মো: নাজমুল হুদা মানিক ॥
ময়মনসিংহ টু নেত্রকোনা মহাসড়কের পাশে তারাকান্দা উপজেলার বেলতলী এলাকায় প্রোটিন সোর্স মুরগির খামারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী ও ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডক্টর সামীউল আলম লিটন। সরেজমিনে দেখা যায়, বৃহত্তর ময়মনসিংহ এলাকার একমাত্র অত্যাধুনিক কমার্শিয়াল লিয়ার তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত মুরগি খামার গাডেক্স ইন্ডিয়ান সেডটিতে আনুমানিক ১০ কোটি টাকা পরিমাণের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি শতাধিক শ্রমিকের কর্মসংস্থান বাঁধার সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। এছাড়াও দেশের মেধা বিকাশে পুষ্টির উৎস বন্ধের পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ঘটবে বলেও অনেকেই মন্তব্য করেছেন। প্রাথমিক ধারণায় ফার্মের জায়গা নিয়ে ব্যক্তিগত শত্রুতার জের ধরে হিংসাপরায়ণ হয়ে প্রতিপক্ষ নাশকতার উদ্দেশ্যে রাতের আধারে এই ন্যাক্কার জনক নাশকতা ঘটায় বলে প্রোটিন সোর্স প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী কৃষিবিদ ড.সামিউল আলম লিটন জানান। ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড অর্থায়নে গড়ে তোলা খামারের এহেন ক্ষতিতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী। এ সময় ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ড. সামীউল আলম লিটন বলেন, দেশের সম্পদ খামার ধ্বংস করার চেয়ে আমার প্রাণ নাশ হলেও ভালো হতো। যারা নাশকতা চালিয়ে সেডটিকে ধংস করেছে তারা সুপরিকল্পপিত ভাবেই এটি করেছে। তারা আমার ক্ষতিসাধন করার জন্যই এটি করেছে। দীর্ঘদিন যাবৎ যারা ফার্মের নামে ক্রয় করা জমি বেদখল করে রেখেছে তাদের প্রতিও তিনি সন্দেহ পোষন করেন। জানাগেছে এক সপ্তাহ পূর্বে এই সেডটিতে আক্রান্ত হয়ে ক্রমান্বয়ে ৬৫ হাজার মুরগি মারা যায়। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা। ফলে সেডটি পুরোপুরি ভাবেই বন্ধ ছিল যার কারনে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল বলে জানান খামারটির স্বত্বাধিকারী কৃষিবিদ ড. সামিউল আলম লিটন। সেডটির দৈর্ঘ্য ৩৯০ ফুট প্রস্থ ৪৫ ফুট সেডটিতে শতাধিক বৈদ্যুতিক চালিত মোটর ফিডার, কেস হেডফ্রেম লিভ নিপল ড্রিংগার চিরুনি লিভ, ইকবেল, বন্ড ইয়ার হেডফ্রেন, ইগ হেডফ্রেম ও সিসি ক্যামেরাসহ শতাধিক আইটেমের মুরগি পালন এবং এর সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি সহ স্থাপনাটি সম্পূর্ণ বশীভূত হয়ে যায়। রবিবার ২৭ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে এই অগ্নিকাণ্ডের সূচনা হয়। অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ময়মনসিংহ থেকে অগ্নিনির্বাপক দল ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ততক্ষণে সেটি সম্পূর্ণ বশীভূত হয়ে যায়। সোমবার ২৮ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টায় পার্শ্ববর্তী গৌরীপুর থানার ওসি খান হালিম সিদ্দিক সংগীয় ফোর্সসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। একই সময় শ্যামগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশ এর এস আই মোঃ মঞ্জুরুল ইলাহী ঘটনা স্থল পরিদর্শন করেন। ইসলামী ব্যাংক ময়মনসিংহ প্রধান কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মোঃ গোলাম মোস্তফা এর নেতৃত্বে ৩ সদস্যের একটি টিম আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত সেডটি পরিদর্শন করেছেন। ময়মনসিংহ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আতিকুর রহমান ২টি ইউনিট এর ১৪ জন সদস্য নিয়ে অগ্নি নির্বাপণ করেন। তিনি বলেন, আগুনের সূত্রপাত অনেক পূর্বেই হয়ে ছিল। স্থানীয় ১০ নং বিশকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাকির আহমেদ বাবুল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন এবং নাশকতায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। বিকেলে তারাকান্দা উপজেলা নিবাহী অফিসার মিজাবেহ রহমত, তারাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল খায়ের, উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট ফজলুল হক, তারাকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুনু ঠাকুর, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, মহিলা ভাইস সালমা আক্তার কাকন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তারাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল খায়ের জানান, সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। অভিযোগ পাওয়ার পর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।