জাকির সেলিম,পাবনা থেকেঃ
বৃদ্ধা মহিলাটির বয়স ৬৫ পেরিয়ে। বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়েছে তার দেহমন! চুল পেকে গেছে, চোখমুখ বসে গেছে, দাঁত পড়ে গেছে, চোখটাও অার অাগের মত অালো ছড়ায় না! গায়েও অার অাগের মত শক্তি নেই।

নাম তাঁর নুরজাহান। হান্ডিয়াল ইউনিয়নের হাঁসুপুর গ্রামে বাড়ি। নুরজাহান মানে হল সারা জাহানের অালো। নামেই শুধু নুরজাহান! তার জীবনে সুখের অালো নিভে গেছে সেই প্রায় ২৭ বছর পূর্বেই।যেদিন তার স্বামী নামের বেঁচে থাকার অবলম্বন পৃথিবী থেকে মারা গেছেন।

বৃদ্ধার দুই ছেলের কেউ মাকে দেখে না, ভাত দেয় না। তবে বড় ছেলে মাঝেমধ্যে ২/১ মুঠো ভাত দিলেও ছোট ছেলে তার বিপরীত। তারা সংসারের মাকে বাড়তি বোঝা ভাবে! কেননা তাদের সাংসারিক অবস্থাও ভাল না। দিনে অানে দিনে খায়!
তাই বৃদ্ধা মাকে দু’মুঠো ভাতের জন্যে জীবনটাকে কোনমতে বাঁচিয়ে রাখতে অন্যের বাড়িতে ঝি-দাসীর
কাজ করতে হচ্ছে! ৬৫ বয়স্কা মহিলারা যে সময় নামাজ কালাম,জেকের অাজগার, নাতিপুতিদের নিয়ে মহানন্দে বাঁকি জীবন এসে অায়াস অারামে পার করবে। কিন্তু বিধিবাম! সে বয়সে এসে এই মাকে এক পেটের জ্বালা মিটাতে পরের বাড়িতে দিনের পর দিন ঝি-দাসীর কাজ করতে হচ্ছে। রান্না করা, কাপড় কাচা, ঘর মোছার মত শক্ত কাজ করতে হয়। শরীর পারে না,দেহ ওঠে না,অবশ হয়ে যায় সারা দেহ! কিছু করার থাকে না! কারন পেটের জ্বালা বড় জ্বালা!

বৃদ্ধা মা বলছেন কোন ত্রান সামগ্রী পাননি। সত্যি সত্যি পেয়েছেন কি না, তা মহান অাল্লাহ পাক ভাল জানেন। কয়েকদিন অাগে বৃদ্ধা মাকে পাড়ার ছেলেরা ১বার ৩কেজি চাল,কিছু ডাল তরিতরকারি দিয়েছিল। তারপর অার কেউ কোন খোঁজখবর নেয়নি!
নুরজাহান অন্যের সংসারে অালো জ্বালিয়ে গেলেও নিজের জীবন সংসার রয়ে গেছে ঘোরতর অন্ধকারে! মাথার তেল জোটেনা, রোগ শোকে ওষুধ মেলে না, ক্ষুধায় অন্নজল জোটেনা! হায় রে জীবন তোর প্রতি
এত অবহেলা! এত অবসাদ!

এই বয়সে এসেও যদি কারো সহায়তা না পান, তাহলে এই বৃদ্ধা মায়েরা কোন বয়সে সহায়তা পাবেন! মরনের পরে!

জীবন জীবনের জন্যে একটু কি সহানুভূতি পেতে পারে না!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *