হারুন উর রশিদ সোহেল রংপুর॥
শিক্ষার্থী আছে, নিয়মিত পাঠ্যদান হচ্ছে, ছাত্র-ছাত্রীর উপবৃত্তির ব্যবস্থা সবই আছে। সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে বই প্রদান করা হয়। শুধু নেই শিক্ষকদের বেতন-ভাতা। এ অবস্থায় চলছে রংপুরের স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসাগুলোসহ সারাদেশে প্রায় ৭ হাজারের মতো স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা। এসব মাদ্রাসায় দীর্ঘ ৩৪ বছর চাকরি করেও কেউ এক টাকা বেতন পাননি। পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। বিভিন্ন সরকার বেতনের আশ্বাস দিলেও বাস্তবায়ন করেনি কেউ।
এব্যাপারে বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষক সমিতির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ও রংপুর জেলা সভাপতি মাওলানা নুরুল আবছার দুলাল জানান, বর্তমান সরকারকে শিক্ষাবান্ধব উল্লেখ করে বলেন, সরকার যেন সুশিক্ষিত জাতি গড়ার কারিগর এসব শিক্ষকের দুর্দশার কথা ভেবে অবিলম্বে জাতীয় বেতন স্কেল ঘোষণা করে।তিনি আরো বলেন,একই সঙ্গে একই নিয়মনীতি পরিপত্রে গড়ে ওঠা বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন স্কেল ও সরকারী করণ করা হলেও ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকদের ভাগ্যে তা জোটেনি। শুধুমাত্র সারাদেশের ১৫১৯টি মাদাসার ৬০৭৬ জন শিক্ষক নামে মাত্র মাসিক ১২০০ টাকা করে বেতন পেয়েছেন।তবুও জাতীয় স্কেলে বেতন পাবেন এমন আশায় তারা শিক্ষার আলো বিলিয়ে যাচ্ছেন। আমরা বেতন বৈষম্যের শিকার হয়েছি। তিনি দ্রুত সরকারী করণসহ জাতীয় স্কেলে বেতন ভাতার প্রদানের দাবী জানান।
জানা যায়, রংপুর জেলায় সরকারী অনুদানভুক্ত ৩২টিসহ ৩৯৬টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা রয়েছে। এ সব মাদ্রাসায় শিক্ষক রয়েছেন ১৫৮৪ জন। ছাত্র-ছাত্রী ৪০ হাজারের মতো। সরকার থেকে শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই ও উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। এখানকার শিক্ষার্থীরা ভাল ফলও করছে। এতো কিছুর পরও সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা বেতন-ভাতা থেকে বঞ্চিত। দীর্ঘদিন চাকরি করার পর অনেকে মারা গেছেন। কেউ বিনাবেতনেই নিয়েছেন অবসর।বেতন-ভাতার পাশাপাশি জাতীয় স্কেলের জন্য আন্দোলন শুরু করেছেন এ শিক্ষকরা।
রংপুরের মিঠাপুকুরের রানীপুকুর স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মাওলানা সাহেবুল ইসলাম মন্ডল মজনু জানান, ‘চারজনের সংসার। প্রায় ৩০ বছর চাকরি করছি। সরকারীভাবে মাসে ১২০০ টাকা পাই। তাও আবার তিন মাস পর পর। তবে ১ বছর ধরে সে বেতনও বন্ধ রয়েছে।
রংপুর সদরের কেরানীরহাট শরিফিয়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম জানান, আমারা শিক্ষিত জাতি গড়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকার পালন করছি। অথচ আমরা দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত ও অবহেলিত। কোন সরকারই আমাদের দিকে তাকায়নি। খেয়ে না খেয়ে ছাত্রছাত্রীদের পাঠ্যদান করাচ্ছি। একই অবস্থার কথা জানান পীরগাছার শিক্ষক সৈয়দ আলী, শহিদুল ইসলাম, সদরের একরামুল, মিঠাপুকুরের আবু সালিম,মমিন জেহাদি,শাহাদৎ হোসেন, পীরগঞ্জের ফজলুল হকসহ প্রায় শতাধিক শিক্ষক। অনেকেই আরো জানান, শিক্ষকতার পাশাপাশি হালচাষ, রিকসা চালিয়ে, দোকান, ইমামতি, প্রাইভেটসহ অন্যপেশার মাধ্যমে কোনো মতে জীবনযাপন করছি।