ভুরুঙ্গামারী(কুড়িগ্রাম)প্রতিনিধি

বাংলাদেশের সর্বশেষ ২৪ ও ২৫ তম প্রস্তাবিত স্থলবন্দর দুইটি বাদ দিলে যে ২৩ টি স্থলবন্দর রয়েছে এর মধ্যে উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলায় অবস্থিত সোনাহাট স্থলবন্দর টি ২০১২ সালের ১৭ই নভেম্বর থেকে চালু হয়। যেখানে আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৪ সালের ২৮ এপ্রিল থেকে।

বন্দরটি চালু হবার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে নিয়মিতভাবে পাথর কয়লা সহ আমদানির ক্ষেত্রে ভারতের ২১ টি পণ্য ও ভুটানের সুতা এবং আলু ব্যতীত উৎপাদিত ও প্রক্রিয়াজাত সকল পণ্যই অনুমোদিত রয়েছে।

রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ পণ্য ব্যতীত সকল পণ্যই রপ্তানির জন্য অনুমোদিত বলে জানা গেছে। এর মধ্যে রপ্তানি হয়ে আসছে তুলা, পার্টিক্যাল বোর্ড, প্লাস্টিক জাত পণ্য, তৈরি পোশাক পণ্য যেমন টি-শার্ট, শাড়ি, লুঙ্গি ইত্যাদি।

আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত বিগত বছরগুলোতে বন্দরটি থেকে সরকার কত হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে এবং বন্দর কর্তৃপক্ষ, কাস্টম কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে কত কোটি টাকা অবৈধ পন্থায় ঘুষ কিংবা লুটপাট করেছে তার প্রকৃত তথ্য হয়তো সংশ্লিষ্ট দপ্তর কিংবা নিরপেক্ষ নির্ভরযোগ্য তদন্ত কমিশন গঠন করলে বের করা সম্ভব।

বন্দর কর্তৃপক্ষের তথা শুল্ক ও কাস্টমসের অভ্যন্তরীণ বিধি নিষেধ সম্বলিত বন্দর ব্যবস্থাপনায় যেখানে টু শব্দ করার কেউ নেই কিংবা যেখান থেকে কাক পক্ষীও কোন তথ্য সংগ্রহ করতে অপারগ সেই স্থানের প্রকৃত চিত্র কেবলমাত্র স্বচ্ছ, স্বাধীন সংস্থার পক্ষেই বের করা সম্ভব।

তবে শত শত কোটি টাকা কিংবা হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি এবং দুর্নীতির বিষয়টি উঠে আসে সরকার পতনের পর গত ১৭ই আগস্ট ছাত্ররা যখন বন্দরে বিভিন্ন সময়ে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চায়। তারই সূত্র ধরে বিভিন্ন সময়ে গোপন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী যতটুকু পাওয়া গেছে তা দেখলেই যে কারো চোখ কপালে উঠবে। ভেতরের আরো ভয়ংকর প্রকৃত চিত্র যদিও এর মাধ্যমে প্রকাশ করা সম্ভব নয়, তবে যতটুকু তথ্য পাওয়া গেছে তার ভিত্তিতেই এটি তৈরি করা হয়েছে।

সূত্রমতে জানা যায়, আমদানি করা পণ্যের ক্ষেত্রে প্রতি টন পাথর থেকে সরকারি রাজস্ব আয় হয় ৬৮৫ টাকা এবং কয়লার ক্ষেত্রে প্রতি টন কয়লার জন্য সরকারি রাজস্ব আয় প্রায় ৩৪০০ টাকা।
একটি ভারতীয় পাথর বাহী ট্রাকে পাথর আসে গড়পরতায় ৫৫ থেকে ৬৫ টন, কয়লা আসে গড়পড়তায় ২৫ থেকে ৩৫ টন। ক্ষেত্রবিশেষে বন্ধ, সরকারি ছুটি এবং অন্য কোন কারণ না থাকলে ভারত থেকে বাংলাদেশের বন্দরে প্রতিদিন এসব পাথর ও কয়লা বাহী গাড়ি আসে গড়পরতায় ৮০ থেকে ১২০ টি।

দীর্ঘদিন ধরে স্থলবন্দরে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয় গোপন সূত্রে বিভিন্ন ভাবে পাওয়া গেলেও কিংবা অনেকের কাছে সন্দেহজনক মনে হলেও এটি প্রকাশ্যে আসে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর। গত ১৭ই আগস্ট ছাত্র জনতার স্থলবন্দরে গিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের কারণে এসব সন্দেহ আরো প্রকট হয়। তারা স্থল বন্দরের ওজন পরিমাপক যন্ত্র যাকে “নাশিদা ডিজিটাল স্কেল ওয়েব ব্রিজ” বলা হয় এখানে গাড়ির ও মালের পরিমাপ এবং কাস্টমস কর্মকর্তাদের লিখিত সরকারের তালিকায় ওঠা পরিমাপ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে ছাত্ররা যখন কাস্টমস কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসা করলে তাদের বক্তব্য থেকে একটা বিষয়ে উঠে আসে আর তা হচ্ছে তারা জানতে পারেন উক্ত স্থল বন্দরের কাস্টমস কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ তাদের বন্দরে ওজন পরিমাপক যন্ত্রের মাধ্যমে (বাইরের স্কেল এর) পরিমাপ এবং তাদের সরকারি বহিতে উত্তোলিত পরিমাপের পার্থক্যের বিষয়ে এমন উত্তর দেন যে, “বাইরের ওয়ে ব্রিজের পরিমাপ এবং সরকারি কর্মকর্তাদের বহিতে লিখিত পরিমাপের পার্থক্যের অংশের রাজস্ব টি তারা অন্যভাবে সরকারের খাতায় জমা করেন”। কিন্তু এমন কোন পদ্ধতি সরকারী নিয়মে আছে বলে এখন পর্যন্ত জানা যায়নি।

বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হলে গোপন সূত্রে প্রাপ্ত খবরের ভিত্তিতে ভেতরের কিছু ভয়াবহ চিত্র উঠে আসে। যাতে দেখা যায় যে, তারা খাতায় যা উল্লেখ করেছে তা বাইরের নাশিদা ওয়ে ব্রিজ স্কেলের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তির হাতে লেখা চিরকুটের সাথে মিল নেই , এটির পরিমাপ মূলত তারা তাদের নিয়োজিত কাস্টমসের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিপাহীর মাধ্যমে করে থাকে যার প্রকৃত পরিমাপ কয়েকটি (তাদের হাতে লেখা) চিরকুট এর মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া গেছে। কিন্তু তারা তাদের নিয়োজিত ওই একই সিপাহীর দেয়া তথ্যানুযায়ী ওজন কম দেখানো আরেকটি তালিকার সাথে অফিসের তালিকা মিল রেখে এই রাজস্ব ফাঁকির বিষয়টি নিশ্চিত করে। যার সাথে প্রকৃত ওজনের (চিরকুটে লেখা তথ্যমতে) কোন মিল নেই।

কয়েকটি গোপন সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ২২ এপ্রিল তারিখে ভারত থেকে আমদানি করা কয়লার বিল অফ এন্ট্রি (নং-১৫২৮) এর মাধ্যমে জানা যায়, উক্ত বিল অফ এন্ট্রির বিপরীতে দুইটি গাড়িতে (গাড়ি নং- AS09C3467 ও AS01DD4261) আমদানিকৃত ৪০ মেট্রিক টন কয়লার রাজস্ব প্রদান করা হয়। যার অর্থের পরিমাণ ১ লক্ষ ৩৫ হাজার ৫৯২ টাকা কিন্তু উক্ত দুই গাড়িতে প্রকৃতপক্ষে আমদানি করা হয়েছে ৬৯ মেট্রিক টন কয়লা। যা লিখিত হিসাবের চেয়ে ২৯ টন বেশি এবং এই ২৯ টনের কোন রাজস্ব সরকার প্রাপ্ত হয়নি। যার মোট রাজস্ব দাড়ায় ২ লক্ষ ৩৩ হাজার ৯৬ টাকা। এখানে একদিনে মাত্র দুইটি গাড়িতেই সরকারি রাজস্ব ফাঁকির পরিমাণ ৯৮ হাজার ৩০৪ টাকা।
শুধু তাই নয় ওই বিল অফ এন্ট্রির বিপরীতে একটি গাড়ির ওজন বৃদ্ধি করে ও গাড়িতে থাকা মালের ওজন কম দেখিয়ে ফাঁকি দেয়া হয় আরো ১ হাজার ৮৬৪ টাকা।

একই দিনে প্রাপ্ত আরেকটি বিল অফ এন্ট্রি (নং-১৫৩০)র বিপরীতে দেখা যায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষের হিসেব মতে ২ টি ভারতীয় গাড়িতে (যার নং- AS19C3486 ও AS01GC7872) আসা কয়লার পরিমাণ ৪০.৪৯ মেট্রিক টন যার বিপরীতে রাজস্ব দেখানো হয় ১ লক্ষ ৩৭ হাজার ২৫৩ টাকা। কিন্তু ওই দুই গাড়িতে আসা প্রকৃত কয়লার পরিমাণ ছিল ৬৯.১ মেট্রিক টন। যার রাজস্ব ফাঁকির পরিমাণ ৯৬ হাজার ৯ শত ৮২ টাকা।

এছাড়াও অন্যান্য সূত্র মতে ২০২২, ২০২৩, ২০২৪ সালের এক মাস করে প্রাপ্ত তিনটি রিপোর্ট অনুযায়ী আমদানিকৃত পাথর ও কয়লার পরিমাণ জানা যায়।

যাতে ২০২২ সালের শুধু মার্চ মাসেই ২ হাজার ২৯৯ টি গাড়িতে করে পাথর আমদানির পরিমাণ ছিল ৫৯ হাজার ৩৯০ মেট্রিক টন । পাথরের ক্ষেত্রে প্রতি মেট্রিক টন ১০ টাকা হারে স্পিড মানি (ঘুষ) র মোট টাকা দাঁড়ায় ৫ লক্ষ ৯৩ হাজার ৯০০ টাকা। কয়লা আমদানির পরিমাণ ৬২ হাজার ৩৯৬ মেট্রিক টন। স্পিড মানি (ঘুষ) কয়লার ক্ষেত্রে প্রতি মেট্রিক টন ৬০ টাকা করে হলে মোট টাকা দাঁড়ায় ৩৭ লক্ষ ৪৩ হাজার ৭৬০ টাকা। ওই সূত্র মতে জানা যায়, এর উপরে উল্লেখিত রাজস্ব ফাঁকির পাশাপাশি প্রতিটি বিল অফ এন্ট্রির বিপরীতে পাথরের ক্ষেত্রে ৭৫০ টাকা এবং কয়লার ক্ষেত্রে ৩০০০ টাকা করেও প্রদান করতে হয়। সে অনুযায়ী উক্ত মাসে পাথরের বিল অফ এন্ট্রি হয় ১২১ টি, যার জন্য স্পিড মানি (ঘুষ) ৭৫০ টাকা করে হলে মোট টাকার পরিমাণ আনুমানিক ৯০ হাজার ৭৫০ এবং কয়লার ক্ষেত্রে ৫০৪ টি বিল অফ এন্ট্রির বিপরীতে স্পিড মানি (ঘুষ) ৩০০০ টাকা করে হলে মোট দাঁড়ায় ১৫ লক্ষ ১২ হাজার টাকা। তাহলে উক্ত মাসেই রাজস্ব ফাঁকির বাইরে শুল্ক ও রাজস্ব কর্মকর্তাকে দেয়া এই স্পিড মানি (ঘুষ) এর পরিমাণ আনুমানিক ৫৯ লক্ষ ৪০ হাজার ৪১০ টাকা।

২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে উপরোক্ত রাজস্ব ফাঁকির বিষয়ের পাশাপাশি এই স্পিড মানি (ঘুষ)র পরিমাণ দাঁড়ায় আনুমানিক ৫১ লক্ষ ৮৩ হাজার ৯৫০ টাকা। এছাড়াও ওই একই মাসে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ কয়লার এলসি গুলোকে ১৪০ ডলারের পরিবর্তে ১২০ ডলার করানোর সুযোগ দিয়ে টন প্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকা করে স্পিড মানি(ঘুষ) হিসেবে নিত বলে জানা যায়।

আবার ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে উক্ত রাজস্ব ফাঁকির পাশাপাশি স্পিড মানি (ঘুষ)র পরিমাণ আনুমানিক ২২ লক্ষ ৪৯ হাজার ২৩০ টাকা।

সি এন্ড এফ এজেন্টদেরকে প্রত্যায়ন দেয়া বাবদ তাদের কাছ থেকে ৫০০০ টাকা করেও নেয়া হয় বলেও একটি সূত্রে জানা যায়। এছাড়াও আমদানিকৃত পণ্যের ভিতরে অনুমোদনহীন বিভিন্ন পণ্য আমদানির অভিযোগও রয়েছে।

আবার বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বিল অফ এন্ট্রি প্রতি কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সি এন্ড এফ এজেন্ট এর কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা করে নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে। সেক্ষেত্রে দামি পণ্য হলে যেমন টি-শার্ট লুঙ্গি ইত্যাদি সহ অনুরূপ পণ্যের ক্ষেত্রে বিল অফ এন্ট্রি প্রতি রাজস্ব কর্মকর্তা আব্দুল লতিফের বিরুদ্ধে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে তিনি তার পূর্বের কর্মস্থল বাংলাবান্ধা স্থল বন্দরের কথা রেফারেন্স হিসাবে উল্লেখ করে সি এন্ড এফ এজেন্টদের কাছ থেকে এভাবে টাকা নেন বলেও জানা গেছে। এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে গাড়ি ছাড়ার সময় বিল অফ এন্ট্রি প্রতি ১ শত টাকা করে বন্দর কর্তৃপক্ষ নিয়ে থাকে। বন্দরে শুধু গাড়ি স্কেল করা হলেও সেখানে লোড ও আনলোড ফি হিসেবেও অর্থ নেয়া হয়।

যদি প্রতিদিন গড়ে ৮০ থেকে ১২০ টি ভারতীয় গাড়ি বন্দরে পণ্য নিয়ে আসে সে অনুযায়ী শুধুমাত্র কয়লার ক্ষেত্রেই ২টি বিল অফ এন্ট্রির বিপরীতে উপরোক্ত প্রাপ্ত তথ্য মতে ৪ টি গাড়ি থেকেই শুল্ক রাজস্ব ফাঁকির পরিমাণ ১ লক্ষ ৯৫ হাজার ২৮৬ টাকা হয় তাহলে ওই একদিনে আসা মোট গাড়ি থেকে রাজস্ব ফাঁকির পরিমাণ কত? এক মাসে আসা গাড়ির বিপরীতে মালের রাজস্ব ফাঁকির পরিমাণ কত? প্রতিবছরে কত এবং সর্বশেষ প্রশ্ন আমদানি রপ্তানি শুরু হওয়ার দিন থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিগত বছরগুলোতে কত শত কোটি কিংবা হাজার কোটি টাকা সরকারের রাজস্ব হিসেবে না গিয়ে লোপাট হয়েছে এবং তার পাশাপাশি স্পিড মানি (ঘুষ) এবং দুর্নীতির পরিমাণ কত? এসব বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং সরকারি শুল্ক কাস্টমস কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি তাদেরকে এসব কর্মকাণ্ডে সমর্থনকারী ক্ষমতাসীনরা কত অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন তা কি অনুমান যোগ্য? এমন তথ্য থেকে এমন প্রশ্ন আসা অমূলক নয়।

এ সময় এমন আরেকটি প্রশ্ন উঠেছে যখন সরকার পতনের পর ১৭ই আগস্ট স্থানীয় ছাত্র জনতা বন্দর কর্তৃপক্ষ কিংবা শুল্ক ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষের নিকট এসব বিষয়ে জানতে চায় তখন জানতে পারেন বর্তমান রাজস্ব কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ এর পূর্বের দায়িত্ব পালনকারী কাস্টমস কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন উক্ত পদে থাকাকালীনও এমন রাজস্ব ফাঁকির বিষয়টি অনেকের কাছে জানা থাকলেও তা প্রকাশ হয়নি। কারণ হিসেবে জানা গেছে উক্ত সাবেক শুল্ক ও কাস্টমস কর্মকর্তা (যিনি বর্তমানে রংপুর বিভাগেই কর্মরত) মোফাজ্জল হোসেন বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তি।সাবেক কাস্টমস কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন এর পুত্র গাইবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ আল হাসান। সেই সাথে উক্ত কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন এর মেয়ে জামাই বিদ্যুৎ বিভাগের বড় পদে কর্মরত বলেও তার সময়ে এমন দুর্নীতির চিত্র প্রকাশ পায়নি । সেই সময়ের একটি তথ্যসূত্রে আরও জানা যায়, বন্দরে উক্ত কাস্টমস কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন থাকাকালীন ভারতের ও ভুটানের আমদানিকৃত অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রে মৌখিক বিধি নিষেধ আরোপ করেন।এর কারণ হিসেবে জানা যায়, নির্ধারিত কয়েকটি পণ্য ব্যতীত বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের তৎপরতা বেড়ে যেতে পারে যা তাদের এই রাজস্ব ফাঁকি সহ অন্যান্য অবৈধ অর্থ বা স্পিড মানি (ঘুষ) গ্রহণের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করতে পারে। সেই সাথে উক্ত শুল্ক স্টেশনে বর্তমানে কর্মরত আরও একজন প্রভাবশালী সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা মেহেদী হাসানের নামও উঠে আসে। বন্দরে যার প্রভাবও রয়েছে ব্যাপক বলে জানা গেছে । কারণ হিসেবে জানা যায়, উক্ত মেহেদী হাসানের বোন জামাই কাস্টম কমিশনার। এনবিআর এর বিভিন্ন দপ্তরেও তার ব্যাপক প্রভাব রয়েছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে। এখানে উল্লেখ করার মতো বিষয় হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট বন্দরে বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং শুল্ক ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ মিলেই এই রাজস্ব ফাঁকি সহ অবারিত দুর্নীতির একটি অভয়ারণ্য তৈরি করেছেন।

পাশাপাশি যারা এই বন্দর টিকে এমন রাজস্ব ফাঁকির পাশাপাশি দূর্নীতির অভয়ারণ্যে পরিণত করেছেন তারা এখনো রয়েছেন দুর্দান্ত প্রতাপে এবং অদৃশ্য শক্তির বদলে বহাল তবিয়তে যা থেকে উত্তরণ না হলে সাধারণ ব্যবসায়ীদের পক্ষে ব্যবসা করা যেমন দূরহ তেমনি সরকার হারাতে থাকবে শত শত কোটি টাকার রাজস্ব। অনুরূপভাবে দেশের অন্যান্য বন্দরের অবস্থা এরুপ হলে ফোকলা হওয়া অর্থনীতির চাকা সচল হওয়া তো দূরের কথা, তা বরং অন্তবর্তীকালীন সরকারের জন্য গোদের ওপর বিষফোঁড়া হিসেবে কাজ করবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আমদানি রপ্তানির সাথে জড়িত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী জানান, আমরা প্রকৃতভাবে যারা আমদানি রপ্তানি করব সেখানেই তারা বিভিন্ন বিধি-নিষেধ আরোপ করেন অথচ তারা তাদের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন যোগসাজসে অন্য ব্যবসায়ীর মাধ্যমে ভারত থেকে ভুট্টার ভিতর জিরা আমদানি করেছে সে বিষয়টা এখন ওপেন সিক্রেট হিসেবে অনেকের জানা। তিনি আরো বলেন, কোন কারণ ছাড়াই লোড আনলোডের সময় ১০৫ টাকা দিতে হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বন্দরের আরেক ব্যবসায়ী নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানান যে, “আমরা যারা ব্যবসা করি তারা সঠিকভাবে ব্যবসা করলে আমাদের কিছু লাভ থাকে কিন্তু এখানে যেভাবে অর্থ আদায় করা হয় পদে পদে তাতে আমাদের মতো সাধারণ ব্যবসায়ীদের পক্ষে ব্যবসা করা সম্ভব নয়, আমরা চাই পোর্ট দুর্নীতিমুক্ত হোক।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থলবন্দরের লোড আনলোড শ্রমিক ইউনিয়নের সেক্রেটারি আব্দুল বাতেন বলেন, “আমরা লোড আনলোডের টাকা ঠিকাদারের কাছ থেকে নেই না মূলত তা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নেই। সে ক্ষেত্রে লোডের ক্ষেত্রে আড়াই টাকা সিএফটি ও আনলোডের ক্ষেত্রে গাড়ির প্রকারভেদে টন প্রতি ২৫ থেকে ৩৫ টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকি’। প্রতিবেদন সূত্র মতে জানা যায়, এটি সরকারের কোন খাতে যায় না।

এ প্রসঙ্গে জানতে চেয়ে সি এন্ড এফ এজেন্ট সমিতির সেক্রেটারি মোস্তফা জামান কে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আমদানি রপ্তানি কারক সমিতির সভাপতি আবু তাহের ফরাজি এসব বিষয় অস্বীকার করেন। তবে আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি স্বীকার করেন, লোড আনলোড এর ক্ষেত্রে টন প্রতি নেয়া ২৭ টাকা স্থল বন্দরের ইজারাদারের কাছ থেকে গিভ অ্যান্ড টেকের মাধ্যমে সমন্বয় করি।

স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে থাকা প্রধান নির্বাহী, সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) মোঃ আতিকুল ইসলাম কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বিষয়গুলো অস্বীকার করেন। তিনি বলে

উল্লেখ্য ২০১৭ সাল থেকে শুরু করে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কর্মরত কাস্টমস কর্মকর্তারা হলেন যথাক্রমে শেখ রওনাকুল ইসলাম, সিদ্দিকুর রহমান, শুভাশিস রায়, খোকন শিকদার, মোফিজুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম, খায়রুল ইসলাম, শাহজাহান মিয়া, কাজী রকিবুল হাসান, আকরাম হোসেন, ওমর ফারুক, তাপস কুমার দেবরায়, জুয়েল রানা, তানভীর আহমেদ, তারিকুল ইসলাম, মোফাজ্জল হোসেন ও সর্বশেষ কর্মরত আব্দুল লতিফ।

এই বন্দর দিয়ে প্রতি মাসে এই পাথর কিংবা কয়লা-ই শুধু নয়, বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানির পাশাপাশি রপ্তানিও হয় অনেক পণ্য। যেখানে একটি দুটি পণ্যের ক্ষুদ্র একটি তথ্যের মাধ্যমে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ও বন্দর কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব ফাঁকির পাশাপাশি যে পরিমাণ ঘুষ ও দূর্নীতির চিত্র উঠে এসেছে সকল ক্ষেত্রে হিসেব করলে এর পরিমাণ কেমন হতে পারে তা অনুমান করা এক প্রকার অসম্ভব। যার মাধ্যমে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে প্রতিবছর শতশত কোটি টাকা যা কয়েক বছরে হাজার কোটি টাকার বেশী ব্যতীত কম হবার সুযোগ নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *