মোহাম্মাদ মানিক হোসেন চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি ঃ
চাষাবাদের জন্য আমদানিকৃত ট্রাক্টর এখন অবৈধ ট্রাক বা পরিবহন হয়ে গ্রামীণ জনপদে সর্বনাশ ঘটাতে শুরু করেছে। কৃষি উন্নয়নের জন্য এসব ট্রাক্টর আমদানি করা হলেও মালিকরা এগুলো ব্যবহার করছে ইট, বালু, মাটি, কাপড়, তরিতরকারি, ফার্নিচার ইত্যাদি মালামাল পরিবহনের কাজে। ট্রাক্টরের বেপরোয়া চলাচল গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট ভেঙে চুরমার করে দিচ্ছে। কৃষি জমির টপ সয়েল কেটে ইটভাটায় সরবরাহ করছে। জমি খুড়ে গ্রাম থেকে বালু বহন করে আনছে শহরে। ট্রাক্টরের অত্যাচারের মুখে গ্রাম ও শহরের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। রোড পারমিশনবিহীন ট্রাক্টর ও সনদবিহীন ড্রাইভারদের কারণে রাস্তা-ঘাটে চলাচলকারী মানুষ সার্বক্ষণিক উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে চলাচল করছে। চোখের সামনে অবৈধ এই বাহনের অবাধ চলাচল দেখেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। জানা গেছে, চিরিরবন্দরসহ দেশের কৃষি উন্নয়ন তথা চাষবাসের কাজে ব্যবহার করার জন্য এসব ট্রাক্টর বিদেশ থেকে আমদানির সুযোগ দেয় সরকার। সরকারি সুযোগ পেয়ে এক শ্রেণীর আমদানিকারক অবাধে আমদানি করে ট্রাক্টর। আমদানিকারকরা এসব ট্রাক্টর বিক্রি করে ইটভাটার মালিক, মাটি ও বালু ব্যবসায়ী, কাঠ ব্যবসায়ী, লোহা ব্যবসায়ী, শিল্প মালিকসহ সাধারণ পরিবহন ব্যবসায়ীদের কাছে। ট্রাক্টর ও এর ড্রাইভারের জন্য কোনো লাইসেন্সের প্রয়োজন না হওয়ায় এসব পরিবহন ব্যবসায়ীরা স্বল্পমূল্যে সহজেই কিনে আনে এসব ট্রাক্টরসমূহ। তারা এসব ট্রাক্টর কিনে কৃষি কাজের পরিবর্তে করে পরিবহন কাজে ব্যবহার করায় গ্রাম, গঞ্জ ও শহরে ট্রাক্টরের সংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়। ট্রাকের চেয়ে ট্রাক্টরের ভাড়া কম হওয়ায় এই ট্রাক্টরের চাহিদাও বেড়ে যায় কয়েকগুণ। চিরিরবন্দরে প্রায় অর্ধশতাধিক অবৈধ ইটভাটায় কত সংখ্যক ট্রাক্টর রয়েছে তা জানার সহজ কোনো উপায় নেই। তবে বেসরকারি হিসেব মতে, কমবেশি পাঁচ সহ¯্রাধিক ট্রাক্টর এখন চিরিরবন্দরের শহর, বন্দর গ্রামের রাস্তায় অবাধে চলাচল করছে। এই ট্রাক্টরের লৌহ নির্মিত চাকার নিচে পিষ্ট হয়ে পিচঢালা পথে পিচ উঠে যাচ্ছে। পাকা রাস্তার পেভমেন্ট ভেঙে যাচ্ছে। গ্রামের মেঠো পথগুলোর মাটি আলগা হয়ে জমিতে মিশে যাচ্ছে। ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রয়োজন না হওয়ায় ১৫ থেকে ২০ বছরের শিশু-কিশোররাও এসব ট্রাক্টর অবাধে চালাবার সুযোগ পাচ্ছে। বেপরোয়া গতি ও কানফাটা আওয়াজে চলাচলকারী এসব ট্রাক্টরের কারণে গ্রামগুলোতে ব্যাপকভাবে পরিবেশ দূষণ দেখা দিয়েছে। শব্দ ও বায়ূদুষণ এখন গ্রামের প্রতন্ত অঞ্চলে পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে এসব ট্রাক্টর। বিগত দুই দশকে বহুসংখ্যক মানুষ ট্রাক্টরের নিচে চাপা পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন। সনদ না থাকায় এসব ট্রাক্টর ও ড্রাইভারদের বিরুদ্ধে মামলা করারও সুযোগ থাকছে না। সনদবিহীন ট্রাক্টর ড্রাইভারদের ভয়ে সচেতন মানুষ সার্বক্ষণিক আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। বিশাল চাকার এই জটিল প্রযুক্তির কৃষিযান এই ট্রাক্টরগুলো রাস্তায় চলাচলের সময় কার উপর গিয়ে উঠে তা বলা মুশকিল হয়ে পড়ে। এসব ট্রাক্টরের চাকার নিচে পিষ্ট হলে কেউ আহত হয় না! তাৎক্ষণিকভাবে মৃত্যু ঘটে মানুষের। বিগত দুই দশকে বহুসংখ্যক গরু, ছাগল ও মানুষ পিষ্ট হয়েছে এই ট্রাক্টরের নিচে। শুধু তাই নয় ট্রাক্টরের সাথে সংঘর্ষ ঘটলে কোনো ক্ষুদে যানবাহন আস্ত থাকে না। ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। সিএনজি, ইজিবাইক, নছিমন, করিমন, ছোট হলার, মোটর চালিত রিকশা, প্যাডেলচালিত রিকশা, মোটরসাইকেলসহ বহুসংখ্যক যানবাহন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। কিন্তু কোনো ট্রাক্টরের মালিকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়নি। এসব ব্যাপারে পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করা হলে সে রকম কোন কাজ হয় না। তবে মাসোয়ারার দিয়েই চলছে এসব অবৈধ ট্রাক্টর। এমনিভাবে পোশাকধারীদেরকে মাসোয়ারা দিয়েই দিনের পর দিন হাইওয়ে থেকে শুরু করে গ্রামের রাস্তা পর্যন্ত চলাচল করছে ট্রাক্টর। এসব ট্রাক্টরকে কোনো ক্রমেই আইনের আওতায় আনা যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে কেউ কার্যকরী পদক্ষেপও গ্রহণ করছে না।