ওয়ালিউর রহমান রাজু, লালমনিরহাট থেকে ॥
লালমনিরহাট মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডার মোঃ মেজবাহ্ উদ্দীনকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আত্ম-স্বীকৃত খুনির দোসর হিসেবে আখ্যায়িত করে তাকে অবিলম্বে গ্রেফতার ও মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের নামে ঘুষ-বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে তা বাতিলের দাবী জানানো হয়েছে। গতকাল দুপুরে জেলা শহরের বার্ণহার্ড কিন্ডারগার্টেন নামের একটি সংস্থার হলরুমে সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে এই সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সাংবাদিক সম্মেলনের প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক মুক্তিযুদ্ধের স্বর্ণপদক প্রাপ্ত অন্যতম সংগঠক, মুক্তিযোদ্ধা, যুগ্ম-সচিব (অবঃ) কৃষ্ণ গোপাল রায় এর সভাপতিত্বে মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আবু তালেব (যুগ্ম-আহবায়ক), মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মোন্নাফ (যুগ্ম-আহবায়ক), মোঃ মোজাম্মেল হক (সদস্য সচিব) উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া প্রায় ১০০ জন সাধারণ মুক্তিযোদ্ধা ও জেলার সকল প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সকল সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিক সম্মেলনে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাধারণ সদস্য ও বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা মোঃ নুরুজ্জামান লিখিত অভিযোগ পাঠ করেন। অভিযোগে বলা হয়, লালমনিরহাট জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের কমান্ডার মোঃ মেজবাহ্ উদ্দীন, তার পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনেরা ১৯৭৫ এর ১৫ই আগষ্ট বঙ্গবন্ধুর আত্ম-স্বীকৃত খুনি কর্ণেল রশিদ, কর্ণেল ফারুক গং এর সমর্থনকারী। ১৯৭৫ এর এই খুনি গং লালমনিরহাট জেলা শহরের মেজবাহ্ উদ্দীনের বাসাবাড়িটি রাজনৈতিক প্রচার-প্রচারণা অফিস হিসেবে ব্যবহার করেছিল। খুনিদের লেখাবই, লিফলেট, পোস্টার ইত্যাদি তার বাসা থেকেই বিলি বণ্টন করা হয়। ঐ সময় খুনিদেরকে লালমনিরহাটে এনে জনসভাও করা হয়েছিল। সে সময় চরম প্রতিকুল অবস্থার মধ্যে স্বাধীনতার পক্ষের মানুষ জন এ মঞ্চটি পুড়িয়ে দেয়। লিখিত অভিযোগে আরও বলা হয়, এই মুক্তিযোদ্ধা মেজবাহ্ উদ্দীন খুনিদের অর্থে সে সময় সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়। মোঃ লিটন নামে তার এক আপন ছোট ভাই খুনি গংদের সাথে এখনও লিবিয়ায় অবস্থান করছে বলে বলা হয়েছে। এছাড়াও, মোঃ মেজবাহ্ উদ্দীন ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে যুদ্ধের মাঠ থেকে পালিয়ে যায় এবং ভারতের দরিবস নামক একটি বাজারে তাহার বাবার সহিত মুদির দোকানে ব্যবসায় নিয়োজিত হয়। এ পর্যায়ে দেশ স্বাধীন হলে সে লালমনিরহাটে ফিরে আসে। ২০১৪ সালে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জেলা ইউনিটের ইউনিট কমান্ডার নির্বাচিত হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের পোষ্য কোঠায় চাকুরী দেওয়ার নামে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। সাংবাদিক সম্মেলনে আরো অভিযোগ করে বলা হয়, সম্প্রতি শেষ হওয়া মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কালে সদর উপজেলার মোট ২৭২ জন মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে সে নিজেই অভিযোগকারী সেজে অভিযোগ উত্থাপন করে এবং নিজেই বিচারকের আসনে বসে স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে অপমান, অনেক ভূয়া ব্যক্তিকে বিপুল অংকের বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে পাঠানো হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধারা আরো অভিযোগ করেন, যাচাই-বাছাইয়ের নীতিমালা এবং নির্দেশনা চরম লঙ্ঘন এবং উপেক্ষা করে ভারতীয় তালিকা, লাল মুক্তিবার্তা, গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা এবং প্রধানমন্ত্রীর অনুস্বাক্ষরিত সনদ ইত্যাদি সব কিছু উপেক্ষা করে ২০৪ জন মুক্তিযোদ্ধাকে বাতিল করা হয়েছে। যা ছিল উদ্দেশ্যমূলক এবং মুক্তিযোদ্ধার চেতনার উপর আঘাত। এছাড়া অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে প্রকাশ্যে অপমানিত করা হয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেছেন। তদুপরি অন লাইনে আবেদনকৃত ২১৮ জনের মধ্যে মোট ১৮ জন মুক্তিযোদ্ধাকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় রাখা হয়েছে। যাদের মধ্যে নিজেদের ঘনিষ্ট আত্মীয়-স্বজন, কারো কারো ঘনিষ্ট বন্ধু এমনকি কুখ্যাত রাজাকার পরিবারের একাধিক সদস্যকেও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় রাখা হয়েছে বলে মুক্তিযোদ্ধারা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেছেন। আর এর বিনিময়ে বিরাট অংকের ঘুষ-বাণিজ্যও করা হয়েছে বলে অভিযোগে প্রকাশ। সাংবাদিক সম্মেলন চলাকালে অনেক মুক্তিযোদ্ধা এবং শহিদ পরিবারের পোষ্যরা উপস্থিত হয়ে বাছাই কমিটির নেতা ইউনিট কমান্ডার মেজবাহ্ উদ্দীনের উৎকোচ দাবী এবং হয়রানি ও দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপন করেছেন । এ সব বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উক্ত বাছাই কমিটির একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য জানান ‘আমরা বাছাই কমিটিতে সদস্য থাকলেও আমাদের কোন কথার কোন মূল্যায়ন করা হয় নাই’ এবং ইউনিট কমান্ডার মোঃ মেজবাহ্ উদ্দীন স্বেচ্ছারিতার মাধ্যমে যাচাই-বাছাইয়ের নামে এসব অনিয়ম দুর্নীতি করেছেন বলে স্বীকার করেন। সাংবাদিক সম্মেলনে আগামী শনিবার দাবী আদায়ের লক্ষ্যে জেলা শহরে বিক্ষোভ, মানববন্ধন, প্রধানমন্ত্রীর বরাবর স্বারক লিপি প্রদান কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *