কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
কুড়িগ্রামের রাজারহাটে এক প্রতারক ইরানী চক্রের চাকুরীর ফাঁদে সর্বস্ব হারাচ্ছে অনেক মানুষ। তাদের ফাঁদে প্রতারণার স্বীকার শত শত পরিবার। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ভোক্তভোগীরা।
সম্প্রতি অগ্রযাত্রা সমাজ উন্নয়ন সংস্হা ভূয়া একটি কোটি টাকার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিষয়টি নিয়ে স্হানীয় সাংবাদিকগণ বিভিন্ন পত্রিকায় নিউজ প্রকাশ করে। এতেই টনক নড়ে প্রতারক চক্রের। আবেদনের সময়সীমার পর গাঁ বাঁচাতে দায়সারা জিডি করে প্রতিবাদ প্রকাশ করে সংস্থাটি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজারহাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের হরিশ্বর তালুক গ্রামের আব্দুল খালেক। পূর্বে তিনি সেনাবাহিনীতে চাকুরী করতেন। চাকুরীতে থাকার সুবাদে শান্তিরক্ষা মিশনে ইরানে কর্মরত ছিলেন। সেই থেকে নামের সঙ্গে যোগ করেন ইরানী পদবী। চাকুরী থেকে অবসরে গিয়ে নামের পূর্বে যোগ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা পদবী। ওই ইরানী’র ভূয়া মুক্তিযোদ্ধার সরকারি গেজেট ও ভারতীয় এবং লাল বার্তা তালিকায় নাম নেই। কিন্তু বীর মুক্তিযোদ্ধা পদবী ব্যবহার করে গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে তার অগ্রযাত্রা সংস্থার ওয়েবসাইড (আসুসবিডি) এবং ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট ২০৫০৪১০০১০০০৭০৯০৮ নামে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিভিন্ন প্রতারক চক্রের মাধ্যমে তিনি হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি টাকা। বর্তমানে ইরানী প্রতারকের মূলহোতা এবং গড়ে তুলেছে শক্তিশালী প্রতারক চক্র। সেই প্রতারক চক্রের মূল সিন্ডিকেটের কাজ হচ্ছে চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়া। অনেকেই চাকুরীর আশায় এ ইরানি চক্রের ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হয়েছে। সম্প্রতি অগ্রযাত্রা সমাজ উন্নয়ন সংস্হা যার রেজি নং- ৬৮৮। এনজিও ব্যুরো রেজি নং ২৭৪৭। অগ্রযাত্রা; ইরানীসহ প্রতারক চক্রটি।
আবেদনের সময়সীমা পার হওয়ার পর চক্রটি বাঁচার জন্য রাজারহাট থানায় একটি জিডি করে এবং অনলাইনসহ পত্রিকায় ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির প্রতিবাদ জানায়। এ ছাড়া ২০১৩ সালে বুদ্ধি প্রতিবন্ধি ও অটিস্টিক বিদ্যালয় ও হরিশ্বর তালুক অটিজম প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় নির্মান করে। ওই প্রতিষ্ঠানে চাকুরী দেয়ার কথা বলে শতাধিক লোকজনের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার একাধিক তথ্য পাওয়া গেছে।
অগ্রযাত্রা উন্নয়ন সংস্হার চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক ইরানী মুঠোফোনে বলেন, আমার বড় ছেলে সোহাগ আপনার সঙ্গে দেখা করবে এবং ঘটনাটি আমার বড় ছেলে সব জানাবে। এ বিষয়ে ইরানীর বড় ছেলে সোহাগ মিয়া একাধিকবার মুঠোফোনে কল দিয়ে দেখা করে এ প্রতিবেদকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এছাড়া ইরানী সত্যতা স্বীকার করে বলেন, একটি প্রতিষ্ঠান কখনো একাই হয়না। অনেকেই সংশ্লিষ্ট থাকেন এবং অনেকেই টাকা দিয়ে সহযোগিতা করে। আর অগ্রযাত্রার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিষয়টি আমি জানি না। কে বা কারা এটি করছে। কিন্তু এর পরক্ষণে তিনি সাংবাদিককে তার কাছে বসিয়ে মুঠোফোনে বিউটি নামের কাউকে ঢাকায় ফোন করে এবং বলেন আমি কি তোমাদেরকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে বলেছি? কিন্তু ওপার হতে বিউটি নামক জনৈক মহিলা বলেন, আপনার কথাতেই তো আমরা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছি।
প্রতারনার স্বীকার শিক্ষক হারুন মিয়া জানান, ওই ইরানীকে চাকুরীর জন্য আমি এবং আমার ভগ্নিপতি ৩ লাখ টাকা দেই। এখন টাকা ফেরৎ চাইলে তিনি বিভিন্ন টালবাহনা করে আসছে।
রাজারহাটের সাবেক মুক্তিযোদ্ধার কমান্ডার রজব আলী বলেন, ইরানী সাহেব কিসের মুক্তিযোদ্ধা? তিনি তো বিশ্ব চিটার, তার মুক্তিযোদ্ধার কোন কাগজ নেই। মুক্তিযোদ্ধা পদবী ব্যবহার করে সে মানুষের সাথে বিভিন্ন ধরণের প্রতারণা করতেছে। তাকে আইনের আওতায় আনা হোক।
রাজারহাট উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, অগ্রযাত্রা সংস্থার সাথে আমাদের কোন রকম যোগাযোগ নাই। এ সংস্থার কমিটির মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের বিষয় অবগত নন বলে জানান।
এ বিষয়ে রাজারহাট থানার ওসি রাজু সরকার বলেন, কেউ একজন জিডি করতে থানায় এসেছিলো। জিডি করলো কি না কাগজ না দেখে সঠিক বলতে পারছিনা। প্রতারনার অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।