স্টাফ রিপোর্টার
কুড়িগ্রাম জেলার ছিনাই ইউনিয়নের ফুলবাড়ী সীমান্ত ঘেষে এই মন্দিরটির অবস্থান। এটি জংগল ও মাটির নীচে বহুকাল ছিলো। স্থানীয়রা জংগল পরিস্কার ও মাটি খুড়ে মন্দিরটি বেড় করেছিলেন, তাও সেটি দুই আড়াই দশক।
একদা এই মন্দিরের দক্ষিণ পাশ দিয়ে প্রবাহিত ছিলো ধরলা নদী। তখন নদীর এই অংশকে স্থানীয়রা ছিনাই নদী হিসেবে জানতেন। এখনো মন্দিরের দক্ষিণের ফসলি জমি গুলোকে স্থানীয়রা ছিনাই নদীর অংশ হিসেবে উল্লেখ করেন।
এই মন্দিরের নির্মাণকাল মোগলদের অনেক আগে বা সুলতানী আমলের দিকে হবে।
কথিত আছে হিন্দু ব্রাহ্মণ পুত্র রাজীবলোচন রায় ভাদুড়ী (মোহাম্মদ ফারমুলি)বাংলা ও উড়িষ্যার শাসক দাউদ খানের সেনাপতি ছিলেন। তিনি রাজকন্যাকে বিবাহ করায় মুসলিম ধর্মে দীক্ষা নেন। বিষয়টি হিন্দু ব্রাহ্মণ সমাজ ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারেন নাই বরং তারা রুষ্ট হন। এতে করে সেনাপতি রাজীবলোচনও ক্ষিপ্ত হন তাদের ওপর। তিনি এ ক্রোধে জ্বলতে থাকেন। তিনি প্রথম পুরির সূর্য মন্দিরে আক্রমণ করেন ১৫৬৮ সালে। এরপর তিনি কামাক্ষা মন্দিরসহ বাংলা, উড়িষ্যা এবং আসামের বিভিন্ন মন্দিরে আক্রমণ করেন। বহু মন্দির এর ফলে ধ্বংস প্রাপ্ত হয়। আসাম অভিযানের পথে কোচবিহার ও আশপাশের এলাকার মন্দির গুলোও তার হামলার শিকার হয়। তিনি কালাপাহাড়ের ন্যায় রুপ ধারণ করেন। তার আচরণ ও রণমুর্তির কারণে লোকজন কালাপাহাড় হিসেবে তাকে অভিহিত করেন। ১৫৬৮- ১৫৭৬ সালের মধ্যে যে কোনো সময় ছিনাই নদীর পাড়ের এই চতুর্ভুজ শিব মন্দিরটিও তার আক্রমণে শিকার হয়। মন্দিরের চূড়া ভেঙ্গে চূর্ণবিচূর্ণ করে। এ ধরনের আক্রমণের পর পূজারীরাও এ মন্দিরে প্রার্থনা করতে ভয় পেতেন। ফলে মন্দিরটি পরিত্যাক্ত হয়ে যায়। একসময় জংগল আর মাটির ঢিবি সেখানে তৈরি হয়। এদ্ব্যতিত ধরলা নদী তার গতিপথ পরিবর্তন করে মন্দিরের উত্তর দিক দিয়ে প্রবাহিত হলে মন্দিরটি কালের গর্ভে হারিয়ে যায়। তবে মন্দির ও কালাপাহাড়ের কথা মানুষের মুখে মুখে ফিরতে থাকে। ঐ এলাকাটিতেও মানুষজন জংগল আর ভয়ের কারণে যেতেন না। গত শতাব্দীর শেষ দিকে স্থানীয় তরুণ যুবক ও পূজারীরা সাহসী হয়ে জংগল পরিস্কার করে মন্দিরটি খুঁজে বেড় করতে সচেষ্ট হন। আধো আধো বোঝা গেলেও মন্দিরটি সামগ্রিক ভাবে বোঝা যায়নি প্রথমে, পরে মাটি সরিয়ে পরিস্কার হয় এটি কালাপাহাড়ের দ্বারা আক্রান্ত সেই চতুর্ভুজ শিব মন্দির।
এখনো লোকজন সেখানে যেতে ভয় পান।
এ এলাকা যে অনেক পুরাতন জনপদ ও বর্ধিষ্ণু অঞ্চল ছিল তা ধ্বংস প্রাপ্ত চতুর্ভুজ শিব মন্দির দেখলেই বোঝা যায়। প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের কাছে অনুরোধ তারা যেনো মন্দিরের কাঠামোটি সংরক্ষণ করেন। এ ক্ষেত্রে কুড়িগ্রাম জেলার কৃতী সন্তান সুফি মোস্তাফিজুর রহমান বিষয়টিতে নজর দেবেন বলে বিশ্বাস করি। একইসঙ্গে সেখানে যাওয়ার জন্য পাকা সড়ক নির্মাণসহ জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের ভূমিকা চাই।
উল্লেখ্য কালাপাহাড়ের ব্যবহৃত দুটি কামান পাঙ্গা রাজবাড়ীতে ছিলো। জনশ্রুতি রয়েছে যা সম্রাট আকবরের সাথে সংঘটিত যুদ্ধে ব্যবহার হয়েছিল। ঐ কামান দুটি ১৯৭১ সালের পর তৎকালীন বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) কুড়িগ্রামে তাদের ক্যাম্পে নিয়ে আসে। কামান দুটি বর্তমানে বিজিবি কুড়িগ্রাম গেইটের ভেতরে প্রদর্শন করা হচ্ছে।
এই পুরাতন স্থাপনা গুলো আমাদের ইতিহাসের আকর ও পর্যটনের বিষয় হওয়ার অবকাশ রাখে। উত্তরবঙ্গ জাদুঘরে মন্দিরের দুটি ইট সংরক্ষিত আছে।