আনোয়ার হোসেন আকাশ, রাণীশংকৈল প্রতিনিধি
ঠাকুরগাওয়ের রাণীশংকৈল ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর হানাদার বাহিনী মুক্ত দিবস। উপজেলার খুনিয়াদিঘি এক হৃদয় বিদারক নাম। স্বাধীনতা যুদ্ধে পাক বাহিনীর বর্বরতার স্বাক্ষর বহন করে আসছে এটি। লোমহর্ষক কাহিনীর মাইল ফলক হিসেবেও ধরা হয় এ নামটিকে। স্বাধীনতা যুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর ডাকে উদ্বুদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে এলাকার যুবক, বৃদ্ধসহ নানা বয়সের মানুষ। পাক সেনাদের পরাজিত করে দেশ স্বাধীন করার প্রত্যয় নিয়ে রাণীশংকৈলের প্রাণ পুরুষ আলী আকবর এমপি, ইমরান আলী চেয়ারম্যানসহ স্থাণীয় কিছু লোকের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ ক্যাম্প চালু করা হয় রাণীশংকৈল ডাক বাংলোতে। প্রশিণ ক্যাম্পের প্রশিক্ষক ছিলেন আবু সুফিয়ান। যোদ্ধারা উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে যায়। উন্নত প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফিরে তারা বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। খবর পেয়ে পাক সেনারা ৭১ সালের ১৯ এপ্রিল ঠাকুরগাও থেকে রাণীশংকৈলে ঢুকে। সেদিন হত্যা করে রাঙ্গাটুঙ্গি গ্রামের নজরুল ইসলাম, সহোদর গ্রামের নফিজ আলী মাষ্টারসহ ছাত্রনেতা মুনসুর আলী, মহেন চন্দ্র, কুরবান আলীসহ অনেককে। প্রাপ্ত তথ্যমতে নফিজ আলী মাষ্টারসহ কয়েকজনের লাশ আজো পাওয়া যায়নি। পীরগঞ্জ ক্যাম্প থেকে এসে পাক সেনারা ১লা মে মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ানকে সিংপাড়া সংলগ্ন নদীর ঘাটে গুলি করে আহত অবস্থায় তাকে আটক করে রংপুর কারাগারে আটকে রাখে পাক সেনারা। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে রাণীশংকৈল থানায় স্থাণীয়ভাবে ক্যাম্প চালু করে তারা। তখন থেকেই বাংলা মায়ের সন্তানদের উপর নির্বিচারে জুলুম, নিপিড়ন, নির্যাতন, হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষণ, লুটপাট চালায় হায়েনার দল। এদেশের কিছু দেশদ্রোহী লোক সহযোগীতা করে পাক সেনাদের। তারা নিজে লাভবান হওয়ার জন্য অবিচার করেছে সেদিন এ জাতির উপর, মা-মাটির উপর। যাদের আজো জাতি মা করতে পারেনি, পারছেনা। এলকার মানুষকে ধরে এনে অনাহারে দু-চার দিন তাদের ক্যাম্পে আটকে রাখার পর খুনিয়া দিঘি আনত। চোখ বেঁধে সাবিবদ্ধ করে চালাত নির্বিচারে গুলি। ফেলে দেয়া হতো খুনিয়াদিঘির পানিতে। পাক সেনারা যতদিন এখানে এ নির্মমতা চালিয়েছে ততদিন ভর পুকুরের পানি লাল রঙে রঙিয়ে থাকতো। দেয়া হতো অনেক বাঙ্গালীকে মৃত আধামৃত অথবা জীবিতদেরকে দেয়া হতো এই বদ্ধ ভূমিতে কবর। ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর রাণীশংকৈল থানা সহ ঠাকুরগাও জেলা পাক হানাদার মুক্ত হয়।
ভান্ডারা গ্রামের মৃত আনসারুল মজিরউদ্দিনের ছেলে যুদ্ধকালিন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রথমে রাণীশংকৈল ডাক বাংলোতে আবু সুফিয়ানের কাছে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। পরে ভারতে উন্নত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে দেশে ফিরে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। হানাদার বাহিনী মুক্ত করে ৩ ডিসেম্বর আমি বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা উত্তোলন করি।
খুনিয়াদিঘি গণকবরের স্বাক্ষরতা বহন করলেও এই বদ্ধ ভূমির কোন মর্যাদা রাখা হয়নি। এদেশের শহীদ সন্তানদের কবরের উপর অবাধে চলে নেশার আসর সহ নানা অপকর্ম। উপজেলা চত্বর থেকে আধা কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত খুনিয়াদিঘি। অযতœ অবহেলায় থাকার কারনে মাদক সেবীরা স্মৃতিসৌধ প্রাচীরের লোহার পাতি খুলে নিয়ে পালাচ্ছে। এটির প্রতি গুরুত্ব দেয়ার জন্য আকুল আহবান জানিয়েছেন এলাকার স্বাধীনতা পক্ষের মানুষ।
সংরক্ষিত ৩০১ এমপি মোছাঃ সেলিনা জাহান লিটা বলেন, ৩০ লক্ষ্য তাজা প্রাণ আর ৩ লক্ষ্য মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে। স্বাধীনতার মর্যাদা রক্ষা করা সকলের নৈতিক দায়িত্ব কর্তব্য। আমরা সকলে মিলে এ মর্যাদা অুন্ন রাখার চেষ্টা করব। এ মর্যাদা রার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান।