বিজয় রায়,রানীশংকৈল সংবাদদাতা ঃ
সৃষ্টি প্রকৃতির রূপ অপরূপ, গুনে ভরা। যার তুলনা করার কিছু থাকেনা। সৃষ্টিকর্তা যাহা সৃষ্টি করেছেন তার সবটুকুই মানব কল্যাণে। অবহেলায় বেড়ে উঠা একটি ছোট কলাগাছ। এ গাছ থেকে আমরা সাধারণত পুষ্টিগুনে ভরপুর কলা খেয়ে থাকি। এর বাইরেও অনেক গুনের সমাহার কলাগাছ অবহেলায় ফেলে দিই। কারণ আমাদের জানা নেই সামান্য একটি কলা গাছ থেকে আর কি উপকার পেতে পারি। আর কি উপকার পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর কলাগাছের উপকার সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান অর্জন করে ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে কলা গাছ থেকে সুতা তৈরীর কারখানা গড়ে তুলেছেন স্কুল শিক্ষক দুরুল হোদা। এটি বাংলাদেশে সর্ব প্রথম ঠাকুরগাও জেলার হরিপুর উপজেলার শুকানি বাজারে ‘ নর্থ বাংলা এন্টারপ্রাইজ ইনলিভেন্ট’ নামে যাত্রা শুরু করে। ধারাবাহিকতায় লালমনিরহাট, জয়পুরহাট, মিঠাপুকুর, যশোর, টাঙ্গইল, খাগড়াছড়ি, ঠাকুরগাও সদর সহ সাতটি স্থানে কলাগাছ থেকে সুতা উৎপাদান কার্যক্রম অব্যাহত আছে। বাংলাদেশের ভেষজ বৈজ্ঞানিক ও এমএক্সএন মডার্ণ হারবাল ফুড লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ডা. আলমগীর মতি বলেছেন “ রাস্তার পাশে বেড়ে উঠা একটি গাছ আপনার মুল্যবান জীবন বাঁচাতে পারে ”। যার যথার্থতা মিলে একটি কলা গাছ থেকে শুধু কলা সংগ্রহ নয় পাশাপাশি অনেক রকমের উপকার গ্রহণ করার পদক্ষেপ গ্রহণ করি সকলে- হোক এমন প্রত্যয়।
কলাগাছ থেকে কিভাবে সুতা তৈরী করা সম্ভব তা ইন্টারনেটের মাধ্যমে জানতে পারেন স্কুল শিক্ষক দুরুল হোদা। গুনাগুন জানতে পেরে বেশ উদ্যোগি হয়ে উঠেন। এই সুতা তৈরী করার মেশিন সুদুর চিন থেকে আনতে হবে এবং সেটির মুল্য অনেক মুল্য দিয়ে কিনতে হবে। সিদ্ধান্ত নিলেন এই মেশিন কিভাবে তৈরী করা যায়। তা নিয়ে দিনাজপুর শহরের একজন দক্ষ কারিগরের সাথে আলোচনা করে সেখানেই সুতা তৈরীর মেশিন বানালেন। শতভাগ সফলতার সাথে মেশিনটি তৈরী করে শুকানি গ্রামে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এ কারখানা তৈরী করে সবার নজর কেড়েছেন তিনি।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, প্রতি ১০০ কেজি কলা গাছ থেকে ৮০ লিটার পানি, ১৭% ডাষ্ট এবং ৩% ফাইভার পাওয়া যায়। কলা গাছের পানি থেকে এসিড পানি, তারপিন, সাবান, জুস, অরগানাইক লিকুইড ফার্টিলাইজার, বিয়ার মদ তৈরী করা সম্ভব। ডাষ্ট থেকে মুরগী, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগী, মাছের খাবার তৈরী করা যায় এবং বাকি ফাইভার থেকে সুতা উৎপন্ন হয়। এই সুতা মজবুত টেকসই অনেক দামি। সুতা থেকে রশি (দড়ি), শিকা, দোলনা, ভ্যানিটি ব্যাগ সহ হস্ত শিল্পের যাবতীয় কাজে ব্যাবহার করা যায়। প্রতি কেজি সুতা ১৩০ টাকায় বিক্রী হয়। এটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
কলা সংগ্রহের পর অবহেলায় গাছগুলো ফেলে না দিই। কিন্তু গাছ থেকে নানা রকম উপকার পাওয়া সম্ভব এ জন্য শিল্প কারখানা গড়ে তোলা দরকার। সরকার পাট ও পাট জাত বস্ত্রের প্রতি যতটা আন্তরিক পাশাপাশি কলা গাছের সুতার প্রতি গুরুত্ব দিলে এ শিল্পটি খুব তাড়াতাড়ি জনপ্রিয়তা পাবে। এতে করে বেকারত্ব দুর করা সম্ভব। বাড়বে কর্মসংস্থান দুর হবে অভাব অনটন।
এ ব্যপারে নর্থ বাংলা এন্টারপ্রাইজ ইনলিভেন্ট’র প্রতিষ্ঠাতা মোঃ দুরুল হোদা বলেন, কলা গাছ থেকে তৈরী সুতা কানাডা, মালয়েশিয়া, ভারত, সিঙ্গাপুর সহ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে রপ্তানী করা হয়। যা থেকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের আরেক পথ প্রশস্থ হবে। এবং এ প্রকল্প যুব উন্নয়নের আওতায় আনলে কলা গাছ শিল্পের প্রসার লাভ করবে।