রংপুর প্রতিনিধি…
রংপুর মহানগর ও জেলা বিএনপির কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় ত্যাগী নেতাদের অবমূল্যায়ন, জ্যেষ্ঠতা লংঘন, স্বজনপ্রীতিসহ নানা অভিযোগ এনে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কাছে দেয়া লিখিত অভিযোগ তদন্ত করার নামে চরম অনিয়ম এবং প্রহসনের তদন্ত করার অভিযোগ। নেতাকর্মীদের অভিযোগ- যাদের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছিল তদন্ত কমিটি তাদের সঙ্গেই কথা বলে গল্পগুজব করে চলে গেছে। শুধু তাই নয় তদন্ত কমিটি দলীয় কার্যালয়ে না গিয়ে নগরীর একটি অভিজাত হোটেলে রাতে অবস্থান করে পরের দিন সকালে আবারও ঢাকায় ফিরে গেছে। ফলে, যে উদ্দেশ্যে খালেদা জিয়া তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রকৃত তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত তথ্য উদঘাটিত হলো না বলে হতাশা প্রকাশ করেছে অভিযোগকারী বিএনপি নেতারা।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৬ মে সম্মেলন বা কাউন্সিল অধিবেশন না করে ঢাকা থেকে রংপুর মহানগর ও জেলা বিএনপির কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে সাইফুল ইসলামকে সভাপতি, রইছ আহাম্মেদকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা বিএনপি মোজাফফর হোসেনকে সভাপতি শহীদুল ইসলাম মিজুকে সাধারণ সম্পাদক করে মহানগর বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়। ঘোষিত কমিটিতে দলের ত্যাগী অনেক নেতাকে অবমূল্যায়ন করা, জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করা, দীর্ঘদিন ধরে হামলা মামলায় জর্জরিত হয়ে পলাতক জীবনযাপন করা এমন অনেক নেতাকে দায়িত্বশীল পদে না দেয়াসহ আন্দোলন সংগ্রামে অংশ না নেয়া, দীর্ঘদিন দলের সঙ্গে সম্পর্ক না রাখাসহ বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্তদের বড় বড় পদ দেবার অভিযোগ উঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির কয়েকজন নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যানসহ সিনিয়র নেতা ঢাকায় দলের চেয়াপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে লিখিত অভিযোগ প্রদান করে ঘোষিত কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করার দাবি জানায়। পরবর্তীতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া পুরো বিষয় তদন্ত করার আদেশ দেন। পদবঞ্চিত নেতাদের অভিযোগ উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কিংবা দায়িত্বশীল নেতাদের বাদ দিয়ে লোক দেখানো একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয়া হয়। যারা নবগঠিত কমিটি গঠনে পেছন থেকে কলকাঠি নেড়েছেন তারাই দলের নেতাদের প্রভাবিত করে কুমিল্লা বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল আউয়াল ও বিএনপি কেন্দ্রীয় সদস্য অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম এ দুজনকে তদন্ত করার দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। গত বুধবার এ দুই নেতা রাত ৮টার দিকে রংপুরে আসেন। তারা প্রথমে জেলা ও মহানগর বিএনপি কার্যালয়ে আসার কথা থাকলেও সেখানে না এসে নগরীর অভিজাত হোটেল নর্থভিউতে অবস্থান করে সেখানেই শেষ কয়েকজন নেতাকে ডেকে এনে তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে জেলা যুবদলের সভাপতি নাজমুল আলম নাজুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তদন্ত করতে আসা দুই নেতা তাদের হোটেলে আসতে বলেন, সেখানে যুবদলের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলেন। একইভাবে ছাত্রদলের জেলা সভাপতি হিজবুল, সাধারণ সম্পাদক জোহা, মহানগর ছাত্রদল সম্পাদক জীম , সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিব চৌধুরী, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সেক্রেটারী ইমরান খান শ্রাবন, সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্না, সেচ্ছাসেবক দলের কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলাদা আলাদা কথা বলেন। যুবদল সভাপতি নাজু বলেন, আমি তদন্ত কমিটিকে বলেছি জেলা ও মহানগর বিএনপির কমিটিতে অনেক ত্যাগী নিবেদিত প্রাণ নেতাদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে, পদাবনতি করা হয়েছে, অনেককে কমিটিতে রাখা হয়নি।
তিনি নাম উল্লেখ করে বলেন, কাউনিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিঠু, বিএনপি নেত্রী মমতাজ শিরিন ভরসাকে কমিটিতেই রাখা হয়নি। এমনকি জেলা বিএনপির সভাপতি এমদাদ ভরসাকে শুধু সদস্য পদে রাখা হয়েছে। অথচ ভরসা পরিবারের রংপুরে বিএনপির রাজনীতিতে অনেক অবদান আছে যা সর্ব মহলে স্বীকৃত। এভাবেই অনেক ত্যাগী নেতাকে অমূল্যায়ন করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
এদিকে বিএনপির আর এক নেতা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানান, নয়া কমিটিতে অনেক যোগ্য নেতাকে যোগ্যতর স্থানে পদ দেয়া হয়নি। যেমন মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সামসুজ্জামান সামু বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে ১২টি মামলায় প্রধান আসামি হয়ে দীর্ঘ ৪ বছর ধরে পলাতক জীবনযাপন করছেন। অথচ তাকে মহানগর বিএনপির সহ -সভাপতি করা হয়েছে। অথচ ২০ বছর ধরে দলের সঙ্গে সম্পর্ক নেই সেই বদরগঞ্জের দুলুকে সহসভাপতি করা হয়েছে। জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম রাঙ্গা আগের কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। এবার তাকে ২ নম্বর সাংগঠনিক করা হয়েছে। অথচ পীরগাছা যুবদলের সভাপতি সাইফুলকে জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক পদ দেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়- সাবেক এমপি জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি পরিতোষ চক্রবর্তীকে ৪ নম্বর সহসভাপতি পদ দেয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন দলের সঙ্গে সম্পর্ক নেই ফতেহ আলী খোকাকে সহসভাপতি করা হয়েছে। একইভাবে আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি টিপু মুন্সির ম্যানেজারকে সহসভাপতি পদ দেয়া হয়েছে। কোন দিন বিএনপি করে নাই এমন এক সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরকে সহসভাপতি করা হয়েছে। এভাবেই জেলা ও মহানগর কমিটিতে ত্যাগীদের স্থান দেয়া হয়নি। এ বিষয়গুলো তদন্ত কমিটিকে বলা হয়েছে।
এদিকে মহানগর বিএনপির সহসভাপতি সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তদন্ত কমিটি কেউ রংপুরে এসেছেন কিনা তিনি জানেন না, এমনকি তাকে জানানো হয়নি। অথচ তিনিও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে অভিযোগকারীদের একজন। এছাড়াও অভিযোগকারী নেতাদের বেশির ভাগ নেতাদের তদন্ত কমিটি ডাকেনি এমনকি তার বক্তব্য শুনতেও রাজি হয়নি তারা।
ফলে তদন্ত কমিটি প্রহসন করতে এসেছিল, এ তদন্ত কমিটি দিয়ে ন্যায্য বিচার পাওয়া যাবে না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। সার্বিক বিষয়ে কথা বলতে তদন্ত কমিটির অন্যতম নেতা বিএনপি কেন্দ্রীয় সদস্য অধ্যাপক আমিনুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়, ফলে কোন মন্তব্য করা যাবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *