কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
কুড়িগ্রামের রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলায় কাবিটা (বিশেষ) কর্মসূচির (গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার) আওতায় প্রায় সোয়া কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। অস্তিত্বহীন হওয়ায় প্রকল্পগুলো পরিবর্তন করে প্রয়োজনীয় স্থানে দেওয়ার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। উল্টো উপজেলা প্রশাসনকে চাপ দিচ্ছেন প্রতিমন্ত্রী।
রাজীবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নবীরুল ইসলাম ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) জানান, এমপির ভাগে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর থেকে প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় ৯টি প্রকল্পে ১৯ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়। অপ্রয়োজনীয় এবং বরাদ্দ টাকা ব্যয়ের সুযোগ না থাকায় প্রকল্পগুলো অস্তিত্বহীন। তাঁরা প্রয়োজনীয় স্থানে প্রকল্প দেওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু এমপি তা পরিবর্তন না করে আগেরগুলো অনুমোদনের জন্য চাপ দেন। এ কারণে দ্বিতীয় দফার প্রকল্প তালিকা অনুমোদনে বিলম্ব হচ্ছে।
রৌমারী ও রাজীবপুর পিআইওর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে কাবিটা বিশেষ কর্মসূচির আওতায় তিন উপজেলায় এমপির ভাগে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় এক কোটি ২৪ লাখ টাকার ওপরে বরাদ্দ দেয়। এর মধ্যে রাজীবপুরে ৯ প্রকল্পে ১৯ লাখ এবং রৌমারী উপজেলার ৩৯ প্রকল্পে প্রায় ৮৬ লাখ টাকা। এসব প্রকল্প চলতি বছরের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন শেষ করার কথা, কিন্তু সময় রয়েছে মাত্র দুই মাস। এখনো প্রথম দফার কাজ শুরু হয়নি। এর ওপর দ্বিতীয় দফায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এলাকা ঘুরে জানা গেছে, রাজীবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে গর্তে মাটি ভরাট নামের একটি প্রকল্প দেখানো হয়েছে। অথচ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে কোনো গর্ত নেই। হাসপাতালের সামনে দেখা গেছে কয়েকটি চায়ের দোকান, ফার্মেসি ও টেকনিক্যাল কলেজ ভবন। একইভাবে রাজীবপুর শিশু পার্কের সামনের রাস্তা সংস্কারের নামে দুই লাখ টাকা বরাদ্দ। অথচ শিশু পার্কের দুই পাশেই পাকা সড়ক, মাটি ফেলার কোনো দরকার নেই।
রাজীবপুর উপজেলাসংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ ও রাজীবপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মাটি ভরাটের জন্য চার লাখ টাকা বরাদ্দ, যার কোনো প্রয়োজন নেই। অন্যদিকে সুনমান মেম্বারের বাড়ি থেকে উত্তর দিকে ইউনুসের বাড়ি পর্যন্ত এবং আয়নাল হকের বাড়ি থেকে উত্তর দিকে ইউনুসের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারে টিআর প্রকল্পে কাজ করা হয়েছে। অথচ একই সড়কের সংস্কারে চার লাখ টাকার কাবিটা প্রকল্প দেখানো হয়েছে।
রৌমারী উপজেলার কাবিটা কর্মসূচির আওতায় কর্তিমারি জামে মসজিদের সামনে মাটি ভরাটের জন্য দুই লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এখানেও মাটি ফেলার কোনো অবস্থা নেই। সবুজপাড়া জুলেখা মসজিদের মাঠে মাটি ভরাটের নামে দুই লাখ টাকা এবং একটি গোয়েন্দা কার্যালয়ের সামনে গর্তে মাটি ভরাটে দুই লাখ টাকা বরাদ্দ। কিন্তু বাস্তবে কোনো মাঠ ও গর্ত নেই। একইভাবে মার্কাস মসজিদের সামনে মাটি ভরাটে দুই লাখ টাকা বরাদ্দ। অথচ মসজিদের সামনে গর্ত বা মাঠ কিছুই নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুুক একজন চেয়ারম্যান বলেন, রৌমারী উপজেলায় অনেক গ্রামীণ রাস্তাঘাট ভাঙা, যেখানে স্থানীয়রা বাঁশের সাঁকো তৈরি করে চরম দুর্ভোগের মধ্যে যাতায়াত করছে। এ ধরনের বাঁশের সেতু রয়েছে এক শর ওপরে। সেখানে কাবিটা প্রকল্প না দিয়ে যেখানে প্রয়োজন নেই, সেখানে দেওয়া হয়েছে। প্রতিবছর এভাবে প্রকল্পের নামে সরকারি লাখ লাখ টাকা লুটপাট করা হয়।
রৌমারীর পিআইও আজিজুর রহমান বলেন, ‘কাবিটা বিশেষ বরাদ্দের প্রথম দফার একটা বিল দিয়েছি। কাজ না করলে কোনো বিল দেওয়া হবে না। দ্বিতীয় দফার প্রকল্পগুলোর এখনো অনুমোদন হয়নি।’
রাজীবপুর পিআইও সৌভ্রাত দাস বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। এসে সংসদ সদস্যের ভাগের কাবিটা দ্বিতীয় দফার প্রকল্প হাতে পেয়েছি। পাঁচটি প্রকল্পে ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যার সবই অপ্রয়োজনীয়। এ কারণে প্রকল্পের তালিকা পরিবর্তন করার জন্য অনুরোধ করতে গিয়ে চাপের মুখে পড়েছি। একই অবস্থা প্রথম দফার প্রকল্পেও। কাজ না করলে আমি কোনো বিলে স্বাক্ষর করব না।’
রাজীবপুরের ইউএনও নবীরুল ইসলাম বলেন, ‘কাবিটা বিশেষ প্রকল্পগুলো অপ্রয়োজনীয়। এ নিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছি।’
কুড়িগ্রাম-৪ আসনের এমপি এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, ‘কাবিটা কর্মসূচিতে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প দেওয়া হয়েছে—এমন বিষয় আমার জানা নেই। রাজীবপুর পিআইও কয়েকটি প্রকল্প বিষয়ে আমাকে জানিয়েছেন। মূলত গ্রামীণ পর্যায়ের সমস্যাগুলোর তালিকা দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ইউপি মেম্বার-চেয়ারম্যান। এ ছাড়া এলাকাবাসী আমার কাছে এসে সমস্যার কথা বললে আমি তা সমাধানের জন্য টিআর, কাবিটা কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করে দিই। সত্যিই যদি অপ্রয়োজনীয় স্থানে বরাদ্দ দেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে সংশোধন করা হবে।’