মামলায় হয়রানী শিকার হচ্ছে আকবর আলীগং’র পরিবার পরিজনরা।
জানাগেছে কুড়িগ্রামের জয়মনিরহাট ইউনিয়নের দক্ষিণ শিংঝাড় গ্রামের মৃত নায়েব উল্লাহ ওরফে সোনাউল্লাহ ২৪ সেপ্টেম্বর ১৯২৮ সালে স্থানীয় জোতদারদের নিকট থেকে ২৬ একরের অধিক জমি কবুলিয়ত মুলে তার তিন পুত্র বাবর আলী,জশমত আলী ও আব্দুল করিম ওরফে কিনা শেখের নামে এবং তার স্ত্রী চান্দুজানের নামে ৪৮ শতক জমি ক্রয় করে। জশমত আলী নিঃসন্তান অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে জশমতের অংশ সহ চান্দুজান বেগম মোট ৪ একর জমি প্রাপ্ত হয়ে ঐ জমি ২২.১.১৯৫২ ইং তার পুত্র আব্দুল করিম ওরফে কিনা শেখের নিকট ৭০০ টাকা কবলামুলে তার নাতীন জয়নাল আবেদীনের সনাক্ত স্বাক্ষীতে রেজিস্ট্রি প্রদান করে । এদিকে চান্দুজান তার পুত্র আব্দুল করিম ওরফে কিনা শেখের নিকট বিক্রি করে দেয়ায় বাবর আলীর পুত্র জয়নাল আবেদীন ও ইমান আলী ২৯.৬.১৯৫৩ ইং তৎকালীন নাগেশ্বরীতে রেজিস্ট্রি অফিস থাকা সত্বেও গোপনে কুড়িগ্রাম রেজিস্ট্রি অফিসের ঠিকানা ব্যবহার করে আব্দুল করিম ওরফে কিনা শেখকে দাতা দেখিয়ে ৬একর ২ শতক জমির ক্রয় মুল্য মাত্র ৫০০ টাকা দেখিয়ে একটি জাল দলিল সৃষ্টি করে। এদিকে কিনা শেখ জমি বেশী ভোগদখল করছে এই মর্মে কুড়িগ্রাম ২য় যুগ্ন জেলা জজ আদালতে জয়নাল আবেদীন বাদী হয়ে একটি বাটোয়ারা মামলা করে যার ১৫/৯৪ । আব্দুল করিম ওরফে কিনা শেখ বিষয়টি জানতে পেয়ে ভুরুঙ্গামারী সহকারী জজ আদালতে তার ভাতিজা কর্তৃক জাল দলিল সৃষ্টি করায় দলিল বাতিলের মামলা করে যার নং ৩২/২০০১। মামলায় ২০০৭ সালে ঐ দলিল ভুয়া ও বানোয়াট মর্মে আদালত তা বাতিল করে দেয়।এদিকে ১৫/৯৪ নং বাটোয়ারা মামলায় আদালত কর্তৃক বার বার বাদীপক্ষ জয়নাল আবেদীনকে ডাকার পরেও না পেয়ে তা ৫.১১. ২০০০ ইং খারিজ করে দেয়। উক্ত বাটোয়ারা মামলা খারিজের পর জয়নাল আবেদীনের ছোটভাই মোঃ ইমান আলী আবারও ছানি মামলা করে পর পর ২৩ বার সময়ের আবেদন করে। এদিকে আদালতের নিয়মে সময় অতিক্রান্ত করার পর ঐ মামলাটিও ১১০০ টাকা খরচে আবারও আদালত খারিজ করে দিলে বাদীপক্ষের জয়নাল আবেদীনের বড় পুত্র মোঃ মাফিজুর রহমান আবারও ছানি মামলা করে এবং আবারও সময়ের আবেদন করে। বার বার সময়ের আবেদন করায় আদালতে নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত হলে আবারও মামলাটি ২০.৫.২০১০ ইং খারিজ করে দেয়।এদিকে আব্দুল করিম ওরফে কিনা শেখের পুত্র মোঃ আকবর আলী ২৬.১০.২০১০ ইং যুগ্ন জেলা জজ আদালতে আবারও বাটোয়ারা মামলা দায়ের করে যার নং ১৯/২০১০(অন্য)। মামলা বিচারাধীন অবস্থায় আদালত দু পক্ষের কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে দুতরফা সুত্রে মামলাটিতে ১৮.৩. ২০১৯ ইং তারিখে আব্দুল করিম ওরফে কিনা শেখের পক্ষে ১৪একর ২২ শতাংশ এবং নায়েব উল্লাহ ওরফে সোনাউল্লাহর কন্যা ফুলজান ওরফে শুমারী বেগম তার মাতা চান্দুজান ও মৃত ভাই জশমত আলীর ওয়ারিশ হিসাবে ১ একর জমি হানিফ আলী প্রাপ্ত হয় মর্মে ১ম ডিগ্রী প্রদান করে। উল্লেখ্য হানিফ আলীর মৃত্যু হওয়ার কারনে জমি তার পুত্র আব্দুল বারেক এবং কন্যা মোছাঃ হনুফা বেগমের পক্ষে আদালত ১ একর জমি প্রদানের রায় প্রদান করে। এদিকে দীর্ঘদিন থেকে আব্দুল করিম ওরফে কিনা শেখ ও মৃত হানিফ আলীর জমি ইমান আলী গং জোরপুর্বক ভোগ দখল করায় আদালত ইমান আলীগংকে জমির দখল ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়া সত্বেও তারা দখল ছেড়ে না দেয়ায় ১৮.৩.২০১৯ ইং প্রথম ডিগ্রী প্রদান করলে আকবর আলী গং জমির দখল বুঝিয়ে পাওয়ার জন্য কমিশনার প্রাপ্তির আবেদন করেন। কমিশনার সরেজমিন তদন্ত করে আদালতে ২৬.৯.২০১৯ ইং চুড়ান্ত ডিগ্রী প্রদান করে। পরে গত ৩০.১১.২০১৯ ইং শনিবার কুড়িগ্রাম জেলা জজ কোর্টের সিভিল কোর্ট কমিশনার মোঃ এনামুল হক এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ,পুলিশ,গ্রাম পুলিশসহ প্রশাসনের উপস্থিতিতে আকবর আলীর পিতার বেদখলকৃত ১৪একর ২২ শতক এবং মৃত হানিফ আলীর ১ একর জমির দখল বুঝিয়ে দেয়। এ বিষয়ে জজ কোর্টের কমিনার এনামুল হক জানান, বাদী আকবর আলীগং এবং হানিফ আলীর পুত্র আব্দুল বারেকগংএর পৈত্রিক জমি দীর্ঘদিন থেকে বেদখল থাকায় আদালতের রায় কার্যকর করতে তাদের জমির দখল বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এলাকাবাসী জানান,এলাকার কিছু সংখ্যক টাউট বাটপার শ্রেণীর লোকের যোগসাজসে ইমান আলীগং জমির ভুয়া দলিল সৃষ্টি করে জমি জোর পুর্বক ভোগ করেছে। বেদখলকৃত জমি প্রকৃত ওয়ারিশদের বুঝিয়ে দেয়ায় তারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও বিচার বিভাগের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেন।
এদিকে মামলার বাদী আকবর আলী ও আব্দুল বারেক জানান,জমি বেদখলকারী ইমান আলী গং জমি না পেয়ে আকবর আলী ও তার পরিবার পরিজন এবং আব্দুল বারেক ও তার পরিবারের লোকজনকে খুন,জখম হত্যা ও মিথ্যা মামলায় হয়রানীসহ বিভিন্ন হুমকি প্রদর্শন করায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে এবং রাতের বেলা বসতবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র রাত্রি যাপন করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *