মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ
মৌলভীবাজারের রাজনগর থানা পুলিশ গৃহকর্মী ধর্ষণ সংক্রান্ত একটি ঘটনার অভিযোগ গত দেড় মাস ধরে মামলা হিসাবে গ্রহন কিংবা ধর্ষিতার ডাক্তারী পরিক্ষার ব্যবস্থা করছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। ভিকটিম সহ তার মা এ যাবৎ বেশ কয়েকদিন থানায় গেলেও পুলিশ বিষয়টি স্থানীয়ভাবে আপোষ-মিমাংসা করার জন্য ধর্ষিতার পরিবারকে চাপ সৃষ্টি করে কয়েকবার বিচারের সম্মুখিনও করেছে। স্থানীয় প্রতিটি বিচারে ধর্ষণের ঘটনা প্রমানিত হওয়ায় ভিকটিমকে দফায়-দফায় ৪/৫ লাখ টাকা দেবার রায় ঘোষনা হলেও ধর্ষক পক্ষ তা না মেনে উলটো এ ব্যাপারে কোন কথা বললে ধর্ষিতার পরিবারকে প্রানে মারার হুমকি দিচ্ছে।তাই থানায় লিখিত অভিযোগ দায়েরের পর থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে ধর্ষিতা। এ ব্যাপারে প্রতিবেদক সহ জেলার সাংবাদিকরা গত এক মাস যাবৎ দফায়-দফায় রাজনগর থানা পুলিশের সাথে যোগাযোগ করেও অবস্থার কোন উন্নতি হয়নাই। তাই সঙ্গত কারনে সাধারন মানুসের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, যেখানে সাংবাদিকরা তদবির করার পরও ধর্ষণের মত ঘটনায় পুলিশ মামলা না নিয়ে সময়ক্ষেপন করছে, সেখানে সাধারন মানুসের সাথে পুলিশের ব্যবহার কতটুকু সেবামুলক? সরেজমিন অনুসন্ধান কালে জানা যায়, উপজেলার মুনিয়ার পার গ্রামের তছব্বির আলীর প্রবাসি পুত্র আলমদর আলী (৪৫)গত ৬/৭ বছর পুর্বে তার সৎ মা রুশনা বেগমের মাধ্যমে পাশের গ্রামের পিতৃ হারা এক ভিক্ষুক মায়ের বুদ্ধি প্রতিবন্ধী সন্তান (ভিকটিম) কে বাড়িতে কাজের বুয়া হিসাবে নিয়ে আসেন। তখন ভিকটিমের বয়স ছিল ১০/১১ বছর। ভিকটিমের পিতা মারা যাবার পর তার মায়ের অন্যত্র বিয়ে হবার কারনে ২/৩ মাস পর পর মেয়েকে দেখতে আসত মা। ধর্ষিতা (ভিকটিম) জানায়, গত ২/৩ বছর পুর্বে অভিযুক্ত আলমদর আলী প্রবাস থেকে দেশে এসে তার স্ত্রীকে শশুড় বাড়ি বেড়াতে পাঠিয়ে ফাঁকা ঘরে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে প্রথম ধর্ষণ করে। এর পর ভিকটিম অসুস্থ হয়ে পড়লে অভিযুক্ত আলমধর তাকে ফার্মেসী থেকে ব্যাথানাশক ঔষধ এনে দিয়ে রাত্রে আবার ধর্ষণ করে, এবং তাকে কিছু দিন পর বিয়ে করার আশ্বাস দিয়ে ঘটনাটি কাউকে জানালে প্রানে মারার হুমকি দেয়। এভাবে প্রবাসি আলমদর আলী বাড়িতে থাকা অবস্থায় সুযোগ বুঝে ভিকটিমকে লাগাতার ধর্ষণ করতে থাকে।আলমদর মিয়া প্রবাসে ফেরত যাবার পর ভিকটিমের গর্ভে সন্তান আসার বিষয়টি আলমদরের স্ত্রীর চোখে ধরা পড়ে। জিজ্ঞাসাবাদে ভিকটিম আলমদরের স্ত্রীকে বিস্তারিত জানালে সে ধর্ষিতাকে নিকটস্থ ফতেপুর ইউপি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভিজিটার জয়া রানীর কাছে নিয়ে ধর্ষিতার গর্ভপাত ঘটায়। এবং ধর্ষিতা যাতে আর কোনদিন সন্তান সম্ভাবা হতে না পারে সে জন্য আলমদরের স্ত্রী ধর্ষিতা (ভিকটিম) কে নিজের স্বামীর স্ত্রী বলে পরিচয় দিয়ে স্থায়ী লাইগেশন করায়। এর পর আলমদরের স্ত্রী তার স্বামীর অনুপস্থিতিতে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ধর্ষিতাকে নিজের বাড়ীর কাজের ছেলে সহ বিভিন্ন জনের কাছ থেকে আর্থিক সুবিদার মাধ্যমে শারীরিক মেলামেশায় বাধ্য করে। মেলামেশা করতে না চাইলে ভিকটিমকে আলমদরের স্ত্রী অমানুষিক নির্যাতন করত বলে ধর্ষিতা জানায়। গত ৩/৪ মাস পুর্বে মেয়ের কাছ থেকে বিস্তারিত জেনে ধর্ষিতার মা “আনন্দ টিভি” মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি আব্দুল হাকিম রাজকে বিষয়টি জানালে তিনি ঘটনার অনুসন্ধানকালে আলমদরের স্ত্রী ধর্ষিতাকে জোর করে অন্যত্র লুকিয়ে রাখে।এবং তার স্বামীর সাথে ধর্ষিতাকে বিয়ে দেবার আশ্বাস দিয়ে বিষয়টি নিয়ে কারো সাথে কথা বলা নিষেধ করার শর্তে ধর্ষিতাকে বাধ্য করে ফের নিজের বাড়িতে নিয়ে আসে। খবর পেয়ে সাংবাদিক আব্দুল হাকিম রাজ ধর্ষিতার মায়ের সাথে আলমদরের বাড়িতে গিয়ে ধর্ষিতাকে সেখান থেকে উদ্ধারের জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নকুল চন্দ্র দাশ,ইউপি মেম্বার আমিন চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করে ভিকটিম উদ্ধারে ব্যার্থ হয়ে ঘটনাটি ফোন করে রাজনগর থান্রা ভারপ্রাপ্ত কর্মককর্তা(ওসি) আবুল হাসিমকে জানান, এবং ভিকটিম উদ্ধারে পুলিশের সহায়তা চান। কিন্তু ওসি সাহেব ঘটনাস্থলে পুলিশ না পাঠিয়ে এস আই অজিত তালুকদারের মাধ্যমে ইউপি মেম্বার আমিন চৌধুরীকে ফোন করে ফের ঘটনাস্থলে পাঠান। কিন্তু আলমদরের স্ত্রী কোনভাবেই ধর্ষিতাকে তার মায়ের সাথে ফেরত দিতে অনিহা প্রকাশ করেন। ঐদিন সন্ধ্যায় (১১ আগষ্ট) রাজনগর থানার এস আই অজিত তালুকদার ধর্ষিতার মাকে বাড়ি থেকে থানায় নিয়ে নিজের মত করে একটি লিখিত অভিযোগ কম্পোজ করে ধর্ষিতার মাকে নিয়ে থানার ওসি সাহেবের সামনে হাজির করেন। ঘটনার বিবরন শুনে ওসি আবুল হাসিম এজাহারটি মামলা হিসাবে রেকর্ড করে ধর্ষিতাকে জিম্মি থেকে উদ্ধার সহ আইনানুগ ব্যবস্থার নির্দেশ দেন।এবং ধর্ষিতার মাকে বিষয়টি আপোষ না করার পরামর্শ দেন। পরদিন মামলা রেকর্ড না করে এস আই অজিত তালুকদার অভিযুক্তের বাড়িতে যান অভিযানে।অভিযান পরিচালনা করে অভিযুক্ত কাউকে পুলিশ গ্রেফতার করতে না পারলেও এরপর থেকে স্থানীয় প্রভাবশালীদের সাথে বিষয়টি আপোষ-মিমাংসার জন্য যোগাযোগ শুরু করে পুলিশ। এর মধ্যে ধর্ষিতা আলমদরের স্ত্রীর জিম্মি দশা থেকে কৌশলে মায়ের কাছে ফিরে যায়। নির্ভরযোগ্য সুত্রে প্রকাশ অভিযানের পর পুলিশের সাথে অভিযুক্ত ধর্ষক পক্ষ যোগাযোগ করে মোটা অংকের টাকা চুক্তির মাধ্যমে ঘটনাটি মামলা হিসাবে রেকর্ড না করার জন্য একজন ইউপি সদস্যর মাধ্যমে পুলিশকে তিন দফায় সত্তর হাজার টাকা প্রদান করে অভিযুক্তরা।যার অডিও রেকর্ড সাংবাদিকদের কাছে রয়েছে।এরপর পুলিশের পক্ষ থেকে ঘটনাটি আপোষ করার জন্য ধর্ষিতার পরিবারকে অব্যাহত চাপ সৃষ্টি করা হয়। এ নিয়ে স্থানীয় ভাবে কয়েকবার বিচার-শালিস ও বসেছে। প্রত্যেকটি বৈঠকে ধর্ষণের ঘটনা প্রমানিত হওয়ায় স্থানীয় বিচারকরা টাকার বিনিময়ে ধর্ষণ ঘটনা ধামাচাপা দিতে বিব্রতবোধ করেন। সর্বশেষ গত ১২ সেপ্টেম্বর ধর্ষিতাকে নিয়ে তার মা এজাহারের বাদী থানায় গেলে তাদেরকে সারাদিন থানায় বসিয়ে রেখে ওসি আবুল হাসিম আপোষ-মিমাংসা করার জন্য ফতেপুর ইউপি চেয়ারম্যান নকুল চন্দ্র দাশের সাথে যোগাযোগ করে থানার এস আই অজিত তালুকদারকে সাথে দিয়ে ধর্ষিতাকে ফতেপুর ইউপি অফিসে ফের স্থানীয় বিচারের জন্য ফেরত পাঠান। শত-শত উৎসাহী জনতার সামনে ইউপি চেয়ারম্যান নকুল চন্দ্র দাশের সভাপতিত্বে ঐদিন বিচারে উপস্থিত ছিলেন,ইউপি মেম্বার আমিন চৌধুরী, ইউপি মেম্বার লুতফুর রহমান,এস আই অজিত তালুকদার সহ অন্য একজন পুলিশ সদস্য, আনন্দ টিভির জেলা প্রতিনিধি আব্দুল হাকিম রাজ, দৈনিক খবর পত্র পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি শ,ই সরকার জবলু, সাংবাদিক জিতু তালুকদার সহ স্থানীয় গন্যমান্য ব্যাক্তিরা। শালিস বিচারে ধর্ষণের ঘটনাটি প্রমানিত হওয়ায় সকলের যুক্তি-তর্কের পর ইউপি চেয়ারম্যান রায় ঘোষনা করে বলেন, ঘটনাঠি অত্যন্ত হৃদয় বিদারক।ধর্ষিতাকে এতদিন যেভাবে মানসিক এবং শারিরিক নির্যাতক করা হয়েছে তা কোন ভাবেই পুরন হবার নয়। তারপর ধর্ষিতা যাতে তার বাকি জীবন টা কোন ভাবে অতিবাহিত করতে পারে সে জন্য ধর্ষক পক্ষ ধর্ষিতাকে কমপক্ষে নগদ ৪ লক্ষ (চার লাখ) টাকা প্রদান করতে হবে। ধর্ষক পক্ষ পুলিশ ও উপস্থিত সভার মধ্যে ইউপি চেয়ারম্যানের রায় মেনে গেলেও টাকাতো দেয়া দুরের কথা বাড়িতে গিয়ে উলটো ধর্ষিতা সহ তার পরিবারের সদস্যদের প্রানে মারার হুমকি দিচ্ছে। ঘটনাটি সাংবাদিকরা ফের রাজনগর থানার ওসি আবুল হাসিমকে জানানোর পরও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত অভিযোগটি মামলা হিসাবে নেয়া হয়নি বলে নিশ্চিত করেছে ধর্ষিতার পরিবার।ঘটনাটি সাংবাদিকদের মাধ্যমে মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ পিপিএম (বার)কে অবগত করা হয়েছে।