বিশেষ প্রতিনিধিঃ ঃ
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের সীমাহীন দুর্নীতি ও জালিয়াতির কারনে প্রতিদিন শত শত গ্রাহক প্রতারিত ও হয়রানীর স্বীকার হচ্ছে। মিটার রিডিং ছাড়াই বিল সিট প্রস্তুত করা, ইউনিট বকেয়া রেখে পরের মাসে বকেয়া ইউনিটগুলো যোগ করে গ্রাহককে পরর্বতী স্ল্যাপের বিল পরিশোধে বাধ্য করা, মিটার ক্লোজ করে দেওয়ার পরেও বিলুপ্ত গ্রাহকের নামে নিয়মিত বিল আসা, নিয়মিত বিদ্যুত বিল পরিশোধ করার পরেও গ্রাহকের কাছ থেকে বকেয়া বিল আদায় করা, একই মিটারে মাসে একাধিকবার বিল আদায় করা, একজনের ম্াসিক বিল সিট অন্য জনকে প্রদান করা, বিদ্যুৎ বিল গ্রহনে গ্রাহকদের হয়রানী করা সহ অসংখ্য অভিযোগ উঠেছে পল্লী বিদ্যুৎ কতৃপক্ষের বিরুদ্ধে। সরেজমিন অনুসন্ধানকালে ভূরুঙ্গামারী পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে অভিযোগ নিয়ে আসা ভূক্তভোগী গ্রাহকদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ লক্ষ্য করা গেছে। এরকম একজন ভূক্তভোগী ছোটখাটামারী গ্রামের জহুরুল ইসলামের পূত্র মোস্তাফিজুর রহমান জানান যে, তার চাচা ইসমাইল হোসেনের নামীয় মিটারের বকেয়া বিল পরিশোধ করা সত্বেও পূর্বের পরিশোধিত বকেয়া পরবর্তী মাসের বিলের সাথে যোগ করে পুনরায় আদায় করা হয়েছে। খামার আন্ধারীঝাড় গ্রামের আব্দুল হাকিম (মিটার নং-৬৫২৪২) জানান, পুর্বের কোন বকেয়া না থাকা সত্বেও গত মাসের বিলসিটে বকেয়া উল্লেখ করে তার নামে বিলসিট তৈরী করা হয়েছে। বিষয়টি তিনি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোন সদুত্তর পাননি। পূর্ব ভোটহাটের ছলিমউদ্দিন (মিটার নং-০০০২০৪৫৯) বলেন, বিলে অবিশ্বাস্য অসঙ্গতি দেখতে পেয়ে তিনি বিদ্যুত অফিসে অভিযোগ করলে দায়িত্বরত কর্মকর্তা আগস্ট-১৮ মাসের ৭০৪ টাকার বিলটি ছিঁড়ে ফেলে ১৭৮ টাকার নতুন বিলসিট হাতে ধরিয়ে দেন। তিনি আরও বলেন বিদ্যুৎ অফিসের কারচুপি ধরতে না পেরে গ্রামের অতি সহজ-সরল গ্রাহকরা অতিরিক্ত বিল পরিশোধ করেই যাচ্ছে।
এছাড়াও আন্ধারীঝাড় ইউনিয়নের বীরবারুইটারী গ্রামের আবুবক্করের ছেলে আব্দুল বারেক, খামার আন্ধারীঝাড় গ্রামের মোস্তাফিজার রহমান (মিটার নং-০০৩৫২৪৮),লিটন শেখ (মিটার নং-০০২৫০০১) সহ উপস্থিত গ্রাহকদের বিলসিটগুলো ধারাবাহিকভাবে চেক করে দেখা যায় যে, ঘরে বসে মনগড়া অপেক্ষাকৃত কম ইউনিট বিলসিটে উঠিয়ে পরবর্তী মাসে বকেয়া ইউনিটগুলো যোগ করে স্ল্যাপ বাড়িয়ে বিল পরিশোধ করতে বাধ্য করা হচ্ছে তাদেরকে। একই রকম অভিযোগ করেন পাথরডুবি ইউনিয়নের ফুলকুমার গ্রামের নুরল ইসলাম (মিটার নং ১৬৫৮০৩৩১)। তিনি বলেন, পল্লী বিদ্যুত অফিসের স্বেচ্ছাচারীতার কারণে তাকে এখন চতুর্থ স্ল্যাপের বিল গুনতে হচ্ছে প্রতি মাসেই।
এছাড়া তিলাই ইউনিয়নের পশ্চিম ছাট গোপালপুর গ্রামের গোলজার হোসেন জানান, তার নামীয় (মিটার নং-১৪৯১৭৯৬৬) মিটার থেকে গত এপ্রিল ও মে মাসের বিল দু’বার করে আদায় করা হয়েছে। খামার আন্ধারীঝাড় গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমানের পূত্র মাঈদুল ইসলামের অভিযোগ, তার নামীয় মিটারটি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বিলুপ্ত করে নেয়া সত্বেও প্রতিমাসে তার বাসায় উক্ত মিটারের বিলসিট পাঠানো হচ্ছে।
ভূরুঙ্গামারী পল্লী বিদ্যুৎ অফিসকে ঘিরে গড়ে উঠেছে একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট চক্র। বিদ্যুৎ লাইন সম্প্রসারণ, মিটার লাগানো ও ওয়ারিং বাবদ স্থানীয় গ্রাহককে জিম্মি করে দফায় দফায় টাকা উত্তোলন করার অভিযোগ রয়েছে এই চক্রটির বিরুদ্ধে।স্থানীয় বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষও এ চক্রটির কাছে অসহায় বলে জানাগেছে। উপরোক্ত অভিযোগ গুলো সম্পর্কে ভূরুঙ্গামারী পল্লিবিদ্যুৎ অফিসের এজিএম একেএম শফিউল আলম জানান, ব্যাংক থেকে ষ্টেটমেন্ট বিলম্বে আসায় এ রকম সমস্যা হতে পারে। অফিসে জনবল সংকটের কারনে বিভিন্ন সমস্যার তৈরী হচ্ছে বলে তিনি স্বীকার করেন। তবে অভিযোগ পেলেই তারা সমস্যার সমাধান করছেন বলে দাবী করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়ুন