লালমনিরহপ্রতিনিধি॥
১২৪১.৪৬ বর্গ কিলোমিটারের লম্বালম্বি আকৃতির সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটকে ঘিরে ৫টি উপজেলা, ২টি পৌরসভা ও ৪৫টি ইউনিয়ন। এ জেলায় প্রায় ১৮লাখ মানুষের বসবাস। এরই সাথে যোগ হয়েছে সদ্য বিলুপ্ত ৫৯টি ছিটমহলের আরো ২০হাজার নাগরিক। এসব মানুষের নিরাপত্তা দিচ্ছে জেলা পুলিশ লাইন্স, ৫ থানা, ১টি পুলিশ ফাঁড়ি ও ১টি হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে ৬১০জন পুলিশ সদস্য রয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। জেলার তিন নির্বাচনী আসনে একজন প্রতিমন্ত্রী, ৩জন সংসদ সদস্য, ১জন সংরক্ষিত নারী সাংসদ। এছাড়াও বুড়িমারীস্থলবন্দরসহ অবাধে ভারত, ভূটান, নেপাল ও ভিভিআইপিদের আনাগোনা দায়িত্ব পালনে হিমশিম খেতে হচ্ছে জেলা পুলিশ বিভাগকে।
এসব সমস্যা মাথায় নিয়ে লালমনিরহাট জেলাকে মাদক নিয়ন্ত্রণের চ্যালেঞ্জ নিয়ে ২০১৬ সালের ১৯ জুলাই পুলিশ সুপার হিসেবে যোগ দেন এস এম রশিদুল হক। তিনি যোগদানের পর অভিযানে জেলায় কর্মরত পুলিশ সদস্যদের তৎপরতায় প্রতিনিয়ত মাদকসহ ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করা হয়। একপর্যায়ে পুলিশি তৎপরতায় দেড় সহ¯্রাধিক মাদক ব্যবসায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে মাদক ছেড়ে দিয়ে নতুন জীবনযাপনের শপথ নেন। এমনকি অর্ধশতাধিক মাদক ব্যবসায়ী এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান এবং মাদক ব্যবসা ছেড়ে শ্রমিক পেশায় যোগ দেন। শুধু অভিযানেই সীমাবদ্ধ ছিলো না। মাদক নির্মূলে প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে মাদকবিরোধী সভা সেমিনারও করেছেন লালমনিরহাট পুলিশ সুপার।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত সেপ্টেম্বর ২০১৭ইং মাসে লালমনিরহাট সদর থানা, আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা, পাটগ্রাম থানা ও ডিবি পুলিশের হাতে ধৃত ১১নারী মাদক ব্যবসায়ীসহ প্রায় ১৩০জনকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে। এসময় আটককৃতদের নিকট থেকে প্রায় ১ হাজার ২ শত ৭৯ বোতল ফেনসিডিল, ৩ শত ১৪ কেজি গাঁজা, ১ হাজার ২ শত ৪ পুড়িয়া হিরোইন, ৪ শত ৪৮ পিস ইয়াবাসহ দেশী-বিদেশী মদ, জুয়া খেলা, ইভটিজিং ও সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামীকে গ্রেফতার করেছে।
চোরাচালান ও মাদকদ্রব্য নির্মূলে গুরুত্ব সহকারে দায়িত্ব পালন করায় লালমনিরহাট জেলা পুলিশ ‘গ গ্রুপে’ দেশ সেরা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক শনিবার (২৮ জানুয়ারি-২০১৭) এ উপলক্ষে লালমনিরহাট পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হকের হাতে ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেন।
উল্লেখ্য যে, ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ১ হাজার ৭শত ৪০টি মামলা দায়ের, নিয়মিত মামলায় আসামী গ্রেফতার ১ হাজার ৭শত ৩৬ জন, মাদক মামলা ৬শত ৬১ টি, মাদক মামলায় আসামী গ্রেফতার ৭শত ৩১ জন। এছাড়াও ২ কোটি ১৯ লক্ষ ৪২ হাজার ৮শত ৬৫ টাকার ভারতীয় ফেনসিডিল, গাঁজা, হিরোইন, ইয়াবা, বিদেশি মদ ও বোতল দেশি মদ উদ্ধার।
লমনিরহাট পুলিশ সুপার এস.এম রশিদুল হক জানান, এ অর্জন লালমনিরহাটবাসীর ও লালমনিরহাট জেলা পুলিশের প্রতিটির সদস্যের। এসময় জেলাকে মাদকমুক্ত করতে সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।