লালমনিরহা প্রতিনিধি :
লালমনিরহাটে শীর্ষ দুর্নীতিবাজ উপজেলা প্রকৌশলী ওবায়দুর রহমানের বিরুদ্ধে অনিমাতান্তিক ভাবে দরপত্র দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। তিনি সরকারি নিয়ম নিতিকে তোয়াক্কা না করে নিজের ইচ্ছায় দরপত্র ভাগ বাটোয়ারা করে দিয়েছেন তার মনপুত ঠিকাদারদের মাঝে।

নাগেশ্বরীর ঠিকাদার ও সাংবাদিক খলিলুর রহমান বলেন, লালমনিরহাট উপজেলা প্রকৌশলী ওবায়দুর রহমান কারসাজির মাধ্যমে সরকারি বিধি উপেক্ষা করে সপ্তাহখানেক আগে লালমনিরহাটে ই-জিপির (ইলেকট্রনিক গর্ভমেন্ট প্রকিউরমেন্ট) বদলে ‘ম্যানুয়েল’ পদ্ধতিতে প্রায় সাড়ে ১৩ কোটি টাকার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) দরপত্র কার্যক্রমের রেশ না কাটতেই আরও একটি কারসাজির ঘটনা ঘটেছে ওই দপ্তটির।

এবার ই-জিপিতে দরপত্র আহবান করা হলেও লটারি অনুষ্ঠিত হয়েছে ম্যানুয়েল বা সনাতন পদ্ধতিতে। ওই পদ্ধতিতে প্রায় আড়াই কোটি টাকার দুটি দরপত্রের বিপরীতে লটারি করে কাজগুলো ভাগ বাটোয়ারা করা হয়েছে। এলজিইডির সদর উপজেলা প্রকৌশলী দরপত্র দুটি আহবান করেছিলেন।

গত মঙ্গলবার দুপুরের দিকে উপজেলা পরিষদ হলরুমে ওই লটারি অনুষ্ঠিত হয়। সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী ‘বিধি মোতাবেক লটারির’ দাবি করলেও তার উর্দ্ধতন কর্মকর্তা এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিউ) এটিকে ‘অনিয়ম’ হিসাবে ব্যাখা করেছেন।

অভিযোগ উঠেছে, ওই দরপত্রে যাতে বেশি সংখ্যক ঠিকাদার অংশগ্রহণ করতে না পারে এবং লালমনিরহাট শহর ও সদর উপজেলার হাতে গনা কয়েকজন ঠিকাদার যাতে কাজগুলো পায় সেজন্য দরপত্র আহবান থেকে লটারি পর্যন্ত নানা কৌশল গ্রহণ করা হয়েছিল।

সদর উপজেলা এলজিইডি সূত্র জানায়, গত ৪ মে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় লালমনিরহাট সদর উপজেলায় কালভার্ট, এচই বিবি রাস্তা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তোড়ণ নির্মাণসহ ২২টি বিভিন্ন কাজের জন্য ই-জিপিতে দরপত্র আহবান করেন উপজেলা প্রকৌশলী শাহ মো. ওবায়দুর রহমান। এসব কাজের প্রাক্কালিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৯ লাখ ৬৯ হাজার টাকা।

অপরদিকে একই দিন অপর ২৯টি কাজের জন্য পৃথক একটি দরপত্র আহবান করা হয় যার প্রাক্কালিত ব্যয় এক কোটি ৩২ লাখ টাকা। দরপত্র কমিটির আহবায়ক হচ্ছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানসহ উপজেলা প্রকৌশলী ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই দরপত্র দুটির বিজ্ঞপ্তি যথারীতি পত্রিকায় প্রকাশ করা হলেও ই-জিপি আইডি কৌশলে প্রকাশ করা হয়নি। দরপত্র দুটি খোলার জন্য গত ২০ মে নির্ধারিত থাকলেও তা খোলা হয়েছে গত মঙ্গলবার।

সবচেয়ে বড় অনিয়ম করা হয়েছে, বিধি মোতাবেক ই-জিপিতে অংশ নেওয়া ঠিকাদারদের নিয়ে অনলাইনেই লটারি অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও তা করা হয়েছে ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে। যদিও ২০১২ সালে জারি করা এক পরিপত্রে বলা হয়েছে, ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে লটারির কোনো সুযোগ নেই।

এলজিইডি ও জেলার একাধিক ঠিকাদারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জেলার অন্যান্য উপজেলা এবং জেলার বাইরের ঠিকাদাররা যাতে দরপত্র দুটিতে অংশ নিতে না পারে সেজন্য প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে কাজের আইডি প্রকাশই করা হয়নি। ফলে ঠিকাদারদের একটি অংশ ছাড়া অন্যরা এতে অংশ নিতে পারেনি। আর ওই অংশটিই উপজেলা প্রকৌশলীর সাথে যোগসাজশ করে এ কাজ করার পাশাপাশি নীতিমালা লংঘন করে ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে লোক দেখানো লটারি সম্পন্ন করে কাজগুলো ভাগাভাগি করে নিয়েছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলা পরিষদ হলরুমে আয়োজন করা হয়েছে দরপত্র দুটির লটারি। এজন্য রাখা হয়েছে খাঁচা সাদৃশ্য লটারি বক্স। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান সুজন, ইউএনও উত্তম কুমার রায়, পৌর মেয়র রেজাউল করিম স্বপন, উপজেলা প্রকৌশলী শাহ মো. ওবায়দুর রহমানসহ বেশ কয়েজন ঠিকাদার।
দুপুর ১২টার দিকে লটারি শুরু হওয়ার আগে জুয়েল শেখ নামের একজন ঠিকাদার ম্যানুয়েল পদ্ধতির লটারির বিরোধীতা করলেও সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি আমলে না নিয়ে ইউএনও বক্স খুলে লটারির উদ্বোধন করেন।

উপজেলা প্রকৌশলী শাহ মো. ওবায়দুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, বিধি অনুযায়ী ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে লটারি করা হয়েছে।
সদর উপজেলার ইউএনও বলেন, ‘সার্ভারের সমস্যার কারণে সকলের সম্মতিতে লটারি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

তবে এলজিইডির লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফ আলী খান বলেছেন, ই-জিপির মাধ্যমে আহবানকৃত টেন্ডারে ম্যানুয়েলে লটারির করার কোন সুযোগ নেই। উল্লেখ্য, প্রকৌশলী ওবায়দুুর রহমান যোগদানের পর থেকে উক্ত অফিসটিকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিনত করেছে। তিনি নিয়মিত অফিস না করার পাশাপাশি জনগন, সরকারি কর্মকর্তাসহ সাংবাদিকদের মোবাইল রিসিভ না করার অভিযোগ উঠেছে। পরে সংখ্যায় উক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আরো বিস্তারিত দুর্নীতির খবর প্রকাশ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়ুন