পঞ্চগড় প্রতিনিধি

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী’র বিরুদ্ধে স্থানীয় চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় বাড়ি দখল ও হয়রানির অভিযোগ করেছেন আছমত আলী নামে এক কলেজ শিক্ষক। এমনকি স্ত্রী ও তার প্রভাবশালী স্বজন ও স্থানীয় চেয়ারম্যানের হুমকি-ধামকি কারণে নিয়মিত কলেজ করতে পারছেন না বলেও অভিযোগ করেন ওই শিক্ষক। বুধবার দুপুরে পঞ্চগড় জেলা শহরের হিমালয় বিনোদন পার্কে এক সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন তেঁতুলিয়া সরকারি কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক আছমত আলী। এ সময় লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, ২০০৫ সালে রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ইটাকুমারী হাসনা এলাকার নুরুল ইসলামের মেয়ে নুরবানুকে বিয়ে করেন কলেজ শিক্ষক আছমত আলী। বিয়ের পর ২০০৭ সালে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি শুরু করে নুরবানু। চাকরি হওয়ার পর থেকেই স্বামীর অবাধ্য হতে শুরু করে নুরবানু। এ নিয়েই সংসারে অশান্তির শুরু। এক পর্যায়ে স্ত্রী নুরবানুর ঘন ঘন বিচার শালিস ও মামলার জর্জরিত হয়ে পড়েন ওই কলেজ শিক্ষক। এমনকি তার পরিবারের লোকজন সময় অসময়ে লাঞ্ছিত করতো তাকে।

তেঁতুলিয়া বাজারের মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সাথে জমি কিনে বাড়ি করে বসবাস করতেন আছমত। তাদের সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে সন্তান রয়েছে। সংসারে অশান্তি চরম আকার ধারণ করলে ২০২১ সালের ১৮ অক্টোবর কাজীর মাধ্যমে স্ত্রী নুর বানুকে তালাক দেন তিনি। তালাক কার্যকরের পরে অন্যত্র বিয়ে করলেও তার ঘরবাড়ি দখল করে রাখে তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী নূরবানু। পরে বাড়িতে উঠতে গেলে নুরবানুর লোকজন তাকে লাঞ্ছিত করে। এক পর্যায়ে শালিসের মাধ্যমে বাড়িটি তালাবন্ধ রাখা হয়। কিন্তু গত ৬ ডিসেম্বর তাকে আবারো ওই বাড়িতে তুলে দেন স্থানীয় চেয়ারম্যান। আছমত আলী বলেন, আমি নুরবানুর মানসিক অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে তাকে তালাক দেই। তালাক দেয়ার পরও তার নির্যাতন থেকে আমি মুক্তি পাচ্ছি না। আমার বাড়ি এখন সে দখল করে রেখেছে। আমাকে আমার বাড়িতে ঢুকতে দিচ্ছে না। আমি শিক্ষক সমিতি (কাল্ব) থেকে ঋণ নিয়ে বাড়ির জমিটি কিনেছি। সে একের পর এক মিথ্যে বলে শালিস ও মামলা দিয়ে আমাকে হয়রানি করছে। বাড়িসহ জমিটি তাকে লিখে দেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। এমনকি তার প্রভাবশালী আত্মীয় স্বজনদের দ্বারা আমাকে হুমকি ধামকি দিচ্ছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছেও আমি সুবিচার পাচ্ছি না। গত ৬ ডিসেম্বর অবৈধভাবে আমার বাড়িতে আমার স্ত্রীকে তুলে দিয়েছে তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদ করিম সিদ্দিকী। পরে তার কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে আমাকে গাছে ঝুলিয়ে মারধরের হুমকি দেন। আমার কাছে এর কল রেকর্ড আছে। নিজের ঘরবাড়ি থাকতেও আমাকে এখন পঞ্চগড়ে মানুষের বাড়িতে থাকতে হচ্ছে। তাদের হুমকির কারণে নিয়মিত কলেজ করতে পারছি না। বাড়িটি আমি আমার সন্তানদের নামে অছিয়তনামা করে দিতে চাচ্ছি সেটাতেও তারা রাজি হচ্ছে না। আমি তাদের এই নির্যাতন থেকে মুক্তি চাই। এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে নুরবানু বলেন, আমার স্বামী বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের জন্য আমার উপর নির্যাতন করতো। আমি চাকরি করে যে টাকা পেতাম সব টাকা নিয়ে নিতো সে। আমার টাকা দিয়েই সে নিজের নামে ৫ শতক জমি কিনে বাড়ি করেছে। আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিতে ব্যর্থ হয়ে সে আরেকটি বিয়ে করে পঞ্চগড়ে থাকে। আমার সন্তানদের কথা চিন্তা করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা আমাকে তার বাড়িতে উঠিয়ে দিয়েছে। আমার সন্তানদের তো ভবিষ্যত আছে। সেটাও তো দেখতে হবে। সে আমার নামে মিথ্যে বলে বেড়াচ্ছে। তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুদ করিম সিদ্দিকী বলেন, ওই কলেজ শিক্ষককে কোন ধরনের হুমকি ধামকি দেয়া হয়নি। তাদের বিষয়টি নিয়ে দশ বারেরও বেশি শালিসে বসা হয়েছে। সব শেষ বাড়ি সহ জমিটি দুই সন্তানের দানপত্র করে দেয়ার সিদ্ধান্ত হলেও আছমত তা মানেনি। এমনকি সন্তানদের কাপড় চোপড়ও বের করে দেয় নি। পরে ইউপি সদস্যদের নিয়ে আমরা সন্তানদের তার বাড়িতে তুলে দেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *