কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
কুড়িগ্রামে জেলা সমবায় অফিসের সাবেক ভারপ্রাপ্ত জেলা সমবায় কর্মকর্তা ও বর্তমানে রংপুর সমবায় অফিসের উপ সহকারী নিবন্ধক রোজিনা সুলতানা (৪৩) ও রংপুর সমবায় অফিসের অবসরপ্রাপ্ত সাবেক বিভাগীয় যুগ্ম নিবন্ধক আমির হামজার (৬১) বিরুদ্ধে প্রায় এক কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কুড়িগ্রাম জেলা কার্যালয় অফিসে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

বুধবার (১৭ আগস্ট) বিকালে দুদক রংপুর অফিসের সহকারী পরিচালক হোসেন শরীফ মামলাটি করেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৮ সালের ৭ মে রুপালী ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকার একটি চেক সোনালী ব্যাংক কুড়িগ্রাম শাখায় জেলা সমবায় অফিসের হিসেব নম্বরে জমা হয়। পরবর্তীকালে টাকা জমা হওয়ার চার মাস পর ওই বছরের ৯ সেপ্টেম্বর তারিখে আসামি রোজিনা সুলতানা বাহকের মাধ্যমে প্রথমে ২০ লক্ষ টাকা উত্তোলন করেন। পরবর্তী সময়ে আরও ৫টি চেকের মাধ্যমে ব্যাংকে এক হাজার টাকা অবশিষ্ট রেখে বাকি সমুদয় টাকা বাহক দিয়ে উত্তোলন করেন।

এরপর তিনি সোনালী ব্যাংক তার ব্যক্তিগত নামে পরিচালিত হিসেব নম্বরে ওই বছরের ৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর মাসে তিনটি চেকে ৭৪ লাখ ৯৯ হাজার টাকা জমা করেন। এরপর বাহক আরিফুল ইসলাম ও বাহক সাজেদুর রহমানের নামে উপরোক্ত টাকা বিভিন্ন চেকের মাধ্যমে তুলে নেন।

অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর রোজিনা সুলতানা গত ২০১৯ সালের ৮ জুলাই থেকে ১৭ জুলাই তারিখে ৮টি চেকের মাধ্যমে আত্মসাৎকৃত ৯৯লক্ষ ৯৯হাজার টাকা পুনরায় জেলা সমবায় অফিস নামীয় একাউন্টে সোনালী ব্যাংক শাখায় জমা প্রদান করেন।

অনুসন্ধানে রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা ও সাক্ষীগণের বক্তব্য পর্যালোচনা করে আরও জানা যায়, সাবেক জেলা সমবায় কর্মকর্তা রোজিনা সুলতানা ভুল পোস্টিংয়ের মাধ্যমে সরকারি জমাকৃত টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে নিজ হিসেব নম্বরে জমা প্রদান করেন। এই অসৎ কর্মকাণ্ডে রংপুর সমবায় অফিসের অবসরপ্রাপ্ত সাবেক বিভাগীয় যুগ্ম নিবন্ধক আমির হামজা তাকে উৎসাহ প্রদান এবং উক্ত টাকা হতে ২৫ লক্ষ টাকা প্রদানে বাধ্য করেছেন।

টাকা ফেরত চাইলে আমির হামজা মাত্র ২ লক্ষ টাকা ফেরত প্রদান করে বাকি ২৩ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেন। এ ঘটনায় এক কোটি টাকা অসৎ উপায়ে আত্মসাতের চেষ্টা এবং দুই লক্ষ টাকা ফেরত প্রদান না করে আত্মসাৎ করায় সাবেক দুই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪০৯/১০৯/৫১১ তৎসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় কুড়িগ্রাম দুদক কার্যালয়ে একটি মামলা রুজু করা হয়।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কুড়িগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, আসামি রোজিনা সুলতানা ও আমির হামজা পরস্পর যোগসাজশে ব্যাংক কর্তৃক ভুল পোস্টিংয়ের মাধ্যমে সরকারি হিসেবে জমাকৃত ১ (এক) কোটি টাকা ক্ষমতার অপব্যবহার পূর্বক আত্মসাতের উদ্দেশ্যে উত্তোলন ও ব্যবহার, বণ্টন করত: তা পুনরায় ফেরত প্রদান এবং আসামী আমির হামজা এক কোটি টাকার মধ্যে ২৩ লক্ষ টাকা ফেরত প্রদান না করে আত্মসাৎ করেন মর্মে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

তিনি আরও জানান, মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম কুড়িগ্রাম সমন্বিত দুদক কার্যালয় থেকে পরিচালিত হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *