SAMSUNG CAMERA PICTURES

মোঃ আনোয়ার হোসেন আকাশ, ঠাকুরগাও প্রতিনিধি ঃ ঠাকুরগাওয়ের রাণীশংকৈলে প্রাচীন ঐতিহ্যের এক নিদর্শন রামরায় দিঘি। এক অপরূপ সৌন্দর্য বিরাজ করছে দিঘির চারপাশ জুড়ে। জলাশয় ও পাড় ঘিরে রয়েছে ২১০ বিঘা জমি। বাধানো ঘাট ৮০ বিঘা জমির উপর। কাটনমুখ রয়েছে ৫টি। পুকুরের চার পাশ অনেক উঁচু করে পাড় বাঁধানো আছে। জলাশয়ে দাঁড়িয়ে পাড়ের উঁচু দিকে তাকালে যেন মনে হয় আকাশের সাথে মিলে আছে। প্রতি বছর শত শত অতিথি পাখির সমাগম হয় এখানে। পাখির কিচির মিচির শব্দে পুরো এলাকা মুখরিত হয়ে যায়। মানুষ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে পাখির দিকে অপলক দৃষ্টিতে। পুকুর’র পশ্চিম পাড়ে হোসেনগাও ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়। ঘুরে দেখলে বুঝা যায় ইউপি কার্যালয়টি দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এখানে রয়েছে প্রাণী সম্পদ, কৃষি সম্প্রসারণ, তথ্য প্রযুক্তি সহ বিভিন্ন দপ্তরের শাখা কার্যালয়। কার্যালয়ের পশ্চিম দিক থেকে পুকুরের সাথে ইউপি ভবনটির দিকে তাকালে যেন মনটা জুড়িয়ে যায়। কার্যালয়ের সুন্দর নিদর্শন যেন প্রকৃতির সাথে অপরুপ রুপে মিলিত হয়েছে। চার পাশ জুড়ে প্রায় আড়াই হাজার লিচুর বাগান পাশে বনজ গাছ। সবুজের সমারোহে মন জুড়িয়ে যায় । প্রতি বছর এখান থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব আয় হয় সরকারি কোষাগারে। ২০০২ সালে রামরাই দিঘির নামকরণ হয় রানি সাগর রামরাই দিঘি। প্রতিদিন শত শত লোক দুর দুরান্ত থেকে ছুটে আসেন এখান কার প্রকৃতির শোভা দেখতে। চারপাশ ঘুরে ঘুরে দেখে বেশ মুগ্ধ হয়ে আলোচনা মুখর হয়ে যান ঘুরতে আসা মানুষগুলো। তথ্যমতে প্রায় ৫০০ বছর আগে এখানে দুই ঈদে সপ্তাহব্যাপী মেলা হতো। ধারাবাহিকতায় দুই ঈদ, বিশ্ব ভালবাসা দিবস সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে হাজার হাজার লোকের সমাগম হয় এখানে। লোক সমাগমের কারনে এ সব দিনে বাংলাদেশ, আনসার ভিডিপি, গ্রাম পুলিশের সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকেন। রামরাই দিঘির আশপাশ এলাকা জুড়ে সবুজ ক্ষেতের সমারোহ। ইরি বোর চাষের সময় মাঠ জুড়ে ধানের ক্ষেত যেন পুকুরের শোভাকে আরো সৌন্দর্যমন্ডিত করে তোলে। চাষীরা কাজের ফাঁকে একটু বিশ্রাম নিতে যেন দিঘি পাড়েই বসে শরীরটা জুড়িয়ে নেয়। অনেকের কন্ঠে ভেষে আসে ও কি গাড়িয়াল ভাই আর কতো কাল রইব পন্থের দিকে চাইয়া রে, এত বেলা হয় ভাবিজান পান্তা নাই মোর ঘরেরে… এমনই কতো গান। শুনলেই মনে গ্রাম বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য।
লোকমুখে শোনা, এলাকায় কারো বাড়িতে অনুষ্ঠান হলে দিঘির কাছে এসে জিনিস পত্র চাইতো। সন্ধ্যায় এসে চাইলে পরের দিন সকালে জিনিসগুলো পুকুরপাড়ে পাওয়া যেত। কাপড়-চোপড়ও পাওযা যেত এখানে। তবে সময়মতো জিনিসগুলো ফেরৎ দিতে হতো। এজন্য কোন মানত মানতে হতো না। কোন জিনিস কম ফেরৎ দিলে তা গ্রহণ করতো না। একবার এক লোক চাওয়া জিনিসগুলো ফেরৎ দেওয়ার সময় কম দিয়েছিল তখন থেকে আর কোন জিনিস চেয়ে পাওয়া যায়না। জিনিসপত্র অপরিস্কার ফেরৎ দিলে তার ক্ষতি হতো। পরিস্কার করে না দিলে ক্ষতি হওয়ার কথা স্বপ্নে জানিয়ে দেওয়া হতো। উপজেলায় কোন শিশু পার্ক বা বিনোদন কেন্দ্র না থাকায় এটিকে বিনোদন কেন্দ্র করলে রাজস্ব আয় বাড়বে। পড়ালেখার পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীরা এখানে এসে বিনোদন সময় কাটাতে পারলে মেধা বিকাশ ঘটবে। বিনোদন কেন্দ্রে সময় কাটাতে পারলে উঠতি বয়সের ছেলে মেয়েরা বিপথে যাওয়া থেকে বিরত থাকবে। শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদের উপজেলা সভাপতি জাকারিয়া হাবিব ডন’র সাথে কথা হলে রামরাই দিঘিকে সরকারি পর্যটন কেন্দ্র নির্মানের জোর দাবি জানান তিনি। উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি নওরোজ কাওসার কানন বলেন, প্রাচীন ঐতিহ্যকে আরো সৌন্দর্য মন্ডিত করতে ও রাজস্ব আয় বাড়াতে এখানে সরকারি পর্যটন কেন্দ্র করা জরুরী। এতে এলাকার উন্নয়ন সহ কর্মসংস্থান বাড়বে।
ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুব আলম বলেন, রামরাই দিঘি থেকে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টাকা সরকারি রাজস্ব আয় হয়। রাজস্ব আয় আরো বাড়াতে এখানে সরকারি পর্যটন কেন্দ্র করার জন্য কয়েক বছর আগেই ফাইল পত্র প্রধানমন্ত্রীর নিকট পাঠানো হয়েছে। এটিকে সরকারি পর্যটন কেন্দ্র করার জন্য জরুরীভাবে প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *