আশানুর রহমান আশা বেনাপোল–
যশোর মণিরামপুরে মোটরসাইকেল ছিনতাইকারী সন্দেহে বোরহান কবির (১৮) নামে এক কলেজছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
রোববার (৭ ফেব্রুয়ারি) ভোরে ঢাকায় নেওয়ার পথে মৃত্যু হয় তার। এরআগে শনিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে মণিরামপুর উপজেলার খালিয়া এলাকায় পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয় তাকে।
এই ঘটনায় পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে নাইম হোসেনকে গ্রেফতার করেছে। তিনি কৃষ্ণবাটি গ্রামের নুর ইসলামের ছেলে।
নিহত বোরহান মণিরামপুর হাসপাতাল-সংলগ্ন মোহনপুর এলাকার আহসানুল কবিরের ছেলে। তিনি মণিরামপুর সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। ১৫-২০ দিন আগে ভয় পেয়ে তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন বলে পরিবারের দাবি।
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় খালিয়া গ্রামের হাবিবুর রহমান হবি জানান, শনিবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে সাইকেল চালিয়ে খালিয়ায় যান বোরহান। ওইসময় রাজগঞ্জ-হেলাঞ্চি সড়কে নিজের মোটরসাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন নাইম। রাস্তায় মোটরসাইকেল থামিয়ে তিনি মোবাইলে কথা বলছিলেন। তখন নিজের সাইকেল রেখে নাইমের কাছে মোটরসাইকেলের চাবি চান বোরহান। বোরহান বলেন, ‘চাবি দেন, আমি একটু ঘুরে আসি। চাবি না দিলে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলব।’ এই কথা শুনে ক্ষিপ্ত হয়ে রাস্তার পাশ থেকে লাঠি নিয়ে বোরহানকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে রাস্তার পাশে মসুরক্ষেতে ফেলে রাখেন নাইম। পরে আশপাশের লোকজন এসে রাজগঞ্জ ক্যাম্পে খবর দেয়। বেলা ১১টার দিকে পুলিশ এসে বোরহান ও নাইমকে নিয়ে যায়।
নিহতের বাবা আহসানুল কবির বলেন, ‘মোটরসাইকেল ছিনতাই করা নিয়ে নয়, সাইকেল রাখা নিয়ে কথা কাটাকাটি করে ২-৩ জন মিলে আমার ছেলেকে মারপিট করেছে। পরে পুলিশ ছেলেকে ধরে ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। বোরহানের মাথা ফেটে রক্ত বের হলেও তাকে হাসপাতালে না পাঠিয়ে পুলিশ হাতকড়া পরিয়ে ক্যাম্পে বসিয়ে রাখে। খবর পেয়ে আমরা অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে তাকে আনতে যাই। তখনও পুলিশ তাকে ছাড়েনি।’
আহসানুল কবির বলেন, ‘১৫-২০ দিন আগে ভয় পেয়ে মানসিকভাবে অসুস্থ হয় আমার ছেলে। তার চিকিৎসা চলছিল। আমরা পুলিশকে বলি সে মানসিক রোগী। পুলিশ মানতে চায়নি। পরে বাড়ি থেকে কাগজপত্র নিয়ে দেখালে দুপুর একটার দিকে তাকে মণিরামপুর হাসপাতালে আনা হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় ওই সময় তাকে যশোর সদর হাসপাতালে পাঠায় ডাক্তার। সেখানে চিকিৎসা না হওয়ায় ঢাকায় নেওয়া হয় বোরহানকে। ভোররাতে ঢাকায় পৌঁছানোর আগে ছেলে মারা যায়।’
এদিকে, মারপিটের ঘটনায় আটক নাইমকে আসামি করে শনিবার রাতে মণিরামপুর থানায় মামলা করেন বোরহানের বাবা। সেই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রাজগঞ্জ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই তপনকুমার নন্দী।
তপন নন্দী বলেন, উদ্ধার করে ক্যাম্পে নিয়ে চিকিৎসা করানো হয় বোরহানকে। পরে তাকে মণিরামপুর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এদিকে, রোববার সকালে বোরহানের লাশ যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়। সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
জানতে চাইলে রাজগঞ্জ পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ (পরিদর্শক) শাহজাহান আহমেদ বলেন, স্বজনদের অভিযোগ সত্য নয়। তাকে ক্যাম্পে চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালে পাঠানো হয়।