ডেস্ক রিপোর্টঃ ২০১৯ সালের ২৩জুন পুলিশ সুপার পদে মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান বিপিএম, যোগদানের করার পর থেকে জেলার মাদক, চোরাকারবারীসহ সকল অপরাধীদের আতংকে পরিনত হয়েছে। ইতিমধ্যে নাগেশ্বরী ও ফুলবাড়ীর প্রায় দেড় শতাধিক মাদক ব্যবসায়ী তার কাছে আত্মসমর্পন করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার প্রতিশ্রুতির দিয়েছেন। সম্প্রতি পুলিশ কনস্টবল নিয়োগ স্বচ্ছতার সাথে সম্পন্ন করা, শীতে অসহায় দারিদ্র, প্রতিবন্ধী ও দলিত সম্প্রদায়ের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ এবং চিলমারীর শিশু সুরভীর শিকল মুক্তি ও চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়া, বন্যায় ত্রান বিতরন, লবনগুজব মোকাবেলা, মহান বিজয় দিবসে পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনাসহ নানা কাজে জনমনে ব্যপক প্রশংসিত হয়েছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ মহিবুল ইসলাম খান বিপিএম।
২০১৯ সালের জেলা পুলিশের সাফল্য তুলে ধরা হলো-
মামলা নিষ্পত্তির হারঃ অত্র জেলায় রুজুকৃত মামলা নিষ্পত্তির জন্য মামলা মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। পুরাতন ও জটিল মামলাগুলি মনিটরিং সেল এর মাধ্যমে পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করায় অতি দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি সম্ভব হচ্ছে।
মাদক উদ্ধারঃ
জেলা পুলিশ, কুড়িগ্রাম বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে ২০১৯ সালে ৭১৩কেজি গাঁজা, ৪৪৪৫১ পিস ইয়াবা, ৪২৩.৯০ গ্রাম হেরোইন, ১৮০১ বোতল ফেন্সিডিল, ১২৬ বোতল বিদেশী মদ, ২১১ লিটার দেশী মদ এবং গাঁজার গাছ ৭টি উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে।
ট্রাফিক ব্যাবস্থাপনা ও জরিমানা আদায়ঃ
ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করার অপরাধে কুড়িগ্রাম জেলায় মোট ৭৬৫২টি মামলা এবং ২৭,৪১,৯০০(সাতাশ লক্ষ একচল্লিশ হাজার নয়শত) টাকা জরিমানা আদায়পূর্বক সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান করা হয়েছে।
নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাঃ
নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে অত্র জেলায় নিয়মিত কমিউনিটি পুলিশিং ও ওপেন হাউজ ডে সভার আয়োজন করা হয়।আয়োজিত সভায় সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ সকলকে নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি করার কার্যক্রম গ্রহন করা হয়েছে। এছাড়াও প্রতিটি এলাকায় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের নিয়ে একটি করে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
নিখোঁজ নারী, শিশু ও নিখোঁজ ব্যক্তি উদ্ধারঃ
জেলায় ২০১৯ সালে নারী ও শিশু অপহরণের ঘটনায় মোট ৪৪টি মামলা রুজু হয়।সংশ্লিষ্ট মামলাগুলির তদন্তকারী কর্মকর্তা অপহরণকৃত সকলকেই উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন।
কুলু-লেস,চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলা ডিটেকশনঃ
কুলু-লেস,চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলা যেমন, নাগেশ্বরী থানার মামলা নং-১৬ তাং ১০.০৯.২০১৯ইং, ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড এর হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার এবং মামলার রহস্য উদঘাটন হয়েছে।মামলা নং ৩৭ তাং ২৭.০৯.২০১৯ইং ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড এর ঘটনাটিও একটি ক্লুলেস ঘটনা। প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে ঘটনার সাথে জড়িত আসামীদের গ্রেফতার করতঃ মামলার মূল রহস্য উদঘাটন সম্ভব হয়েছে।রৌমারী থানার মামলা নং-১২,তাং ১৯.১০.২০১৯ইং, ধারা- ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড এর ভিকটিম একজন স্কুল ছাত্রী।গত ১৯.১০.২০১৯ইং বিকেল ৩ঘটিকার পর চর ঘুঘুমারী গ্রামের কাশিয়াবাড়ীর ভিতর ভিকটিম এর ওড়নার একপ্রান্ত দিয়ে গলা পেচানো এবং অপর প্রান্ত দিয়ে মুখ পেচানো এবং এবং স্কুল ড্রেসের বেল্ট দিয়ে পিছনে দু’হাত বাধা মৃত অবস্থায় পাওয়ায় বর্ণিত সংবাদ রৌমারী থানায় আসার পর পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।রৌমারী থানায় মামলা নং-১২, তাং ১৯.১০.২০১৯ইং ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড রুজু হয়।মামলা হওয়ার পর কোন তথ্য,উপাত্ত পাওয়া না গেলেও প্রযুক্তিগত তথ্যের সহায়তায় ঘটনার সাথে জড়িত আসামী নুরনবী(২১),পিতা- মৃত জোনাব আলী এবং হামিদুল ইসলাম(২০), পিতা- হাসেন আলী, উভয় সাং চর ঘুঘুমারী,থানা উলিপুর। তাদের দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এবং বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে। উলিপুর থানার মামলা নং-২৮, তাং ২২.১০.২০১৯ইং, ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড এর ঘটনাটিও একটি ক্লুলেস ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন এবং আসামীরা গ্রেফতার হয়েছে।
অপরাধ সংস্পর্শে আসা পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাঃ
বিভিন্ন অপরাধের সংস্পর্শে আসা পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে শান্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে।এর মধ্যে এক এসআই(নিরস্ত্র) ও এক এএসআই(নিরস্ত্র) এবং একজন কনস্টবলের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য ক্রয়-বিক্রয়ের অভিযোগে ফৌজদারী মামলা রুজু হয়। তাদেরকে বিভাগীয় শান্তি প্রদানের নিমিত্তে বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়েছে। এছাড়াও ২জন কনস্টেবল ফৌজদারী মামলায় আটক হলে তাদের সাময়িক বরখান্ত করে বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান বিপিএম জানান,কুড়িগ্রাম জেলাকে মাদক মুক্ত করতে জেলা পুলিশ সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জনগণ যেন হয়রানির স্বীকার না হয়, সে ব্যাপারে জেলার প্রত্যেকটি থানায় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।মুজিববর্ষ ২০২০কে সামনে রেখে জেলা পুলিশ কুড়িগ্রামকে আরো বেশী জনমুখী করা হবে, থানায় সেবার মান বৃদ্ধি ,পুলিশ চেকপোষ্ট ও বক্স স্থাপন, নারী শিশু ডেস্ক, মুক্তিযোদ্ধা ডেস্ক স্থাপনসহ মাদক ও জুয়ার বিরুদ্ধে অভিযান জোড়দার করা হবে।