হুমায়ুন কবির সূর্য্য, কুড়িগ্রাম থেকে :
বাবার পেশার কারণে স্কুলে যাওয়া হয়নি জওহরলাল ও লালধারী রবিদাসের। কিশোর বয়স থেকে কুড়িগ্রাম শহরের খলিলগঞ্জ বাজারে জুতো পালিশের কাজে হাতেখড়ি হয় তাদের। বয়স বাড়ার সাথে সাথেই অভিজ্ঞতার ঝুলি তাদেরকে দক্ষ জুতোর কারিগর হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
ছোটভাই লালধারী রবিদাস জুতো পালিশের পাশাপাশি চামড়ার স্যান্ডেল, জুতো বাণিয়ে বিক্রি করা শুরু করে। অপরদিকে জুতোর কাজের পাশাপাশি তালাচাবির কারিগর হিসেবে কাজ শুরু করে বড় ভাই জওহরলাল রবিদাস। তাদের বাবা রামপ্রীত রবিদাস গত হয়েছেন একযুগ আগে। কুড়িগ্রাম নতুন রেলওয়ে স্টেশনের কাছে রেখে গেছেন ১৯ শতক জমি। এই জমির মালিক ওরা তিনভাই। এছাড়া আর কোন সম্পদ নেই তাদের।
প্রতিদিন সকালে খলিলগঞ্জ বাজারের পূর্বদিকের ফুটপাতে চট বিছিয়ে দিন শুরু হয় লালধারী রবিদাসের। পাশাপাশি বসেন বড়ভাই জওহরলাল রবিদাসও। তীব্র ঠান্ডা, গনগনে রোদ বা বৃষ্টির মধ্যেও ছাতা ঝুলিয়ে নিরবে কাজ করে গেছেন তারা। দীর্ঘ পয়তাল্লিশ বছর ধরে এলাকার সব শ্রেণির মানুষের সেবা করে গেছে দুভাই। একজন পায়ের সৌন্দর্য জুতো সেলাই থেকে পালিশের কাজে দক্ষ। অপরজন তালাচাবীর কারুকাজে অভিজ্ঞ।
দীর্ঘদিনের জীবনযুদ্ধে পরিবারের মুখে একমুঠো আহার জোটাতে কখনো খেয়ে কখনো বা আধপেটা হয়ে নিরবে কাজ করে গেছে দুভাই। অযতœ-অবহেলা আর পুষ্টির অভাবে শরীরে বাসা বেঁধেছে নিরব ঘাতক। কর্মজীবী দু’ভাই এখন শয্যাশায়ী। সংসারে নেমে এসেছে ঘোর অমানিশা। আয় নেই। ফলে চিকিৎসাও নেই।
বড় ভাই জওহরলাল রবিদাস এখন প্যারালাইসিসে শয্যাশায়ী। ঘরে স্ত্রীসহ তিন ছেলে ও দুই মেয়ে। ৫/৬ বছর ধরে বাড়িতে বোঝা হয়ে আছেন তিনি। শেষের দিকে জওহরলাল কুড়িগ্রাম নতুন রেলওয়ে স্টেশনে কাজ করতেন। হুইসেলের শব্দ শুনলেই মনটা ছুটে যায় তার ওইদিকে। কিন্তু চলতে না পারার অক্ষমতা তাকে আরো পঙ্গু করে রেখেছে।
অপরদিকে ছোট ভাই লালধারী রবিদাস দেড় থেকে দু’বছর ধরে বিছানায় শুয়ে মৃত্যুর প্রহর গুণছে। তার দুটো কিডনিই নষ্ট হবার পথে। প্রতিস্থাপনের চেষ্টাই করেনি অর্থের কারণে। কেউ দেখতে আসলে অনেক কষ্টে আধশোয়া হয়ে ফ্যালফ্যাল করে সেদিকে তাকিয়ে থাকে সে।
উপার্জনকারী লালধারী মৃতপথযাত্রী হওয়ায় হাল ছেড়ে দিয়েছে পুরো পরিবার। তার দুসন্তানের মধ্যে ছোট মেয়ে শ্রাবণি ৫ম শ্রেণিতে পড়াশুনা করছে। তার বড় ভাই বিজয় (১৭) এখন খলিলগঞ্জ বাজারে সেলুনে কাজ করে। তার স্বল্প আয়েই চলছে চার জনের টানাটানির সংসার।
লালধারীর স্ত্রী লাবনী জানান, ছেলের আয়ে তিনবেলা ঠিকমতো খাবার জোটেনা। শুরুতে বাজারের লোকজন চাঁদা তুলে চিকিৎসার খরচ জুটিয়েছে। কিন্তু দুস্থ মানুষের স্থায়ী কোন চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকায় বিনা চিকিৎসায় লোকটা বিছানায় পরে আছে। আমরা খেতে পারি না। তার চিকিৎসার খরচ মেটাবো কিভাবে?