লালমনিরহাট প্রতিনিধি॥
লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার চলবলা ইউনিয়নের বান্দেরকুড়া গ্রামে আনন্দ মোহন (৪৮)নামের এক সংখ্যা লঘু ব্যাক্তিকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে থানায় এজাহার দায়ের করা হয়েছে।নিহতের ভগ্নিপতি বুলবুল চৌধুরী বাদী হয়ে ওই এলাকার আঃ মতিনসহ ৫জনকে আসামী করে গত৫/৬/১৭ ইংতারিখে এ মামলা দায়ের করেন।কিন্ত এজাহার দায়েরের দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পরেও থানা পুলিশ এরিপোর্ট লেখা পযর্ন্ত কোন আসামীকে গ্রেফতার করেনি।উপরোন্ত একটি মহল মামলাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য পায়তারা করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংখ্যা লঘু সম্প্রদায় ব্যাক্তিকে হত্যার ঘটনায় ওই এলাকায় ব্যাপক তোলপার অবস্থার সৃষ্টির পাশাপাশি হত্যাকান্ডের সুষ্ট বিচারের দাবীতে সারা জেলায় পোষ্টার লাগিয়ে এর প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছেন। থানা পুলিশ বলছে,ময়না তদন্ত রির্পোট না পাওয়া পর্যন্ত কোন কিছু বলা যাচ্ছে না এবংবিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।
এজাহার ও নিহতের পারিবারিক সুত্রে জানা গেছে, কালীগঞ্জ উপজেলার চলবলা ইউনিয়নের বান্দেরকুড়া গ্রামের মৃত দক্ষিনা বর্ম্মনের পুত্র আনন্দ মোহন বর্ম্মন নিজ বাড়ীতে একাকি বসবাস করত। জীবিকার প্রয়োজনে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মরত রয়েছে। তার একাকি থাকার সুযোগে আনন্দ’র নামীয় জমি ও বাড়ি বিক্রি করে ভারতে চলে যাওয়ার জন্য ওই এলাকার একটি প্রভাবশালী চক্র তাকে চাপ সৃষ্টি করে আসছিল দীর্ঘদিন থেকে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে ওই চক্রটি আনন্দ মোহনকে তার জমি বন্ধক রেখে ওই টাকা দিয়ে প্রভাবশালী চক্রটির সাথে ব্যবসা করে ভাল লাভের প্রতিশ্রুতিসহ তার উপর চাপ সৃষ্টি অব্যাহত রাখার পাশাপাশি তারা তাকে বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি দেয় বলে একটি বিশ^স্ত সুত্র জানায়। সুত্রটি আরও জানায়, উক্ত আনন্দ মোহন সংখ্যা লঘু হওয়ায় ওই প্রভাবশালীদের ভয়ে সে ওই গ্রামের আঃ হামিদ, জাহাঙ্গীর আলম, শহিদুল ইসলাম ও নজরুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন লোকজনের কাছে কিছু জমি বন্ধক রেখে মোটা অংকের টাকা ওই চক্রের কাছে প্রদান করে। ওই প্রভাবশালী চক্রটি তার টাকা হাতিয়ে নেয়ার পর আনন্দকে ব্যবসার অংশীদারিত্ব দেয়া তো দুরের কথা তার সাথে প্রতারনা করতে শুরু করে।কিন্ত সে তার ব্যবসার লভ্যাংশের টাকা দাবী করলে তাদের সাথে দ্বন্দ শুরু হয়। এক পর্যায়ে সে তার টাকা ফেরত চাইলে তাদের মধ্যে দ্বন্দ আরও চরম আকার ধারন করে।এরই মাঝে ওই চক্রটি আনন্দকে তার জমি ও বসতভিটা তাদের কাছে বিক্রি করে দিয়ে ভারতে চলে যেতে চাপ সৃষ্টিসহ বিভিন্ন ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করে বলে ওই সুত্রটি জানায়। সম্প্রতি ওই গ্রামের আঃ মতিনের পুত্র সেলিম মোহনের ৮/১০টি সুপারি গাছ ক্রয়ের কথা বলে উপড়ে নিয়ে আসে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যাক্তি জানায়, সুপারি গাছ ও জমি বন্ধকের টাকা ফেরত দেয়ার কথা বলে গত ২০/৫/১৭ইং তারিখ রাতে আনন্দকে ডেকে নিয়ে যায় তারা। রাতে তাদের বাড়িতে খাওয়া দাওয়া শেষে মোহনকে তার জমি ও বসতবাড়ি তাদের কাছে বিক্রি করে দেয়ার জন্য নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করতে বললে এতে সে অসম্মতি জানালে সেলিম গং তাকে এলোপাথাড়ি মারপিট শুরু করেলে সে দৌড়ে পালাতে চেষ্টা করলে খুনিরা তাকে আটক করে এবং উক্ত আনন্দ যাতে আর দৌড়াতে না পারে এজন্য তারা তাকে উলঙ্গ করে পুনরায় মারপিট করলে তার মৃত্যু হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে এ হত্যাকান্ডটিকে আতাœহত্যা হিসেবে চালিয়ে দেয়ার জন্য তার হত্যকারীরা মৃত জয়নালের গোয়ালঘরে মৃতের গলায় রশি পেছিয়ে ঘরের ধরনার সাথে ঝুলিয়ে রাখে বলে প্রত্যক্ষদর্শিরা জানায়।খবর পেয়ে কালিগঞ্জ থানা পুলিশ পরদিন ২১/৫/১৭ ইং তারিখে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্ত সম্পন্ন করে। পুলিশের সুরত হাল রিপোর্টে জানা যায়, লাশের শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এলাকাবাসী ও সচেতন মহলের প্রশ্ন? আনন্দ মোহন নিজ বাড়িতে আতœহত্যা না করে বাড়ি থেকে ৩ কিঃমিটার দুরে অন্যের গোয়াল ঘরে উলঙ্গ অবস্থায় আতœহত্যা করবে কেন? এলাকাবাসী এই হত্যাকান্ডের সুষ্টু তদন্ত দাবী করেছেন। এ ব্যাপারে আনন্দ মোহনের ভগ্নিপতি মিশন মোড়ের ব্যবসায়ী মোঃ গোলাম ফারুক জানান,উক্ত মোহন জমি বিক্রি না করায় ওই প্রভাবশালী চক্রটি আমার শ্যালককে পিটিয়ে হত্যা করেছে।এই হত্যাকান্ডটি আতœহত্যা হিসেবে চালিয়ে দেয়ার জন্য গলায় রশি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখে হত্যাকারীরা। এ ব্যাপারে মামলার কালীগঞ্জ থানার ওসি মকবুল হোসেন বলেন, মামলাটি তদন্ত চলছে। নিহতের স্বজনরা সাংবাদিকদের অভিযোগ করে বলেছেন,সদর হাসপাতালের আর এমও ডাক্তার আজমল হক মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে উল্টাপাল্টা ময়না তদন্ত রির্পোট দিয়েছে।গত ৫/৭/১৭ ইং তারিখে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষ্যে বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকগন জানতে চাইলে হাসপাতালের তত্বাবধায়ক কোন সন্তোষজনক জবাব দিতে পানেনি।তবে পুলিশ সুপার এস.এম রশিদুল হক ওই হত্যাকান্ডটির বিষয়ে সঠিক ব্যবস্থা নেয়ার আশাস দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *