ইউসুফ আলমগীর:
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কুড়িগ্রাম জেলা শাখার ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনকে ঘিরে এখন জেলা জুড়ে নেতা, কর্মী, সমার্থকদের মধ্যে উৎসব আমেজ বিরাজ করছে। শুধু নেতাকর্মী সর্মথকই নয় বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষসহ সাধারণ মানুষের মাঝেও চলছে জল্পনা-কল্পনা। কে হচ্ছেন কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামীলীগের নতুন কান্ডারী? এমন প্রশ্নের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছেন সকলেই। নতুন মুখ সামনে চলে আসবে- নাকি পুরাতন নেতৃত্বই এগিয়ে নিয়ে যাবেন কুড়িগ্রামের আওয়ামীলীগকে। নানান দোলাচলে দুলছেন নেতাকর্মীরা। পার্টি অফিসসহ সকল আড্ডায় এখন অন্যতম আলোচনা কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন। চায়ের টেবিলে ঝড় উঠছে। অনেকেই মেলাচ্ছেন নানা সমীকরণ।
জানা গেছে, কুড়িগ্রাম জেলার ৯ উপজেলার মধ্যে শুধু মাত্র ভুরুঙ্গামারী, ফুলবাড়ী ও রাজারহাট ৩টি উপজেলার সম্মেলন শেষ করতে পেরেছে জেলা আওয়ামীলীগ। এছাড়া ৩টি পৌরসভর মধ্যে শুধুমাত্র কুড়িগ্রাম পৌরসভার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাকি ৬ উপজেলা ও ২টি পৌরসভার সম্মেলন অনুষ্ঠিত না হলেও বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) কুড়িগ্রাম স্টেডিয়াম মাঠে অনুষ্ঠিত হচ্ছে জেলা সম্মেলন। সম্মেলনকে ঘিরে নেতা-কর্মীদের মাঝে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। জেলা জুরে গুঞ্জন আওয়ামীলীগের জেলা সম্মেলন। এ সম্মেলনে আগামী ৩ বছরের জন্য নির্বাচিত হবেন নতুন নেতৃত্ব। নতুন কিংবা পুরাতন কে আসবেন এই নিয়ে নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষের মাঝেও মাঝে চলছে নানা আলোচনা।
তবে আলোচনা মুলত: আবর্তিত হচ্ছে বর্তমান জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো: জাফর আলীকে নিয়ে। তার সমর্থনে মঙ্গলবার আওয়ামীলীগ ও বিভিন্ন অঙ্গ এবং সহযোগি সংগঠন মিছিল-সমাবেশ করেছে। শ্লোগান দিয়েছে বর্তমান সভাপতি আমিনুল ইসলাম মঞ্জু মন্ডলের পক্ষেও।
একাধিক আলোচনা এবং অনির্ভরশীল সুত্রে জানা গেছে, এবারের কাউন্সিলে বিশেষ পরিবর্তন আসতে পারে। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো: জাফর আলী হতে পারেন সভাপতি। সেক্ষেত্রে নতুন মুখ আসতে পারেন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে। অপর দিকে মো: জাফর আলী সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আবারও নির্বাচিত হতে পারেন। তাতে বর্তমান সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম মঞ্জু মন্ডল হতে পারেন সভাপতি। তবে সভাপতি হিসেবে আরও দুই একজনের নাম রয়েছে আলোচনায়। এদের মধ্যে জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আকতারুজ্জামান মন্ডল অন্যতম। এছাড়াও যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন, জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি চাষী করিম, জেলা আওয়ামীলীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ছানালাল বকসী।
জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে আলোচনায় বেশ ক’জন নেতার নাম উচ্চারিত হচ্ছে। সেই সাথে তাদের সমর্থনে মিছিল-মিটিং না করলেও সোস্যাল মিডিয়াতে অনেকেই বিভিন্ন পোস্ট দিচ্ছেন, শেয়ার করছেন। সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী তালিকায় যাদের নাম উচ্চারিত হচ্ছে তারা হলেন, জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আমন উদ্দিন মঞ্জু, জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পিপি এ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন, জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ হাসান লোবান, জেলা আওয়ামী যুবলীগের আহ্বায়ক এ্যাডভোকেট রুহুল আমীন দুলাল।
এদিকে একধরণের অপ্রকাশ্য আলোচনাও হচ্ছে জেলা শহরের বাইরে দুই প্রভাবশালী নেতাদের ঘিরে। বিশেষ করে কুড়িগ্রাম-৪ আসনের এমপি এবং প্রাথমিক ও গণ শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো: জাকির হোসেন কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি হতে পারেন। তিনি গত কাউন্সিলে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।
অপরদিকে কুড়িগ্রাম-১ আসনের এমপি মো: আসলাম হোসেন সওদাগর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পদ পাবার প্রত্যাশা করেন বলেও একাধিক অসমর্থিত সুত্র দাবি করেন।
সম্মেলন বিষয়ে রাজারহাট উপজেলা মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ও কুড়িগ্রাম জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ সদস্য সাবেরা সুলতানা হ্যাপি বলেন, জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা সফল প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখহাসিনা যে শুদ্ধি অভিযান চলমান রেখেছেন তারই সুত্র ধরে কুড়িগ্রাম জেলা সম্মেলনের মাধ্যমে একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হবে। যেভাবে কুড়িগ্রাম জেলার উন্নয়নের অন্যতম প্রধান পুরুষ উন্নয়নের কারিগর জাফর ভাই ও মন্জু মন্ডল ভাইয়ের নেতৃত্বে কুড়িগ্রামের আওয়ামীলীগ সংগঠিত হয়েছে। সেই ধারা অব্যহত রেখে আগামীতে তাদের হাতেই নেতৃত্ব দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করা হবে। যাতে কুড়িগ্রাম জেলাসহ সারাদেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা চলমান থাকে।
কুড়িগ্রাম পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও ২নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান মাসুদ বলেন, সুষ্ঠু ও সুন্দর শৃংখলভাবে আমরা নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত করতে চাই। কুড়িগ্রামের উন্নয়নে যারা অগ্রণী ভূমিকা রেখে চলেছেন এবং রাখবেন, সেই সাথে পরিক্ষীত নেতাদেরই নির্বাচিত করবো আমরা।
সহকারী অধ্যাপক ও কুড়িগ্রাম জেলা পরিষদ সদস্য নারী নেত্রী মাহবুবা বেগম বলেন, বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বের কোনো বিকল্প নেই। প্রত্যাশা করছি আবারও তারা যেমন নির্বাচিত হবেন। তেমনি এ নতুন কমিটিতে আমিও একটি গুরুত্বপুর্ন পদ প্রত্যাশা করছি। দায়িত্ব পেলে পিছিয়ে পড়া কুড়িগ্রামের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বিশেষ করে নারী উন্নয়নে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী ও জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নময় বাংলাদেশ গড়ার কাজে নিজেকে আরও সক্রিয় রাখতে পারবো।
ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, যুবলীগ নেতা ও কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক খ,ম আতাউর রহমান বিপ্লব সম্মেলন সম্পর্কে বলেন, বাংলার মমতাময়ী মা, বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামীলীগে যে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন তার প্রভাব পড়বে কুড়িগ্রামের আওয়ামিলীগ সম্মেলনে। ত্যাগী ও বঞ্চিত নেতাকর্মীদের মনের কথা শেখ হাসিনা বুঝতে পারেন। তাই সম্মেলনে নেতাকর্মীদের চাওয়ার বাস্তবায়ন হবে। চলমান উন্নয়ন ও অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে নবীন ও প্রবীনের সমন্বয়ে সম্মেলনে আওয়ামী লীগ নেতা নির্বাচিত করা হবে ইনশাআল্লাহ।
জেলা আওয়ামীলীগের প্রচার সম্পাদক জিল্লর রহমান টিটু বলেন, আমরা সকল কাউন্সিলররা প্রস্তুত। আমরা মনে করি আবারও বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম মঞ্জু মন্ডল সভাপতি এবং মো: জাফর আলী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হবেন।
জেলা আওয়ামীলীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ছানালাল বকসী বলেন, কুড়িগ্রাম আওয়ামীলীগের অন্যতম কান্ডারি জাফর ভাইয়ের বিকল্প কেউ নেই। তিনি দীর্ঘদিন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। এবারের কাউন্সিলে তিনি যদি সভাপতি হন তাহলে দল আরও চাঙ্গা হবে। আর তিনি যদি আবারও সাধারণ সম্পাদক থাকেন তবে আমি সভাপতি হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবো।
জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ হাসান লোবান বলেন, আমাদের সংগঠনের নেত্রী বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত দেবেন, যে মতামত পোষণ করবেন, জননেত্রীর মতামতের উপরভিত্তি করে আমাদের কুড়িগ্রাম জেলার নেতাকর্মীরা সেই সিদ্ধান্তকে স্যালুট করে সেই নেতৃত্ব মেনে নিয়ে আগামী দিনে শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করবো।
সম্মেলন বিষয়ে জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পিপি এ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন বলেন, কাউন্সিল মানে এ রকম না যে শুধুমাত্র গঠনতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা। কাউন্সিল নতুন নেতৃত্ব তৈরির জন্য। আমরা আশা করি এই কাউন্সিলে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হবে। আমি নিজেও একজন প্রার্থী। গতবারও প্রার্থী ছিলাম। প্রত্যাশা করি, সম্মেলনে কাউন্সিলররাই সমস্ত কিছু নির্ধারিত করবে। তারাই তাদের নেতা নির্বাচিত করবেন। তবে কেন্দ্রের নির্দেশনাও মেনে নিয়ে আমাদের কর্তব্য বলেও মনে করছি।
উল্লেখ্য, কুড়িগ্রাম জেলা সম্মেলনে ৯ উপজেলা, ৩ পৌরসভা ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের কাউন্সিলররা নেতৃত্ব নির্বাচনে অংশ নিবেন। সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। সর্বশেষ ২০১৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারীর সম্মেলনে সভাপতি পদে আমিনুল ইসলাম মঞ্জু মন্ডল এবং সাধারন সম্পাদক পদে মোঃ জাফর আলী নির্বাচিত হন।