মো.আককাস আলী,নওগাঁ থেকে: – অযন্ত অবহেলায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে নওগাঁর ২২৪ বছরের ঐতিহাসিক দুবলহাটি রাজবাড়ি। কর্তৃপক্ষের উদাসিনতায় নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে জেলা সদর থেকে ৬ কি. মি. দক্ষিনে অবস্থিত জেলার অন্যতম ঐতিহাসিক নির্দশনটি। জানা গেছে ১৭৯৩ সালে লর্ড কণওয়ালিস এর কাছ থেকে ১৪ লক্ষ ৪ শত ৯৫ টাকা দিয়ে দুবলহাটি এলাকার রাজত্ব পত্তন নিয়ে রাজ্য পরিচালনা শুরু করেন রাজা কৃষ্ণনাথ। কৃষ্ণনাথ এর কোন পুত্র সন্তান না থাকায় তাঁর কন্যার পুত্র অর্থাৎ তার নাতি রাজা হরনাথ রায় ১৮৫৩ সালের রাজত্বভার গ্রহণ করেন।
রাজা হরনাথ রায়ের সময়ে দুবল হাটির রাজ্যের ব্যাপক বিস্তার ঘটে এসময় তিনি দুবল হাটি রাজ প্রসাদে সৌন্দর্য বৃদ্ধি, নাট্যশালা নির্মান ও প্রজা সাধারণের সুপিয় পানীয় জলের কষ্ট দূরীকরণের জন্য রাজ প্রসাদের পার্শ্ববর্তী এলাকায় অনেক পুকুর খনন করেন। জমিদারি প্রথা বিলুপ্তি হওয়ার পর রাজা হরনাথ রায় স্বপরিবারে চলে যান ভারতে। রাজবংশের স্মৃতি স্বরূপ থেকে যায় বিশাল সুরম্য অট্টালিকা দুবলহাটি রাজবাড়ি। পরর্তীতে এটি সরকারি সম্পদ হিসাবে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ নিজেদের অধীনে নেয়। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এটির দায়িত্ব ভার গ্রহণ করলেও অধ্যবধি তার সুরক্ষা বা সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেয়নি। স্থানীয় প্রভাব শালীরা দিনে দিনে রাজবাড়ির মূল্যবান সম্পদ লুট করে নিয়ে গেছেন।
এভাবে মূল্যবান দরজা জানালা শাল কাঠের তীর, লুট করে নিয়ে যাওয়ার পর এখন দালানে ইট পর্যন্ত খুলে নিয়ে যাওয়া শুরু করেছে। ধ্বংসের দারপ্রান্তে এতে দাড়ানো রাজবাড়িতে এখন গড়ে উঠেছে অসামাজিক কার্যকলাপের আখড়া। বসছে মদ, জুয়া, গাঁজার আড্ডা। এব্যাপারে দুবলহাটি ইউনিয়নের সাবেক সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্যা জামিলা বিবি জানান, দুবলহাটি রাজবাড়িটি নির্মাণ কৌশলে ঐতিহ্যের ছোয়া রয়েছে। এটিকে সংস্কার করলে এ রাজবাড়িকে ঘিরে গড়ে উঠতে পারে আকর্ষনীয় পর্যটন কেন্দ্র। দুবলহাটি ইউপি চেয়ারম্যান জানান, দুবলহাটি রাজবাড়ি রক্ষার জন্য স্থানীয় প্রশাসন, উপজেলা ও জেলা সমন্বয় সভায় বার বার অনুরোধ জানানোর পরও প্রশাসন এটিকে রক্ষার জন্য কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।
নওগাঁর স্থানীয় সামাজিক সংগঠন একুশে পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুর বারি বলেন, ‘সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতায় কালের গহ্বরে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহাসিক এই রাজবাড়িটি। ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে থাকা দুবলহাটি রাজবাড়িতে এখন সন্ধ্যা হলেই শুরু হয় আপত্তিকর কার্যকলাপ। অবাধে বসছে মদ, জুয়া, গাঁজার আসর। কেউ দেখার নেই। কারোর মাথাব্যথাও নেই। তিনি বলেন,‘এ ঐতিহাসিক স্থাপনাটির সংস্কার করা হলে একে ঘিরে গড়ে উঠতে পারে পর্যটন কেন্দ্র।