এইচ,এম ইমরান, শৈলকুপা :
দেশের অন্যান্য জেলার মত ঝিনাইদহের শৈলকুপায় পেঁয়াজের বাজারে আগুনঝরা দাম। সাপ্তাহিক বাজার শনিবার ভোর থেকেই উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা সাধারণ কৃষকের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও লাভ খুঁজতে কোমর বেঁধে হাটে নেমেছে। প্রতিমন সাড়ে ৮ থেকে ৯ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই সাথে দূর্গন্ধযুক্ত পঁচানষ্ট, অঙ্কুরিত পেঁয়াজের দাম ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। তবে বাজার ঘুরে বড় কোন আড়তদার, মজুৎদারের গুদামজাত করা পেঁয়াজের দেখা মেলেনি। অপরদিকে পাইকারী বাজারের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে খুচরা পেঁয়াজের মূল্য।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, পৌরসভাসহ উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের গ্রাম্য হাটবাজারে সম্প্রতি পেঁয়াজ ব্যবসার বাজার নিয়েই বেশি আলোচনা হচ্ছে। প্রান্তিক কৃষকের ঘরে থাকা পেঁয়াজের পরিমাণ অতিশয় নগন্য অথচ বাজারমূল্য আকাশ ছোঁয়া। ভরা মৌসুমে মূল্যবঞ্চিত কৃষকের মাঝে হতাশা আর নিয়ন্ত্রনহীন বাজার নিয়ে বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের আগুন ।
হাটফাজিলপুর গ্রামের কৃষক আবু সাইদ জানান, পানির দরে পেঁঁয়াজ বিক্রি করেছে প্রান্তিক কৃষকেরা অথচ এখন কৃষিজীবি পরিবারে তেমন পেঁয়াজ না থাকলেও বাজারে রীতিমত হৈচৈ পড়েছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধিতে অধিকাংশ কৃষকের চেয়ে মজুদদারেরা বেশী আনন্দিত। তাছাড়া অনেক কৃষি পরিবারের নিজ প্রয়োজনে ব্যবহার করার মত পেঁয়াজও নেই বলে মন্তব্য করেন। হাতের নাগালে ছুঁই ছুই করছে নতুন মুড়ি পেঁয়াজ দু’এক সপ্তাহের মধ্যেই বাজারে আসতে শুরু করবে। ইতোমধ্যেই গত হাটে কিছু মুড়ি পেয়াজ বাজারে উঠেছিলো বলে অনেক কৃষক জানিয়েছেন।
শৈলকুপা বাজারের ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম জানান, এ বছর প্রতিকুল আবহাওয়ার কারনে অনেক ব্যবসায়ীর গোডাউনে হাজার হাজার মন পেঁয়াজ পচে নষ্ট হয়েছে, দূর্ভোগে বহু আড়তদার মজুদারেরা অনেক আগেই পেঁয়াজ ব্যবসার আশা ছেড়ে অন্য কৃষি ফসলের দিকে ঝুঁকেছে পড়েছে। তবে শেষ সময়ে কিছু ব্যবসার আশা জাগলেও সরকারি নিয়ন্ত্রন না থাকায় বাজার হযবরল হয়েছে।
তিনি জানান, পেঁয়াজ সংগ্রহের পর থেকেই আবহাওয়া অনুকুলে না থাকায় দিনের পর দিন পেঁয়াজ পচে সয়লাব হয়েছে, অনেক শ্রমিক নিয়ে পেঁয়াজ ছাটাই বাছাই করেও তেমন লাভ হয়নি বরং খরচ পড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। তাঁর মতে শতকরা ৬০ থেকে ৭০ ভাগ পেঁয়াজ নানা কারনে পঁচেই নষ্ট হয়েছে। তাছাড়াও অজানা আতঙ্কে শৈলকুপা বাজারের ব্যবসায়ীগণ তাদের পেঁয়াজ ধরে রাখতে পারেনি বলেও মন্তব্য করেন। পাইকপাড়া গ্রামের চাষী নজরুল ইসলাম বলেন, অনেক কৃষকই বীজ সংগ্রহের জন্য যে পেঁয়াজ রেখেছিল চড়া বাজার পেয়ে অনেকেই বীজ পেঁয়াজ বাজারে বিক্রি করছে।
শৈলকুপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার কুন্ডু জানান, কৃষকের মাঠে থাকা মুড়ি পেঁয়াজ তুলতে অন্তত আরো দু’এক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। বর্তমানে কৃষকের ঘরে থাকা পেঁয়াজের পরিমান কম হলেও ভাল দাম পেয়ে খুশি হয়েছেন অনেকে। শুধু পেঁয়াজ নয় সব কৃষিপন্যই যথাযথভাবে সংরক্ষনের বিষয়ে কৃষকদের আরো যতœশীল হতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।