কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ভাসমান ডিপোতে তিন মাস থেকে তেলশূন্য থাকায় ৩ শত শ্রমিক বেকার হয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলায় যমুনা ও মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড’র ভাসমান তেল ডিপোতে তিনমাস থেকে তেল নেই। ডিপো দুটির বার্জ তিন মাস থেকে তেল শূন্য থাকায় তেলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে ডিলাররা বলেন,ডিপোর সুপারদের অবহেলায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ক্রেতাদেরও অতিরিক্ত অর্থগুনতে হচ্ছে। ডিপো দুটি বন্ধ থাকায় ৩ শত শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। কাজ না থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে তারা মানবেতর জীবন যাপন করছে। ডিলাররা জানান,ডিপো দুটি তেলশূন্য থাকায় তারা পার্বতীপুর থেকে সড়ক পথে তেল আনছেন। এতে এক লড়ি অর্থাৎ ৯ হাজার লিটার তেল আনতে প্রায় ১৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ বেশী হচ্ছে। একারনে প্রতি লিটারে ১.৭৫ টাকা বেশী পড়ছে। সব মিলে ডিলারদের প্রতি লিটার তেলে খরচ পড়ছে ৬৪.২৬ টাকা। অপরদিকে এক লিটার তেল কিনতে খুচরা ক্রেতাকে ৬৭ থেকে ৬৮ টাকা দিতে হচ্ছে। চিলমারীর এই ভাসমান ডিপো চিলমারী থেকে,নারায়ণপুর,যাত্রাপুর,সাহেবেরআলগা,রৌমারী,রাজিবপুর,সানন্দবাড়ী,জাফরগঞ্জ,কামারজানীসহ উলিপুর,নাগেশ্বরী,ভূরুঙ্গামারীসহ বিভিন্ন এলাকায় সেচ মৌসুমে প্রতিদিন ১হাজার ৫ শত ব্যারেল বা ৩ লাখ লিটার তেল সরবরাহ করা হয়। এছাড়া ব্রহ্ম¥পুত্র নদে ইঞ্জিন চালিত নৌকা,ড্রেজার মেশিন,বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জেনারেটর,মাহেন্দ্র গাড়ি,নসিমন,করিমন,ভটভটিসহ বিভিন্ন যন্ত্রে প্রতিদিন প্রায় ৭শ ব্যারেল বা ১ লাখ ৪০ হাজার লিটার তেলের চাহিদা রয়েছে। খুচরা ব্যবসায়ী নুর-ই আলম বাদল,রাশেদুল ইসলাম,মমিনুল,মিজানুর রহমান ব্যাপারী,ধীরেন্দ্র নাথ বলেন,অন্য জায়গা থেকে তেল আনতে পরিবহন খরচ বেশী হওয়ায় বেশী দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তেল ব্যবসায়ী নজির এন্ড সন্স’র স্বত্বাধিকারী মাইদুল ইসলাম জানান,পার্বতীপুর ও বাঘাবাড়ি থেকে সড়ক পথে তেল পরিবহন করলে লিটার প্রতি ২ টাকা বেশী খরচ হয়। ফলে ক্রেতাদের অধিক মূল্যে তেল কিনতে হয়। তাই জনসাধারণের সুবিধার্থে ডিপো দুটিতে তেলের মজুত বাড়িয়ে এ অঞ্চলে জ্বালানী তেলের সংকট নিরসন করা প্রয়োজন। বর্তমানে ডিপো দুটির সুপাররা বিক্রয় শূন্য দেখিয়ে ডিপো দুটি সরিয়ে নেয়ার পায়তারা করছে বলে স্থানীয়দের ধারণা।
এ ব্যাপারে মেঘনা ওয়েল কোম্পানীর ডিপো সুপার আবু সাঈদ জানান,উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তেল সরবরাহ করলে কোন বাঁধা নেই। তিনি আরও জানান,তেল সরবরাহের পাশাপাশি ডিপোটি সড়কের পাশাপাশি রাখা প্রয়োজন। মেঘনা কোম্পানীর এজিএম(সাপ্লাইয়ার ও ডিস্ট্রিবিউশন বিভাগ,চট্রগ্রাম) টিপু সুলতান মোবাইল ফোনে জানান,নদীর নাব্যতা না থাকায় তেল ভর্তি জাহাজ মাঝে মধ্যে পাঠানো সম্ভব হয়না। তিনি জানান,তেল পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যমুনা ওয়েল কোম্পানীর ডিএস মোঃ শাহাজালালের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে অফিসে পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনও রেসিভ করেননি। উল্লেখ্য প্রেসিডেন্ট হুসাইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে ১৯৮৯ সালে কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ভাসমান তেল ডিপো স্থাপন করে পদ্মা,মেঘনা ও যমুনা। এখান থেকে কুড়িগ্রাম,গাইবান্ধা,জামালপুর ও লালমনিরহাট জেলায় তেল সরবরাহ করে আসছিল কোম্পানী তিনটি। কয়েক বছরের মাথায় পদ্মা তেল কোম্পানী বার্জ মেরামতের অজুহাত দেখিয়ে ডিপো অন্যত্র সরিয়ে নেয়। এরপর থেকে মেঘনা ও যমুনা ওয়েল কোম্পানী দুটি এ অঞ্চলে দীর্ঘদিন থেকে তেল সরবরাহ করে আসছে।অনতি বিলম্বে ভাসমান ডিপো চালু করে বেকার শ্রমিকদের কর্মসংস্থানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে কর্তৃপক্ষ দাবী এলাকাবাসীর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *