ফয়সাল আজম অপু, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে মাদক ব্যবসায়ী ও তার সহযোগীদের জোরপূর্বক ধর্ষণ চেষ্টা ও মারধরসহ নির্যাতনের অভিযোগ ঝর্ণা বেগম নামে এক গৃহবধূর। জানা যায়, শিবগঞ্জ উপজেলার চককীর্তি ইউনিয়নের দুবলী ভান্ডার গ্রামে গত রবিবার (১৮ অক্টোবর) রাত আনুমানিক ৯টার দিকে বাড়িতে একা পেয়ে এলাকায় চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম ও তার সহযোগী দুইজন মিলে ধর্ষণ চেষ্টা করে গৃহবধূকে। এসময় ধস্তাধস্তি করতে গিয়ে বেধড়ক মারধর করলে আহত গৃহবধূকে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরের দিন শিবগঞ্জ থানায় এজাহার করতে গেলে তা নিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং আদালতে মামলা করতে বলে। গত ২১ অক্টোবর বুধবার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে নির্যাতন ও ধর্ষণ চেষ্টার শিকার গৃহবধূ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার নথি এবং নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ ও তার পরিবার সূত্রে জানা যায়, এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে মো. সেতাউর রহমানের ছেলে মো. শফিকুল ইসলাম (৪০)। এর সূত্র ধরে ২০১৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারী মাদক ব্যবসায়ী শফিকুলকে গোমস্তাপুর ঈদগাহ মোড়ে ৫০ বোতল ফেনসিডিলসহ হাতেনাতে আটক করে গোমস্তাপুর থানা পুলিশ।
এছাড়াও একই বছরের ০৫ মে নওগাঁ জেলার মান্দা থানার দেলুয়াবাড়ি-চৌবাড়ীয়া রাস্তায় জ্যোতি কোল্ড স্টোরের সামনে থেকে ৮০ বোতল ভারতীয় ফেনসিডিলসহ শফিকুলকে আটক করে মান্দা থানা পুলিশ। উভয় ঘটনায় মাদক ব্যবসার সাথে নিজের সংশ্লিষ্টতার করা স্বীকার করে শফিকুল ইসলাম। দীর্ঘদিন ধরে চলা মাদক ব্যবসার কারনে তার বাড়িতে মাদক সেবন ও ক্রয় করতে বখাটে মাদকসেবীদের আনাগোনা লেগেই থাকে। অপরদিকে স্বামী-সন্তান দুজনই ঢাকায় রিক্সা চালানোর কাজ করায় পাশের বাড়িতে একাই থাকেন নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগী গৃহবধূ ঝর্ণা বেগম । তাই বখাটেদের উৎপাত রোধে মাদক ব্যবসার প্রতিবাদ করে গৃহবধূ।
ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ ঝর্ণা বেগম জানান, মাদকের ছড়াছড়ি রোধে এসব মানা করতে গেলে পূর্ব পরিকল্পনা করে ফাঁকা বাড়ি পেয়ে রাত আনুমানিক ৯টার দিকে ধর্ষণ চেষ্টা করে। শফিকুল জোরপূর্বক ধর্ষনের চেষ্টাকালে আমাকে জাপটিয়ে ধরলে ও পরে বুকের উপর উঠলে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করি। এসময় শফিকুলের মাদক ব্যবসায়ের দুই সহযোগী একই এলাকার মো. ফারুক হোসেনের ছেলে রাসেল আলী (২৮) ও মৃত বিশু আলীর ছেলে সাজেমান আলী (৪৫) এলোপাতাড়ি চড়থাপ্পড়, কিল-ঘুষি মারতে থাকলে আমার চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে আসলে আমাকে ছেড়ে দেয়। আমার বাড়িতে এসে এমন নির্যাতনের পর উল্টো আমাকেই মিথ্যা অপবাদ দেয়।
নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর ভাই বলেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসায়ের সাথে জড়িত, তাই তাদের টাকা অনেক বেশি। আমার বোনের সাথে এমন অন্যায় করার পর উল্টো তারাই এখন হুমকি দিচ্ছে। এমনকি তাদের ভয়ে এলাকার কেউ মুখ খুলতে চায় না। আমরা গরিব, তাই আমাদের সাথে অন্যায় করার পরেও আমরা কোন প্রতিকার পাবো না। দেশে কি আইন-আদালত বলে কিছু নাই? থানায় গেলেও আমাদের মামলা নেয় না। এর বিচার না হলে, আজ আমার বোনের সাথে হয়েছে, কাল হয়তো অন্য কারো বোনের সাথেও এমনটি হবে।
এভাবে একদিন সমাজটাই শেষ হয়ে যাবে। আমরা এর উপযুক্ত বিচার চাই।
ভুক্তভোগী আরও অনেকে অভিযোগ করে বলেন, ৭/৮ মাস আগেও শফিকুল পরিকল্পিত ভাবে ঝর্ণা বেগম ও তার ছেলেকে মিথ্যা অভিযোগ এনে শারীরিক নির্যাতন করে এবং চককির্তী ইউনিয়ন পরিষদে জমা দিলে উল্টো শফিকুলকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন শালিশের মাধ্যমে মোফাখ্খারুল চেয়ারম্যান সহ অন্যান্য সদস্যবৃন্দ।
এ সকল অভিযোগ অস্বীকার করে শফিকুল ইসলাম জানান, মাদকের ব্যবসার সাথে বর্তমানে আমার কোন সম্পর্ক নেয়। তবে ২/৩ বছর আগে মাদক ব্যবসায় নিজের সংশ্লিষ্টতার কথা অকপটে স্বীকার করে তিনি বলেন, আগের এসব মামলা নিয়ে আমাকে মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে মিথ্যা অপবাদ দেয়া হয়েছে। আমি অনেক দিন আগেই এসব ছেড়ে বর্তমানে রাজমিস্ত্রীর কাজ করছি। এমনকি গত রবিবার ধর্ষণ চেষ্টার কোন ঘটনায় ঘটেনি। পূর্বশত্রুতার জেরে এমন মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মামলা করা হয়েছে বলে জানান শফিকুল ইসলাম।
চককির্তী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোফাখ্খারুল ইসলাম মুঠোফোনে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, শফিকুল ইসলাম একজন পেশাদার মাদক ব্যবসায়ী, তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মামলা আছে। ৬/৭ মাস পূর্বেও ঝর্ণা বেগম ও তার ছেলেকে লাঞ্চিত করে ইউপি পরিষদে জমা দিয়েছিলো। আমি বিচার-শালিশ করে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছিলো শফিকুলকে। উপযুক্ত বিচারের দাবিও জানান তিনি।
শিবগঞ্জ থানার অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) শামসুল আলম শাহ অভিযোগ গ্রহণ না করার কথা অস্বীকার করে বলেন, এ বিষয়ে আমার নিকট কেউ অভিযোগ নিয়ে আসেনি, এলে অবশ্যই গ্রহণ করা হতো।