রোকনুজ্জামান মানু উলিপুর (কুড়িগ্রাম) ঃ
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নে প্রাচীন নির্দশন রয়েছে। ৩শ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী কাজীর মসজিদ যা আলোকবর্তীকার ন্যায় যুগযুগ ধরে কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অজপারাগাঁ দলবাড়ির পাড় গ্রামে “কাজীর মসজিদ”নামে ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৮ কি ঃ মি ঃ পশ্চিমে অবস্থিত। মসজিদের পুরাতন ভবনটি আকারে ৩ গম্বুজ বিশিষ্ট শক্তভিত্তির উপর দন্ডায়মান। যাহা বর্তমানে ৫ গম্বুজ আকারে সম্প্রসারিত করেছে। ইট,পাথর ও শুরকি দ্বারা নির্মিত ছিল। বর্তমানে এই মসজিদটি সম্প্রসারিত করে অত্যাধুনিক ও নিপূন কারুকার্জে সৌন্দর্য বর্ধনে প্রসারিত করা হয়েছে। এখানে রয়েছে এতিম খাঁনা, নূরানী ও হাফেজী মাদ্রাসা মসজিদের পার্শ্বে রয়েছে প্রাচীন কালের সানবাঁধা একটি পুরাতন পুকুর।
ঐতিহ্যবাহী কাজীর মসজিদের পুরাতন ভবন কে ঘিরে রয়েছে নানা জল্পনা কল্পনা । কখন ,কিভাবে নির্মিত হয়েছে তার সঠিক কোন ইতিহাস আজও জানা যায়নি। এ ব্যাপারে দুটি মতবাদ রয়েছে, মসজিদটি স্বয়ং আল্লাহ্ তাআলা নিজেই সৃষ্টি করেছেন যা ভূ-গর্ভ থেকে উঠে এসেছে, অন্যটি সেই আমলের কাজী কুতুবুদ্দিনের তৈরি। যার নামানুসারে ঐতিহ্যবাহী মসজিদটির নাম ‘কাজী মসজিদ’হয়েছে। ধারনা করা হচ্ছে এই উপমহাদেশে ইসলাম ধর্ম প্রচারে আসা প্রথম খেলাফত আমলের এটি একটি ধর্মীয় নিদর্শন। গভীর জঙ্গলের ভেতরে অজান্তে অরক্ষিত অবস্থায় ও অক্ষত ছিল মসজিদটি। ক্রমান্নয়ে জনসংখ্যা বাড়তে থাকলে দুর্গম বনজঙ্গলের সংস্কার কাজ শুরু হয়। তৈরী হতে থাকে এর আশে-পাশে বাড়ি-ঘর ও জনবসতি। এভাবেই একদিন মানুষের নজরে পরে এই গায়েবী মসজিদটি। জনশ্রুতি আছে এই গয়েবী মসজিদে কেউ কিছু মানত করে দান করলে তাদের উদ্দেশ্য সফল হয়।
এ নিদর্শনকে ঘিরে গড়ে উঠেছে, ঈদগাহ মাঠ, করবস্থান, নূরাণী হাফিজিয়া মাদ্রাসা, মৎস্য খামার, সহ প্রায় ১ একর ৩ শতক জমি। এটি বাউন্ডারি দেয়াল দিয়ে সংরক্ষন করা হয়েছে। প্রতি শুক্রবার জুম্মার নামাজে দূর-দূরান্ত থেকে হাজারের অধিক ধর্মপ্রাণ মুসলমানের সমাগম ঘটে।এছাড়া অন্য ধর্মাবল¤ী^ মানুষ-জনও মসজিদটি এক নজর দেখা ও মানতের জন্য প্রতিনিয়তই ভীর করছেন ।এসব মানত ও দান দক্ষিনা থেকে প্রতিমাসে লক্ষাধিক টাকা উপার্জিত হয় ।
ওই এলাকার বয়জেষ্ঠ্য ও জ্ঞানীজনরা বলেন, উহা কোন গায়েবী বা আল্লাহ্ প্রদত্ত নয় বরং আজ থেকে কয়েক শত বছর পূর্বে মসজিদটি কোন এক প্রখ্যাত বুজুর্গ ব্যক্তি নির্মান করেছিলেন, যাঁর উপর তদানিন্তন এ অঞ্চলের শাসনভার অর্পিত ছিল। সে সময় মুসলমান সংখ্যায় কমছিল। যে কারনে তাঁরা দলবদ্ধ ভাবে বাস করত। কালক্রমে হয়তো কোন যুদ্ধ-বিগ্রহ বা শাসন কাজের সুবিধায় অথবা উর্দ্ধতন মহলের নির্দেশে শাসন কার্য্যস্থল ত্যাগ করায় জনমানবশুন্য হয়ে এওলাকাটি পরিপূর্ন জঙ্গলে পরিনত হয় । আবার বহুযুগ পরে জঙ্গলের অদূরে বসত-বাড়ী গড়ে উঠলেও গভীর অরন্যে হিং¯্র জীব-জানোয়ারের ভয়ে কেউ সেখানে যেতে পারত না ।
ওই এলাকার মানুষজন ধীরে ধীরে চাষাবাদ যোগ্য ভূমিতে পরিনত করতে থাকলে এক সময় মসজিদটি মানুষের নজরে পরে।অনুমান আজ হতে ৩‘শ বছর পূর্বে যখন মসজিদটি আবিস্কার করা হয় ।
মসজিদটির নামকরন প্রসঙ্গে বিভিন্ন যুক্তি তর্কের সমাধান হয় এর পূর্ব দেয়ালে একটি শিলালিপি ছিল। সেটিতে ফার্ষি ভাষায় খোদাই করা নির্মাতা কাজী কুতুবুদ্দিনের নাম উল্লেখ থাকায়। তাঁর নামানুসারে ঐতিহ্যবাহী মসজিদটির নামকরন হয়‘কাজীর মসজিদ’। ধারনা করা হয়েছে এই উপমহাদেশে ধর্ম প্রচারে আসা প্রথম খেলাফত আমলের এটি একটি ধর্মীয় নিদর্শন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *