ইশরাত জাহান চৌধুরী, মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের ধূপাটিলা গ্রামে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি মখাবিলে প্রকল্প কার্যক্রমের ফলে এলাকার কৃষি উৎপাদন বিনষ্ট, মৎস্য আহরনের সুবিধা থেকে স্থানীয়দের বঞ্চিত ও লাঘাটাছড়া পাবসস লিমিটেড এর আওতাভূক্ত বিলে প্রকল্প কার্যক্রম বন্ধে পৃথক অভিযোগ পাওয়া গেছে। মখাবিলে মৎস্য প্রকল্পের এই কার্যক্রমে লাঘাটাছড়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি ও স্থানীয় এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে জেলা ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বরাবরে পৃথক দু’টি লিখিত অভিযোগে এই দাবি জানানো হয়। কৃষক ইসলাম উদ্দীন, জুয়েল আহমদ, জব্বার মিয়া ও আতিকুর রহমান সহ অভিযোগকারীরা বলেন, ধূপাটিলা গ্রামে মখাবিল এলাকায় ভূমিহীনদের মধ্যে সরকার কর্তৃক বন্দোবস্তকৃত খাসজমি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রায় শতাধিক একর জমিতে চাষাবাদ এবং প্রাকৃতিক ঐ বিলকে কেন্দ্র করে কৃষি আবাদ করা হয়। চলতি বোরো মৌসুমেও বিলের মাধ্যমে সেচ সুবিধা নিয়ে আশপাশ এলাকা চাষাবাদের আওতায় আনা হয়েছে। একইভাবে বর্ষা মৌসুমে মখাবিল ও পার্শ্ববর্তী লাঘাটা নদী থেকে দেশীয় মাছ আহরণ করে গরিব ও ভূমিহীন কৃষক, মৎস্যজীবি সহ এলাকাবাসী জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। এসব বিষয়কে উপেক্ষা করে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল মখাবিলে মৎস্য উৎপাদনের নামে বাণিজ্যিক খামার স্থাপনের জন্য এলাকার উপকার, সুবিধাভোগী ও কৃষক সাধারণের ব্যাপক অংশকে অবগত না করে মৎস্য বিভাগের মাধ্যমে প্রকল্প গ্রহণ করে অপরিকল্পিত কার্যক্রম শুরু করেছে। কৃষকরা বলেন, ব্যক্তি বিশেষের সুবিধার্থে অপরিকল্পিত এই মৎস্য প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের সেচ সুবিধাসহ কৃষি চাষাবাদ বিনষ্ট, মাছ আহরনের সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। কৃষকরা মখাবিলের আশপাশ এলাকার বোরো চাষাবাদ রক্ষায় বৃহত্তর জনসাধারণের সুযোগ-সুবিধা বিবেচনাক্রমে সেচ দিয়ে শুকিয়ে প্রাকৃতিক জলাধার ধ্বংস ও মৎস্য খামার স্থাপন কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে বন্ধের দাবি জানান। লাঘাটাছড়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সভাপতি দুরুদ আলী ও সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, লাঘাটাছড়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেড গঠন করার পর সমবায় বিভাগ কর্তৃক নিবন্ধনপ্রাপ্ত হয়ে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এই প্রকল্পের আওতায় ধূপাটিলা গ্রামের মখাবিলসহ আরও বিল ঝিল অন্তুর্ভূক্ত রয়েছে। তারা আরও বলেন, মখাবিলে সমিতির সদস্যগণ মাছ ধরে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে আসছে এবং বোরো ক্ষেত ইত্যাদিতে পানি সেচ দিয়ে থাকেন। এই বিলে মৎস্য উৎপাদনের জন্য সমিতির মাধ্যমে এলজিইডি, জাইকার নিকট প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে। তবে কতেক প্রভাবশালী ব্যক্তি মখাবিলে মৎস্য উৎপাদনের জন্য মৎস্য বিভাগের মাধ্যমে প্রকল্প গ্রহণ করেছেন। সমিতির আওতাভূক্ত বিলে সমিতি ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তি বিশেষের নামে বরাদ্ধ নিয়ে প্রকল্প গ্রহণ করলে সমিতির সদস্যদের ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। তাই এই প্রকল্প কার্যক্রম বন্ধের জন্য লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে মখাবিল মৎস্য প্রকল্পের সভাপতি ও পতনউষার ইউপি চেয়ারম্যান তওফিক আহমদ বাবু বলেন,জনগনের উপকারের কথা চিন্ত করে আমরা প্রকল্পটি গ্রহণ করেছি। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে কারো ক্ষতি হবেনা। উপকারভোগী যদি কেউ বাদ পরে থাকেন তাকে এতে অন্তরঃভুক্ত করতে আমাদের কোন আপত্তি নাই। কমলগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, স্থানীয় উপকারভোগীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে স্থানীয় কৃষক ও এলাকাবাসী সুবিধা ভোগ করবেন। কারো কোন ক্ষতি হবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *