বিন্দাস ভার্গব:
রেডিও থেকে আজও যখন ভেসে আসে এই গান, হু হু করে মন ভেসে যায় পাঁচ-ছয়ের দশকে। যে শিল্পীর গান এটি, তিনি সুমন কল্যাণপুর । তাঁর কণ্ঠের সঙ্গে লতা মঙ্গেশকরের ভীষণ মিল ছিল। আর এটাই তাঁর কেরিয়ারের কাল হয়ে দাঁড়ায়। তাই তিনি এযুগে প্রায় অচেনা। অথচ তাঁর গান আজও এফএমে বাজে। তাঁর চিরদিনের পরিচয় ‘লতার মতো’। যে উপাধি তাঁর বালিশে মুখ গুঁজে বুক ভরা কান্না হয়ে গেছে। ‘আমার স্বপ্ন দেখার দুটি নয়ন হারিয়ে গেল কোথায় কখন / কেউ তা জানে না গো কেউ তা জানে না।’
আধুনিক বাংলা গান, বাংলা ছায়াছবির গান গাইলেও সুমন কল্যাণপুর আদতে বাঙালি নন। কিন্তু তিনি তাঁর কয়েকটি গান দিয়েই বাঙালিদের বড্ড আপন। সুমন কল্যাণপুরের গান বাজলে শ্রোতারা আলাদা করে তাঁর কণ্ঠ চিনতে পারতেন না, ভাবতেন লতাই গাইছেন। সুমন ও লতার কণ্ঠ নিয়ে বিভ্রান্তি আরও বাড়ে, কারণ রেডিওয় সুমনের গান বাজানোর পরে বহু সময় তাঁর নামটাই ঘোষণা করা হত না। শুরুর দিকে রেকর্ডেও তাঁর নাম থাকত না। এ কারণেই তাঁকে লতার ছদ্মপরিচয়ে চিরকাল বাঁচতে হয়েছে।
অথচ সুমন আদতে লতাকণ্ঠী ছিলেন না। লতাকে অনুকরণও করেননি। শুধু লতার সময়ে লতার মতোই কণ্ঠ হওয়ার জন্য সুমনকে গানের জগতের আলো থেকে সরে যেতে হয়। অনেকেই বলেন, তাঁকে আদতে সরিয়ে দেওয়া হয়। কারণ পাঁচ-ছয়ের সেই দশক শাসন করতেন লতা মঙ্গেশকর এবং আশা ভোঁসলে। তাঁদের দাপটে সুমন কল্যাণপুর রয়ে যেতেন সংগীত পরিচালকদের থার্ড চয়েস হিসেবে। যখন কোনও গান রেকর্ডিংয়ে লতা সময় দিতে পারতেন না, তখনই ডাক পড়ত সুমনের। আবার যেসব প্রযোজক তাঁদের ছবিতে লতার পারিশ্রমিক দিতে সক্ষম হতেন না, তাঁরাও ডেকে নিতেন সুমন কল্যাণপুরকে। অনেকে এ-ও বলেন, লতার অঙ্গুলি হেলনেই বহু সংগীত পরিচালক সুমনকে অনেক গান থেকে বাদ দেন।
তবে কিছু সময়ের জন্য সুমন কল্যাণপুর ও মহম্মদ রফির ডুয়েট পরপর হিট করেছিল। তিনি উঠে এসেছিলেন লতা-আশার স্টেটাসে। তবে তার পিছনেও ছিল বিশেষ কারণ। ওই সময় রয়্যালটি ইস্যু নিয়ে বিবাদে লতা আর রফির সঙ্গে গান গাইছিলেন না। সেই জন্যই রফির সঙ্গে ডুয়েটে লতার পরিবর্ত হিসেবে সুমন গাইতেন। ‘আজকাল তেরে মেরে পেয়ারকে চর্চে’, ‘না না করকে পেয়ার’-এর মতো অজস্র এভারগ্রিন গান গেয়েছেন তাঁরা। পাশাপাশি সুমন ডুয়েট গেয়েছেন মান্না দে, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গেও।
বাংলা গানে সুমনের উচ্চারণ লতার থেকে পরিস্কার ছিল