রফিকুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি ।
কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুর উপজেলাধীন রাজিবপুর মডেল সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে ।
রাজিবপুর মডেল সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়টি উপজেলা প্রশাসন সহ বিভিন্ন দপ্তর,বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও স্থানীয় লোকজনের নাকের ডগায় থাকলেও নেই কোন নিয়ম শৃঙ্খলা ও শিক্ষার মানোন্নয়ন। গত ৫ আগষ্টের পূর্বে স্বৈরাচার শাসনামলে এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক আজিম উদ্দিন আওয়ামী লীগের পদধারী নেতা হওয়ায় কোন নিয়মই যেন তাকে স্পর্শ করতে পারেনি।বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিম উদ্দিনের অফিস কক্ষ ছিল বিচার-সালিশ,
গান-বাজনা,দলীয় নেতা-কর্মীদের আড্ডাখানাসহ নানা অপকর্মের নিরাপদ জায়গা।কিন্তু স্বৈরাচার সরকারের পতন হলেও একটুও পরিবর্তন ঘটেনি প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয়ের।আগের মতোই চলছে প্রতিষ্ঠান, নেই কোন নিয়মের বালাই ।
এলাকাবাসীর পক্ষে রাশেদুল ইসলাম ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক,কুড়িগ্রাম ও সভাপতি, চর রাজিবপুর মডেল সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, চর রাজিবপুর, কুড়িগ্রাম বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন । চর রাজিবপুর উপজেলা সদরে অবস্থিত রাজিবপুর মডেল সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজিম উদ্দিন কর্তৃক অত্র বিদ্যালয়ের কোটি টাকার স্থাবর সম্পদ আত্মসাৎ করা হয়েছে। বিদ্যালয়টি সরকারি করনের পূর্বে ২০০৫ সালে তার পূর্ববর্তী প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের জমি লীজ দিয়ে
২০ টি দোকান ঘর বরাদ্দ দিয়েছিলেন।প্রতিটি দোকানের এককালীন লীজ মূল্য ছিল ২০ হাজার টাকা টাকা। বরাদ্দকৃত দোকান বাবদ মোট ৪ লক্ষ টাকা বিদ্যালয়ের ৭ নম্বর এ্যাকাউন্টে জমা ছিল। এই দোকান ঘরগুলির অবস্থান থানা মোড় থেকে উপজেলা পর্যন্ত বিস্তৃত। উক্ত টাকা গুলি এ্যাকাউন্টে অব্যয়িত থাকা অবস্থায় ২০১০ সালে আজিম উদ্দিন তৎকালীন উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নিয়োগ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জোরপূর্বক প্রধান শিক্ষকের পদটি দখল করে নেন।নিয়োগ গ্রহণের সাথে সাথেই উক্ত টাকা উত্তোলন পূর্বক আত্মসাৎ করেন এবং ২০১০ সালে তিনি আরো ৪৮ টি দোকান ঘর বরাদ্দ দেন যার প্রতিটি লীজ মূল্য ৪০ হাজার টাকা।বরাদ্দকৃত ৪৮ টি দোকান ঘরের মোট লীজ মূল্য ১৯ লক্ষ ২০ হাজার টাকা।কিন্তু বরাদ্দকৃত একটি টাকাও ব্যাংকের এ্যাকাউন্টে জমা না দিয়ে তিনি আত্মসাৎ করেন। আরো উল্লেখ্য যে ২০১০ সাল থেকে দোকান ঘরগুলি হতে প্রাপ্ত ভাড়ার টাকাও আত্মসাৎ করে আসছেন। এছাড়াও অত্র বিদ্যালয়ের একটি বড় পুকুর রয়েছে যার আয়তন ৩.৫ একর।পুকুরটি লীজ দিয়ে প্রতি বছর ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা আয় হয়,যা তিনি প্রতিষ্ঠানে যোগদানের পর থেকেই আত্মসাৎ করে আসছেন। কিন্তু অতি বিষ্ময়কর বিষয়, ২০১৭ সালে বিদ্যালয়টি সরকারিকরণের নিমিত্তে যখন শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি সরকারের তালিকায় নথিভুক্ত করা হয় তখন দলীলে এই দোকান ঘর সমূহের কথা উল্লেখ না করে কোটি টাকার এ স্থাবর সম্পত্তি বেমালুম গায়েব করে দেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অত্র প্রতিষ্ঠানর এক সিনিয়র সহকারী শিক্ষক বলেন, নিয়মের কোন তয়ক্কা না করে ব্যক্তিগত প্রয়োজনে সরকারি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব থেকে হরহামেশাই তোলা হচ্ছে টাকা।
রাজিবপুর মডেল সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ,পরীক্ষার এডমিট কার্ড,ফরম ফিলাপ ও সেশন ফি সহ নামে-বেনামে হাতিয়ে নেওয়া হতো মোটা অঙ্কের টাকা। প্রধান শিক্ষক আজিম উদ্দিন স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের পদবি সংশ্লিষ্ট নেতা হওয়ায় নিজের ইচ্ছে মতো নিয়ম-অনিয়মে চালাতেন প্রতিষ্ঠানকে। গত কয়েক মাস ধরে তিনি গ্রেপ্তার আতঙ্কে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকছেন। রাজিবপুর মডেল সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিম উদ্দিনের নানা অনিয়ম দুর্নীতির ঘটনায় বিচার দাবি করেছে এলাকাবাসী । বিষয়টি নিয়ে জানতে কয়েক দফা প্রধান শিক্ষক আজিম উদ্দিনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *