মমিনুল ইসলাম বাবু,কুড়িগ্রাম ঃ
উলিপুর থানা পুলিশের হস্তক্ষেপে স্বামীর বাড়িতে কয়েকদিন জন্য ঠাই হলেও শেষ পর্যন্ত সংসার হলো না জান্নাতীর বাধ্য হয়ে ফিরে যেতে হলো ঢাকায়। ইউপি সদস্য আর স্বামী শাওন কৌশলে সাদা ও হলুদ কাগজে সহি নিয়ে বিদায় করে দিলেন গৃহবধু জান্নাতীকে।
জানা যায়, ,কুড়িগ্রাম উলিপুর উপজেলার ধামশ্রেনী ইউনিয়নের কাশিয়াগাড়ী গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের কনিষ্ঠ পুত্র শাওন মিয়া নারায়ণগঞ্জ বিসিক গার্মেন্টসে চাকুরি করার সুবাদে মোহনপুর নিবাসী জনৈক কালু মিয়ার কন্যা জান্নাতি বেগমের সাথে পরিচয় ও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় ৫বছর আগে। গার্মেন্টসে চাকুরিরত স্বামী স্ত্রীর দাম্পত্য জীবনে তাদের ১৮মাস বয়সের সিনথিয়া নামক এক ফুটফুটে কন্যা সন্তান রয়েছে। এপ্রিলে শাওন মিয়া(২৭) তার স্ত্রী জান্নাতি বেগমকে না বলেই কোলের শিশু সিনথিয়াকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে উলিপুর কাশিয়াগাড়ী তার নিজ বাড়িতে চলে আসেন। গৃহবধু জান্নাতী বেগম (২৩) বিভিন্ন স্থানে খোজাখুজি করে না পেয়ে সে উলিপুর স্বামীর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করে অনেক কষ্টে ১মে শুক্রবার বিকেলে কাশিয়াগাড়ী গ্রামে তার স্বামী শাওনের বাড়িতে উপস্থিত হন।
দাম্পত্যকলহের জের ধরে জান্নাতি বেগমকে স্বামী ও শ্বাশুড়ি বাড়িতে ঢুকতে না দিলে নারায়ণগন্জ থেকে আসা গৃহবধু স্বামীর বাড়িতে আশ্রয় না পেয়ে পার্শবর্তী মাদ্রাসা মাঠে অবস্থান নেন এবং রাত ৯ টা পর্যন্ত এভাবে পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় গ্রামবাসী পুলিশকে খবর দেন। খবর পেয়ে উলিপুর থানা পুলিশের একটি টিম দ্রæত ঘটনাস্থলে এসে জান্নাতিকে উদ্ধার করে তার স্বামীর বাড়িতে পৌছে দিয়ে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলেন এবং এক সপ্তাহের খাদ্য সহায়তার ব্যবস্থা করেন।
হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা অবস্থায় শাওন মিয়া জান্নাতি বেগমকে আবারও বাড়ী থেকে বের করে দিলে স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল মতিন খন্দকার সহ এলাকার লোকজন পুনরায় জান্নাতি বেগমকে তার স্বামীর বাড়ীতে পৌছে দেন এবং দাম্পত্যকলহের বিষয়ে জুড়িবোর্ডে আলোচনা করে পরে সিন্ধান্ত জানানো হবে বলে জানান উপস্থিত লোকজন। কয়েকদিন পরে স্থানীয় লোকজনজনকে পাশ কাটিয়ে বর্তমান ইউপি সদস্য আব্দুল মতিন খন্দকার ও প্রাক্তন ইউপি সদস্য আব্দুর রশিদ শাওন মিয়ার সাথে যোগসাজসে মিমাংসার কথা বলে জান্নাতী বেগমের কাছে সাদা ও হলুদ কাগজে সই করে নেন। গত ১৩ মে বুধবার সকালে স্বামী শাওন জোড়পুর্বক জান্নাতী বেগমকে রংপুর থেকে ঢাকাগামী গাড়ীতে তুলে দেন।
জুড়িবোর্ডের সদস্য শফি কামাল ও আয়নায় হক জানান, ইউপি সদস্যসহ আমরা গ্রামবাসীকে নিয়ে জুড়িবোর্ড গঠন করে শাওন ও জান্নাতি বেগমের বিষয়ে আলোচনা করি। ২/৩ দিন পর জুড়িবোর্ডের সিদ্ধান্ত জানানো হবে সকলকে জানানো হয়। কিন্ত জুড়িবোর্ডের সদস্য ছাড়াই স্বামী শাওনের সাথে যোগসাজসে র্বতমান ইউপি সদস্য আব্দুল মতিন খন্দকার নিজে সিদ্ধান্ত নিয়ে মেয়েটিকে ঢাকায় পাঠিয়ে দিয়েছেন। এবিষয়ে আমাদেরকে কিছই জানানো হয়নি।
এ বিষয়ে গৃহবধু জান্নাতির সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, ওই এলাকার মেম্বার আমাদের দাম্পত্যকলহের মিমাংসা এবং আমার সন্তান ও স্বামীকে ফিরে দেয়ার কথা বলে আমার কাছে সাদা ও হলুদ কাগজে সহি করে নেয়। পরের দিন আমার স্বামী জোড়পুর্বক আমাকে রংপুর থেকে ঢাকাগামী গাড়ীতে তুলে দেয়। আমি নিরুপায় হয়ে ঢাকায় চলে আসি। আমার স্বামীসহ ঢাকায় থাকাকালীন ঘর ভাড়া এবং বিভিন্ন দোকানে আমার স্বামী প্রায় ২২ হাজার টাকা ধার নেন সেই টাকার জন্য পাওনাদার সব সময় আসছে এখন। আমার মা শাওনকে গাড়ী কেনার জন্য ২০হাজার টাকা দিয়েছিল। এখন ঢাকায় আসার পর আমার বাব-মা আমার সাথে সর্ম্পক বিচ্ছিন্ন করেছেন। স্বামী-সন্তানকে হারিয়ে এখন দিশেহারা হয়েছি। আমি সন্তান ও স্বামীকে ফিরে পেতে প্রশাসনের কাছে সহযোগীতার কামনা করছি।
এ বিষয়ে স্বামী শাওনের মোবাইলে (০১৭—–৮২৩) যোগাযোগ করা হলে মোবাইলটি খোলা থাকলে তিনি মোবাইল রিসিপ করেননি।
বর্তমান ইউপি সদস্য আব্দুল মতিন খন্দকার সাথে সাক্ষাতে কথা হলে তিনি বলেন, এলাকার লোকজন নিয়ে আলোচনা করা হলে গৃহবধু জান্নাতি শাওনের সংসার করবেন না এবং সন্তানকে রেখে যাবেন মর্মে জুড়ি বোর্ডকে জানান । জুডিবোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে ২০হাজার টাকা দেয়া হয় এবং সে স্বেচ্ছায় ঢাকা চলে যায়। এবিষয়ে আমি গ্রাম পুলিশকে দিয়ে উলিপুর থানায় অবগত করেছি।
উলিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, গৃহবধু জান্নাতি বেগমকে বাড়ী থেকে বের করে দেয়ার বিষয়ে আমার জানা নেই । এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।