মো: নাজমুল হুদা মানিক ॥
ময়মনসিংহের রাজনীতিতে বর্তমান সমসাময়িক সময়ে সর্বাধিক আলোচিত কর্মীবান্ধব নেতার নাম জননেতা এডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে অনুপ্রানিত আজীবন বাঙ্গালী ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক এডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল ২০১৮ সালে গঠিত ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক হিসাবে নির্বাচিত হন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের লড়াই সংগ্রামের পুরস্কার হিসাবে আওয়ামীলীগের সভানেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক পদ প্রদান করেন। ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামীলীগের কমিটি গঠিত হওয়ার পর মহান স্বাধীনতা দিবস, মহান বিজয় দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২১ শে ফেব্রুয়ারী, ১৫ই আগষ্ট, ২১ শে আগষ্ট সহ বিভিন্ন দিবস, আওয়ামীলীগের দলীয় সকল কর্মসুচী, পহেলা বৈশাখ, নবান্ন উৎসব, দলীয় নেতাকর্মীদের জন্মদিন, মৃত্যুদিন, কুলখানী, বিয়ে, শ্রদ্ধ সহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পালনে অগ্রনী ভুমিকা পালন করেছেন। সারাদেশের তুলনায় রাজনৈতিক কর্মসুচী ও বিভিন্ন দিবস পালনে ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামীলীগের ভুমিকা সর্বশীর্ষে। ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পুর্বেও জননেতা এডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল আওয়ামীলীগের রাজনীতিকে চাঙ্গা রাখতে সাবেক ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে মতবিনিময় সভা, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গবন্ধু শিশু একাডেমী সহ অর্ধশত সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের সুসংগঠিত করার প্রানপন প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন। রাজনৈতিক ময়দান, সামাজিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ও চেতনা, জাতির জনকের পরিবার, জননেত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কর্মকান্ড, বর্তমান সরকারের উন্নয়ন জনগনের মাঝে তুলে ধরতে সদাসর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রাখেন তিনি। এমনকি মসজিদ, মন্ধির, মাদরাসা, ইসলামিক ধর্মসভায় উপস্থিত হয়েও সকল ধর্মের প্রতি জাতির জনক ও জননেত্রী শেখ হাসিনার অবদানের কথা তুলে ধরেন। আগামীদিনে লড়াই সংগ্রাম মোকাবেলা ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় নেতাকর্মীদের সুসংগঠিত করতে জননেতা এডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুলকে ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামীলীগের গুরুত্বপুর্ন পদে বিশেষ ভাবে প্রয়োজন।
গফরগাঁও উপজেলার নিগুয়ারী ইউনিয়নের সাধৃয়া গ্রামে ১৯৫৭ সালে মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন তিনি। বর্তমানে তিনি ময়মনসিংহ নগরীর আঠারোবাড়ী বিল্ডিং এর বাসায় স্থায়ী ভাবে বসবাস করেন।
১৯৭২ সালে ময়মনসিংহে মৃত্যুঞ্জয় স্কুলে ৭ম শ্রেনীতে লেখাপড়া অবস্থায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগে যোগদান করেন। মৃত্যুঞ্জয় স্কুলে লেখাপড়া অবস্থায় তিনি ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক ও পরে সভাপতি নির্বাচিত হন। পরে তিনি ময়মনসিংহ শহর ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক ও সাধারন সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৪ সালে ১০ শ্রেনীতে পড়া অবস্থায় জেলা ছাত্রলীগের সদস্য পদ লাভ করেন। ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে ১৯৭৮ সালে জেলা ছাত্রলীগ গঠিত হলে তিনি জেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৮০ সালে জেলা ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক, ১৯৮৪ সালে জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক, ১৯৮৬ সালে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, ১৯৮৭ সালে আনন্দ মোহন বিম্ব বিদ্যালয় কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য, ১৯৮৭ সালে পুনরায় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের আর্ন্তজাতিক বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালে আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম জিল্লুর রহমানের কাছে ১১০ জন সাবেক ছাত্রনেতাসহ আনুষ্ঠানিক ভাবে আওয়ামীলীগে যোগদান করেন। ১৯৯২ সালে ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য, ১৯৯৬ সালে শ্রম বিষয়ক সম্পাদক, ২০০০ সালে প্রচার সম্পাদক, ২০০৬ সালে জেলা কৃষকলীগের আহবায়ক ও একই বছর জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে ৩রা নভেম্বর জেল হত্যার পর ৫ই নভেম্বর উচ্চ মাধ্যমিক ছাত্রদের নিয়ে ময়মনসিংহে বিশাল প্রতিবাদ মিছিলে নেতৃত্ব দেন। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা হত্যার ১ বছর পর ১৯৭৬ সালে ১ম আনন্দ মোহন কলেজ চত্বরে ১৫ই আগষ্টে মাইকে বঙ্গবন্ধুর ভাষন প্রচার করে অশুভ শক্তির মোকাবেলা করতে গিয়ে সংঘর্ষের পর গ্রেফতার হন। ১৯৭৬ সালে ১৫ই আগষ্টে ঢাকা থেকে পোষ্টার নিয়ে সর্ব প্রথম ময়মনসিংহ শহরে বঙ্গবন্ধুর পোষ্টার লাগান। সেই সময় ৩জন কর্মী গ্রেফতার হন। তবে তিনি পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। ১৯৭৮ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন স্থানে নৌকার নির্বাচনী কাজে অসম সাহসিকতার পরিচয় দেন। ১৯৮৯ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ছাত্রনেতা হিসাবে সাহসী ভুমিকা পালন করেন। ১৯৮২ সাল থেকে এরশাদ বিরোধী আন্দোলন আরম্ব করার সাথে সাথে সংগঠনের অভ্যন্তরে জননেত্রী শেখ হাসিনার সুষ্ঠ ধারার সাংগঠনিক অবস্থানকে সুদৃর করার লক্ষ্যে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে মুল ভুমিকা পালন করেন। ১৯৮৭ সালে অত্যন্ত প্রতিকুল অবস্থার মাঝে ছাত্রলীগকে সংগঠিত করে ময়মনসিংহ জেলায় সকল কলেজে উনার নেতৃত্বে ছাত্রলীগ জয় লাভ করে। এরশাদ বিরোধী চুড়ান্ত আন্দোলনে ময়মনসিংহে এরশাদের জনসভায় সরাসরি হামলা করে জনসভা ভুন্ডুল করে দেন। এরশাদের শশুরালয় সুন্দরী মহলে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। এরশাদ বিরোধী ঢাকার “সচিবালয় ঘেরাও” আন্দোলনে ময়মনসিংহ থেকে ছাত্র জনতার মিছিল নিয়ে সর্বপ্রথম ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামীলীগের অফিসে সকাল ৮ায় উপস্থিত হন। ১৯৯০ সনের ১০ নভেম্বর এডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুলের খুব কাছ নুর হোসেন মিছিলে শহীদ হন। সচিবালয়ের দেয়াল ভাঙ্গার ক্ষেত্রে অগ্রনী ভুমিকা পালন করেন। ১০ নভেম্বর সচিবালয় ঘেরাও আন্দোলন শেষে রেলযোগে ফিরে ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনে আগুন জ্বালিয়ে দেন। শহরে জাতীয় পার্টির নেতা পৌর চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয়ার কাজে নেতুত্ব দেন। ৯০ গনঅভ্যুথানে এডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুলের নেতৃত্বাধীন মিছিলে গুলি করলে ময়মনসিংহের রাজপথে ছাত্রনেতা ফিরোজ ও জাহাঙ্গীর শহীদ হন। তারপর লাশ নিয়ে ছাত্র জনতার মিছিল শহর দখল করে নিলে বি,ডি.আর এসে হামলা করে লাশ ছিনিয়ে নেয়। এ সময় সংঘর্ষে তিনি আহত হন এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব) মরহুম মুজিবুর রহমান ফকিরের ক্লিনিকে গোপনে চিকিৎসাধীন থাকেন। রাজনৈতিক জীবনে এডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল ১৯৭৮, ১৯৮২, ১৯৮৭, ১৯৮৮, ১৯৮৯, ১৯৯৩, ২০০৩ ও ২০০৫ সালে গ্রেফতার হয়ে দেশের বিভিন্ন কারাগারে দীর্ঘ সময় কারাবরন করেন। ১৯৭৫ সালের পর থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত তুখোর এই ছাত্রনেতার বিরুদ্ধে ছাত্রদল নেতা হত্যা মামলা, সন্ত্রাস দমন আইনে মামলাসহ প্রায় ২৮টি মামলা দায়ের করা হয়। পরে বিএনপি জামাত জোট সরকার মামলা দিয়ে ও সরকারী এজেন্ট দিয়ে শারিরিক নির্যাতন করে। ফ্রিডম পার্টি, জাতীয় পার্টি, বিএনপির সন্ত্রাসী, খুনী, গুন্ডা, অশ্রধারীরা এডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুলকে বারবার হত্যা করার চেষ্টা চালিয়ে ব্যার্থ হয়েছে। ক্লিনহার্ট অপারেশনের নামে খালেদা নিজামী জোট সরকারের আমলে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ক্লিনহার্ট অপারেশনের সময় নেত্রীর লোক বলে পরিচয় দেয়ায় শারিরীক নির্যাতন থেকে রক্ষা পান। কারাবরনের এক পর্যায়ে হাইকোর্টের আদেশে মুক্তি লাভ করেন। পুনরায় ময়মনসিংহের সিনেমা হলে বোমা হামলায় গ্রেফতারের চেষ্টা করা হয়। এ সময় অনেকদিন পালিয়ে বেরাতে হয়। জোট সরকারের আমলে এসপি কোহিনুর এর কারনে শান্তিপুর্ন ভাবে জীবন যাপন করতে পারননি। কিছু হলেই এডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুলের নামে মামলা দেয়া হয়েছে। গ্রেফতারের চেষ্টা করে না পেয়ে বড় ভাইকে রাস্তায় ফেলে শারিরিক ভাবে নির্যাতন করে। জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর গফরগাঁও এর বুকে জননেত্রী শেখ হাসিনার জনসভা আয়োজনে সাহসী ভুমিকা গ্রহন করেন ও নিপিড়িত নির্যাতিত কর্মীদের পাশে বলিষ্ঠ ভুমিকা পালন করেন। জোট সরকারের আমলে অত্যন্ত সংকটময় অবস্থায় গফরগাঁও দলীয় নেতাকর্মীদের মামলা মোকদ্দমা পরিচালনা করেন। গফরগাঁও এর বিভিন্ন স্থানে সরাসরি নেতাকর্মীদের পাশে থেকে তাদের সাহস যোগিয়েছেন ও নিরাপত্তা দিয়েছেন। সকল মামলা থেকে অব্যাহতি ও কারাগার থেকে মুক্তিলাভের ক্ষেত্রে আওয়ামীলীগের সভানেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রচেষ্টা অবধারিত ছিল। হত্যা মামলার জমিন লাভ, শ্রমিক আন্দোলনের কারনে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা হয়। যা ছিল দ্রুত বিচার মামলার সাজা হওয়ার মতো, নেত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপে স্কপের মাধ্যমে তা থেকে অভ্যহতি পান। এছাড়া অপরাপর সকল মামলা থেকে মুক্তির ক্ষেত্রে নেত্রীর ভুমিকা ছিল অগ্রগন্য। বারবার কারাবরনের সময় নেত্রীর খোজখবর ও কারাগারে অর্থ প্রেরন এবং আওয়ামীলীগের বিশাল সমাবেশ থেকে জননেত্রী শেখ হাসিনা সহ জাতীয় নেতৃবৃন্দ এডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল এর মুক্তি দাবী করেন। নেত্রীসহ জাতীয় নেতাদের মামলা প্রত্যাহারের দাবীর কারনে কারাগারে বসেও চেতনাকে শানিত করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়ুন