রংপুর প্রতিনিধি.
স্বামী সুমন মিয়ার দেয়া আগুন ৭ দিনে মৃত্যুর সাথে দরকষাকষি করে অবশেষে মারাই গেলেন রংপুর মহানগরীর খোর্দ তামপাট সরেয়ারতল এলাকার গৃহবধু রিক্তা আক্তার(২৩)।
শুক্রবার গভীর রাতে তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। নৃশংস এই ঘটনায় স্বামীর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে স্থানীয় সরকারী দলীয় নেতৃবৃন্দ এবং কমিউনিটি পুলিশিং এর নেতারা চাপ প্রয়োগ করে নিহত স্ত্রীর পরিবারের সাথে বিষয়টি সমঝোতা করে দিয়েছেন। ফলে বিকেল পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে মামলা করে নি কেউ। পুলিশও আছে নিশ্চুপ।
পারিবারিক, স্থানীয় ও পুলিশ সূত্র জানায়, ছয় বছর আগে নগরীর আশরতপুর ঈদগাহ পাড়ার আবুবকর সিদ্দিকের পুত্র সুমন এবং খোর্দতামপাট সরেয়ার তল এলাকার ইলিয়াস মিয়ার কন্যা রিক্তা আক্তার প্রেম করে বিয়ে করেন। পরে সুমন ঘরজামাই হিসেবে শশুড় বাড়িতে থাকতেন এবং সরেয়ারতল বাজারে কাচামালের ব্যবসা করতেন। এরই মধ্যে এই দম্পত্তির সৌরভ নামে পুত্র সন্তান হয়। তার বয় এখন দেড় বছর। ব্যবসার পাশাপাশি সুমন মাদক সেবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। স্ত্রী রিক্তা স্বামীকে মাদক সেবন থেকে দুরে রাখতে সকল ধরনের চেষ্টা তদবির করতে থাকে। কিন্তু সুমন কোনভাবেই মাদক ছাড়তে রাজি হয় নি। গত ১ অক্টোবর রাতে সুমস মদ খেয়ে ঘরে ফিরলে স্ত্রী রিক্তা স্বামীকে নেশা ছাড়ানোর জন্য নিজেই আত্মহত্যার হুমকি দেন। কিন্তু সুমনের তাতে কোন বোধোদয় হয় নি। কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে রিক্তা কুপি থেকে কেরোসিন নিজের গায়ে ঢেলে দিয়ে তাকে মেরে ফেলার জন্য বলে। এসময় সুমন স্ত্রী রিক্তাকে বলে ‘ তোর যখন এতই মরার শখ মর, তাহলে মর, এই বলে তার পকেটে থাকা দেয়াশলাই বের করে স্ত্রীর গায়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। মুহুর্ত্ইে পুরো শরীরে আগুন ধরে যায় রিক্তার। বাড়ির অন্যলোকজন ঝলসে যাওয়া রিক্তাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করাতে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যায়। ৭ দিন মৃত্যুর সাথে দরকষাকষি শেষে শুক্রবার গভীর রাতে তিনি সেখানে মারা যান। এদিকে রিক্তার মৃত্যুর পর বিষয়টি মিমাংসার জন্য রিক্তার পরিবারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে স্বামী সুমন ও তার পরিবার। এরই ধারাবাহিকতায় স্থানীয় ৩২ নং ওয়ার্ড কমিউনিটি পুলিশিং সভাপতি ও আমওয়ামীলীগের রংপুর সদর উপজেলার সাবেক প্রচার সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, কমিউনিটি পুলিশিং এর সহ সভাপতি ছাত্তার নুরনবী রাইটার, সেক্রেটারী ও সাবেক তামপাট ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সিকদার, যুবলীগ নেতা সুজন, কমিউনিটি পুলিশিং নেতা জনির নেতৃত্বে স্থানীয আরও কয়েকজন আওয়ামীলীগ ও কমিউনিটি পুলিশিং সদস্য এ ঘটনায় কোন মামলা না করার প্রতিশ্রুতি আদায় করে পোস্ট মোর্টেম ছাড়াই রিক্তাকে দাফন করার সিদ্ধান্ত নেয়। এজন্য তারা পুলিশের সাথেও আগাম সমঝোতা করে। এজন্য সুমনের পরিবারের পক্ষ থেকে তাদেরকে দেড় লাখ টাকা দেয়া হয়। সেই টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা স্থাণীয কাউন্সিলর আবুল কাশেমের লোকজনকেও দেয়া হয়। অন্যদিকে রিক্তার পুত্র সৌরভের নামে ৪ শতক জমি দেয়ারও সিদ্ধান্ত হয় এসব সমঝোতাকারীর মধ্যস্ততায়। বিষয়টি সেখানে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হযেছে। স্থানীয়রা জানান, মাদক সেবনে বাধা দেয়ায় স্ত্রীকে পুড়িয়ে মারা হলো। আর সেটি টাকার বিনিময়ে সমঝোতা করা হলো। এটা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এতে এ ধরনের হত্যাকান্ড ঘটাতে অপরাধীরা আরও উৎসাহিত হবে।রিক্তার বাবা ইলিয়াস জানান, আমি এখন কিছুই বলতে পারবো না বাবা। মেয়েটাকে এভাবে হারাবো ভাবতেই পারিনি। তার ওপর এটা নিয়ে যেভাবে চাপাচাপি করা হচ্ছে সেটা কাউকেই বলার মতো নয়।
বিষয়টি জানতে স্থানীয় কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র আবুল কাশেমের সাথে তার মোবাইলে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি কল রিসিভি করেন নি।
এ ব্যপারে কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ এবিএম জাহিদুল ইসলাম জানান, বিষয়টি আমাদের কানেও এসেছে। কেউ মামলা করতে আসলে অবশ্যই মামলা নেয়া হবে।