সহিজল ইসলাম, রাজীবপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি।
কুড়িগ্রামের রাজিবপুরে ভূমিহীনদের বসতবাড়িতে হামলা ও বসতভিটে দখল করে নিয়ে তাতে ঘর উঠানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলার মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের মধ্যে শিকারপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ওই এলাকার ভূমিহীন নুরনবী (৪০)পিতা মৃত মেহের আলী, ইয়াকুব আলী (৭৫) পিতা মৃত ইউনুছ আলী, সমেজ আলী (৪০)পিতা মৃত সোনাউল্ল্যা ও বেলাল হোসেন (৬০)পিতা মেহের আলীসহ প্রায়২০টি ভূমিহীন অসহায় পরিবারগুলোর থাকার কোনো জায়গা জমি না থাকায় ১৮/১৯বছর আগে সরকারের খাস জমি মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের শিকারপুর মৌজার ১নং খতিয়ানের ১৩৩, ১২৭, ১২৮, ১২৯, ১৩০ দাগের সাড়ে তিন একর জমির মধ্যে। ওই ভূমিহীন অসহায় পরিবারগুলোকে মাথা গুজার ঠাঁয় করে দেয় সরকার।
ভূমিহীন বেলাল হোসেন সাংবাদিকদের জানান আমরা ২০টি ভূমিহীন অসহায় পরিবার দীর্ঘ ১৮/১৯ বছর যাবৎ বাড়ীঘর তৈরী করে বসবাস করে আসছি। এই এলাকার প্রভাবশালী ইমান আলী দেওয়ানি আমাদের বসতবাড়িতে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী দিয়ে মারপিট করে বসতভিটার জমি দখল করে তাতে একটি চৌচালা টিনের ঘর উঠায়। মারপিটে আমিসহ আমার স্ত্রী গুরুতর ফোলা জখম করে। এতে আমার স্ত্রী নুরজাহান খাতুন বাদী হয়ে ইমান আলী দেওয়ানি বিরুদ্ধে ৫/১১/২০২০ ইং তারিখে ঢুষমারী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
ভুক্তভোগী ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, ওই এলাকার ভূমিদস্যু ইমান আলী দেওয়ানি ২০১৫ সালের ৩১ডিসেম্বর গোপনে তার ৩ ছেলে সুরমান আলী (৩০), বাবুল হোসেন (২৫), নাজির হোসেন (২৩) তার নিকট আত্মীয় মজিদ খন্দকার (৬০)পিতা মহির খন্দকার, মোস্তফা খন্দকার (৩০) পিতা মজিদ খন্দকার, কামরুল খন্দকার (২৫) পিতা মজিদ খন্দকার, মোগল হোসেন (৩০)পিতা আজিজল হক, মর্জিনা খাতুন (৫৫)স্বামী দুলা মিয়াসহ ৮জনের নামে তথ্য গোপন করে মোহনগঞ্জ ইউনিয়ন তৎকালীন ভূমি কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে প্রায় ৭ একর জমি বন্দোবস্ত করে নেয়। এবং খাস জমি বন্দোবস্তের বিষয়টি গোপন করে রাখে। ২০২০ সালের ১৫ অক্টোবর খাস জমি বন্দোবস্তের বিষয়টি প্রকাশ করে ওই ভূমিদস্যু ইমান আলী ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে ভূমিহীন অসহায় পরিবারেরগুলোর ওপর হামলা চালায় ও মারপিট করে ঘর উঠানোর চেষ্টা করে এবং একটি ঘরের চাল, বেড়া ওই জমিতে রাখে। এবং ওই পরিবারগুলোকে বাড়ীঘর ভেঙ্গে নেওয়ার জন্য হুমকি প্রদর্শন করে।
ওই জমিতে বসবাসকারী নুর নবী সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন আমরা সরকারের দেওযা খাস জমিতে ২০টি পরিবার ১৮/১৯বছর থেকে বসবাস করে আসছি আমাদেরকে ইমান দেওয়ানি বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখায়, মামলার ভয় দেখায় আমাদের বাড়িঘরে আগুন লাগাইয়া পুইরা মারতে চায় আমরা এখন ছেলেমেয়ে পরিবার নিয়ে কোথায় যামু।
ওই এলাকার স্থানীয় সার্ভেয়ার (আমিন) হামিদুল ইসলাম জানান এই ভূমিহীন অসহায় পরিবারগুলো যখন কোথাও মাথা গুজার ঠাঁয় পায়নি তখন এলাকার মহৎ ব্যক্তি ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে রাজীবপুর উপজেলা তৎকালীন নির্বাহী কর্মকর্তা আবেদন দেই, নির্বাহী কর্মকর্তা নির্দেশে ভূমিহীনদের বসতবাড়ি তৈরী করার অনুমতি দেয়। তখন থেকে এ পরিবারগুলো বসবাস করে আসছে।
ইমান আলী দেওয়ানি একজন খারাপ মানুষ সে অসহায় ও দুর্বল মানুষদের জমি জখলসহ জমির ফসল লুটপাট করে।
ওই এলাকার আওয়ামী নেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, ইমান আলী দুষ্কৃতি প্রকৃতির লোক। সে ডাকাত দলের সর্দার তার অন্যায়ের কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে ঘরে থেকে তুলে নিয়ে মারপিট ও নির্যাতন করে। শিকারপুর চরের মানুষগুলো তার কাছে অসহায়।
সাংবাদিকদের কাছে ভুক্তভোগী সমেজ মিয়া অভিযোগ করে বলেন, শিকারপুর চর এখন ভূমিদস্যু ইমান আলী দেওয়ানির দখলে। মনে চাইলে টাকার বিনিময়ে সন্ত্রাসীদের দিয়ে একজনের জমি অন্যজনকে দখল করে দেয়।
সাংবাদিকদের জানান মধ্যে শিকার এলাকার সোলায়মান হোসেন ইমান আলী সরকারি দল করে, সে ক্ষমতাশীল দলের দাপটে মানুষের জমাজমি দখল করে নেয়, মানুষের ক্ষেতের ফসল গরু মহিষ লুটপাট করে কেউ কিছু বললে তার ওপর নির্যাতন করে।
মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রেফাজ উদ্দিন জানান, আমার জানামতে এই পরিবারগুলো প্রায় ২০বছর যাবৎ হলো এ চরে বসবাস করে আসছে।
মোহনগঞ্জ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা খালেকুজ্জামান জানান সরকার কাউকে উচ্ছেদ করে খাস জমি অন্যকেজন দিতে পারে না,হয়তো তথ্য গোপন করে তাদের নামে বন্দোবস্ত নিয়েছে। যে ভূমিহীন অসহায় পরিবারগুলো ঘরবাড়ী তৈরী করে বসবাস করে আসছে, ওই পরিবারগুলোই বন্দোবস্ত পাওযার অধিকার রাখে।
এ ব্যাপারে ঢুষমারী থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইফতেখার জানান অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত চলছে।
রাজিবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নবীরুল ইসলাম জানান কাউকে উচ্ছেদ করে সরকার অন্যজনকে বন্দোবস্ত দেয় না। জেলা প্রশাসক বরাবর অথবা আমার বরাবর অভিযোগ করলেও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।