সংবাদদাতা, খড়িবাড়ি:
আমরা আরব বা পাকিস্তান থেকে আসেনি, এখানকার ভূমিপুত্র আমরা তাই এনএরসি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বক্তব্য রাখার সময় দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ভাঙড়ের ভূমিপুত্র উদার আকাশ পত্রিকার সম্পাদক ফারুক আহমেদ।
শনিবার উত্তর ২৪ পরগনার খড়িবাড়ি বাজারে রাজারহাট রোডের উপর এনআরসি নিয়ে আলোচনা সভায় গর্জে উঠলো সমাজের বিশিষ্ট নাগরিকদের একটা অংশ। এদিনের শুরুতে সম্প্রীতিসভা ও কৃতি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল খড়িবাড়ি ইসলামিক এসোসিয়েশন।
অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকেই শের এ বাংলা সন্মাননা প্রদান করা হয় কামরুজ্জামানকে।
এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন হাড়োয়া বিধানসভা এলাকার বিধায়ক ও প্রাক্তন সাংসদ হাজী নুরুল ইসলাম, জেলা বন ও ভূমি কর্মাধক্ষ্য এ কে এম ফারহাদ, উদার আকাশ পত্রিকার সম্পাদক ফারুক আহমেদ, জেলা ইমাম কো-অর্ডিনেটর পীরজাদা হাসানুজ্জামান, অল ইন্ডিয়া সুন্নাতুল জামাতের সাধারণ সম্পাদক মুফতি আবদুল মাতিন, সিরাত সম্পাদক আবু সিদ্দিক খান, পশ্চিমবঙ্গ ইমাম মোয়াজ্জেন সমিতির সম্পাদক হাফেজ আজিজ উদ্দিন, সংখ্যালঘু ছাত্র কাউন্সিলের রাজ্য সম্পাদক নাজমুল আরেফিন, বাবর হোসেন, সমাজসেবী হাজী আবুল খায়ের, আবদার রহমান সহ বহু গুণী মানুষ।
এদিন উদার আকাশ পত্রিকার সম্পাদক ফারুক আহমেদ কুরআন শরীফের উদ্ধৃতি তুলে ধরে বলেন, আজ হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনের আদর্শ সারা পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে আছে। মহাবিশ্বে শান্তি ফেরাতে তিনি আহ্বান করেন হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনের আদর্শকে পাথেয় করতে হবে। মানবতা প্রতিষ্ঠিত করতে হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমগ্র পৃথিবীতে তিনি দৃষ্টান্ত রেখেছেন। তিনি সারা পৃথিবীর মানুষের জন্য রহমাতাল্লিল আলামীন, তিনি মানবতার মূর্ত প্রতীক ছিলেন। তিনি শুধু মুসলিমদের জন্য আসেন নি। সমগ্র মানবজাতির জন্য এসেছিলেন। আজ তাঁর আদর্শকে আমাদের মধ্যে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। শান্তির বাণী যিনি নিয়ে এসেছিলেন আমরা তাঁর উম্মত। আর আমাদেরকে এক শ্রেণির মানুষ সন্ত্রাসী বলছে। আমাদের নাকি এদেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলছেন।
অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য আমাদেরকে সংগ্রাম করতে হবে। অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে আমাদের প্রাপ্য অধিকার ছিনিয়ে নিতে হবে। অধিকার কেউ কাউকে দিয়ে দেয় না অধিকার ছিনিয়ে নিতে হয়।
দেশের বিভাজনের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসে মানুষের জন্য কাজ করতে হবে।
এদিন হাজী নুরুল ইসলাম সাহেব বক্তব্য রাখার সময় তিনি এনআরসি নিয়ে অযথা আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেন। তাঁর কথায়, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আপনাদের সঙ্গে আছেন। তাই আপনারা আতঙ্কিত হবেন না।
এ কে এম ফারহাদ বলেন,বিভেদের রাজনীতি করা হচ্ছে আজ দেশজুড়ে। তাই সাম্য ও সম্প্রীতি, শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনুসরণ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, এ বাংলায় এন আর সি হবে না। তাঁর গ্যারান্টর আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তাই শিক্ষিত হয়ে আপনারা এগিয়ে চুলুন।
এদিন মুহাম্মদ কামরুজ্জামান বিভাজন ও রাজনীতির ঊর্ধে উঠে মানুষকে নিয়ে উন্নয়ন করার কথা বলেন। আমাদের মুসলমানদেরকে আজ একবিংশ শতাব্দীতে এসে সম্প্রীতি সভা করতে হচ্ছে! কিন্তু আমাদের হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বড় সম্প্রীতির প্রতীক ছিলেন। প্রতিবাদ করাও হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত। তাই আমাদেরকে অধিকার আদায়ের জন্য প্রতিবাদ করতে হবে। এদিন তিনি বাবরি মসজিদের রায় নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেন। বাবরি রায় পুনর্বিবেচনার কথা তিনি বলেন।
গরিব আদিবাসী, দলিত ও মুসলমানদের ছেলে মেয়েদেরকে শিক্ষা অর্জনের কথা বলেন মুফতি আবদুল মাতিন। এরজন্য তাঁর মত, দরকার হলে একবেলা আধ পেটা থাকুন। তবুও আপনাদের ঘরের ছেলে মেয়েদেরকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করাতে হবে এই পরামর্শ দেন তিনি।
এদিন দেশের নানা অরাজকতা নিয়ে সরব হন কবি ও সাহিত্যিক ফারুক আহমেদ। হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন আদর্শকে পাথেয় করে সমাজ গঠনের কথা তুলে ধরেন তরুণ তুর্কী সৈনিকদের অন্যতম ফারুক আহমেদ।
সমাজের নানা কাজে ইমাম-মোয়াজ্জেন সাহেবদেরকে এগিয়ে আসার আহবান জানান পীরজাদা হাসানুজ্জামান ও হাফেজ আজিজ উদ্দিন। ইসলাম যে শান্তির কথা বলেছেন, রসূলের সুন্নাহকে আমাদের সমাজে প্রতিষ্ঠা করার কথা বলেন সিরাত সম্পাদক আবু সিদ্দিক খান।
এদিন অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, মাওলানা নুরুল আমিন, স্থানীয় ইমাম মাওলানা আবদুল মুহিত, প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ শহীদুল্লা সহ বিশিষ্টরা।
উপস্থিত ছিলেন ইসলামি এসোসিয়েশনের সম্পাদক শিক্ষক জিয়াউল হক, বাকিবুল ইসলাম, ইনজামুল, হাফেজ ইমরান আহমেদ, সালমান, মওলানা শামিম সাহাজী, ফাইজুল ইসলাম, হাসেম আলি, রেজাউল হক, মারিফুল হাসান প্রমুখ। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মাহমুদুল হাসান।