ভূরুঙ্গামারী(কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে গো- খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে গরুর প্রধান খাদ্য খড়ের দাম। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছে খামারি ও গরু লালন-পালনকারীরা। সব ধরণের গোখাদ্যের মুল্যবৃদ্ধিতে হতাশ গরু লালন পালনকারী গৃহস্থরা।

গত এক মাস ধরে প্রচুর বৃষ্টি পাত ও চতুর্থ দফা বন্যায় উপজেলার অধিকাংশ এলাকার নিন্মান্চল প্লাবিত হয়। দীর্ঘ দিন এসব জমি পানির নীচে ডুবে থাকার ফলে ঘাস ও জমির ফসল পঁচে মরে যায়। তাই কাঁচা ঘাস মিলছে না। ফলে শুকনো খাদ্যের উপর নির্ভর হয়েছে পড়েছে গবাদি পশু গুলো। কাঁচা ঘাসের তীব্র সংকটের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে খড়ের দাম। গরুর জন্য সবচেয়ে বেশী প্রয়োজনীয় খাবার হলো ধানের খড়। খড়ের সাথে ধানের গুড়া ও ভুসি মিশিয়ে খাওয়ালে গরুর স্বাস্থ্য ও দুধ ভাল পাওয়া যায়।খড়সহ অন্যান্য গো খাদ্যের দাম এভাবে বাড়তে থাকলে খামার বন্ধ করে দেয়া ছাড়া কোন উপায় থাকবেনা বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

উপজেলার বিভিন্ন হাটে গিয়ে দেখা গেছে গত বছর এসময় ধানের আটি (খড়) এর দাম ছিলো ৩’শ টাকা শ’ । এখন সেটা বিক্রয় হচ্ছে ১ হাজার ২ শ থেকে থেকে ১ হাজার ৫ শত টাকায়। অন্য দিকে ভুসি, খৈল, চালের খুদ, গুড়া, খোসা ও ঔষধের দামও দ্বিগুন বেড়েছে। খড়ের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকেই খড় না কিনেই বাড়ী ফিরছেন এবং তারা জমিতে লাগানো সাধের রোপা আমন ধানের ধোড় ধানগুলো কেটে গরুকে খাওয়াচ্ছেন। গোখাদ্য দাম বেড়ে যাওয়ায় গরু হাটে বিক্রি করে দিচ্ছেন অনেক গরু লালন-পালনকারীরা ।

হাটে খড় কিনতে আসা গছিডাঙ্গা গ্রামের শহিদুল ইসলাম জানান ধানের খড়ের এতো দাম যে গরু পালন খুব কষ্ট হচ্ছে। তিনি জানান দাম যাই হোক তার বাড়ীতে থাকা ৫টি গরুর খাবার তাকে কিনতেই হবে। তা না হলে গরু গুলো বাচাঁনো যাবে না।

অন্য খামারী আন্ধারীঝাড় ইউনিয়নের খামার আন্ধারীঝাড় গ্রামের বাসিন্দা আনিসুর রহমান জানান গরু মোটা তাজা করণ একটি ফার্ম রয়েছে তার। এবারে ধানের খড়ের দাম এতো বেশী,দাম বেশী হলেও খামার রক্ষা করতে বেশী দামে খড় কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।

উপজেলার পাটেশ্বরী বাজারের খড় ব্যবসায়ী আমজাদ, কালু মিয়া ও ব্রীজ পাড়ের খড় ব্যবসায়ী জালাল উদ্দিন জানান , ভূরুঙ্গামারীর কোথাও কোন খড় নাই। তারা দিনাজপুর থেকে খড়ে আটি কিনে তা ট্রাকে করে এখানে এনেছেন। যাবতীয় খরচ হিসেব করে তারা একশতটি খড়ের আটি ১৫ শ থেকে ২০ শ টাকায় বিক্রি করছেন।

ভূরুঙ্গামারী বাজারের খড় ব্যবসায়ী শাহজাহান জানান, এক মাত্র তার কাছেই স্থানীয় খড় রয়েছে। খড়ের আটি গুলো বেশ বড় । প্রতি একশত আটি ১ হাজার ৫ শত টাকায় বিক্রি করছেন।

উপজেলা প্রানী সম্পদ অফিসের সর্বশেষ তথ্য মতে, গোটা উপজেলায় কৃষক ও খামারে গরু রয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার টি, ছাগল ৪১ হাজার ৫৯০টি, মহিষ ৬৭টি, শুকর ১৩ টি ও ঘোড়া রয়েছে ২৬১টি। এই বিপুল পরিমানের গবাদি পশুর জন্য গো খাদ্যের প্রচুর ঘাটতি রয়েছে।

উপজেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল মোমিন কয়েকদফা বন্যা ও টানা বৃষ্টি পাতের কারণে গোটা উপজেলায় গো খাদ্যের তীব্র সংকটের কথা স্বীকার করে জানান, এই সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য উপজেলার ৪৫ জন কৃষক ও গো খামারীর মাঝে ১১১২৫ কেজি গো খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে এবং ৪ একর জমিতে নেপিয়ার পাকচং কাটিং ঘাস লাগানোর জন্য প্রদান করা হয়েছে। যা দিয়ে আগামিতে গোখাদ্যের সংকট অনেকটাই মোকাবেলা করা যাবে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *