কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
নাগেশ্বরীর ইসলামপুর গ্রামে জমিজমার জেরে ভূমিদস্যু জাহাঙ্গীর চক্রের হামলার শিকার কাজের মেয়ে সুরতভান বেগমকে উদ্ধার করায় ইউপি সচিবকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানোর পায়তারার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার কচাকাটা থানার কচাকাটা ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের ইসমাইল হোসেনের পুত্র দিন মুজুর আবুল কাশেমের সাথে পাশ্ববর্তী হায়দার আলীর পুত্র শাহালমের দীর্ঘদিন ধরে জমিজমার বিরোধ চলে আসছে। এক পর্যায়ে গত ১৬মে ২০২১খ্রিঃ দিন মুজুর আবুল কাশেম ও তার স্ত্রী সুরতভান বেগম, পুত্র ইসলাম মিলে ইসলামপুর গ্রামের ফকর উদ্দিনের পুত্র ও ভুরুঙ্গামারী উপজেলার আন্ধারীঝাড় ইউনিয়ন পরিষদের সচিব নজরুল ইসলামের ধান কেটে অনুমানিক বিকাল ৪টায় ধানের আটি নিয়ে বাড়ী ফেরার পথিমধ্যে ওঁ পেতে থাকা ছাফাতুল্লার পুত্র জাহাঙ্গীর এর নির্দেশে শাহালম, সাজিয়া বেগম, মোসলেম উদ্দিন, শামছুল হক, জাকিউল ইসলাম, ছোট বাবু, সালেহা ও সহিদা বেগম সংঘবদ্ধরা অস্ত্রেসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আবুল কাশেম, সুরতভান বেগম, ইসলামকে এলোপাতাড়ি মারধর করেন এবং সুরতভান বেগমকে মেরে পঙ্গু করেন। আহতাদের চিৎকারে সচিব নজরুল ইসলাম ঘটনার স্থলে এসে মারধর বন্ধের চেষ্টা এবং উভয় পক্ষকে সরিয়ে দেন। আহতরা ভুরুঙ্গামারী হাসপাতালে চিকিত্সা নেয়। বর্তমানে সুরতভান বেগম পঙ্গুত্ব জীবন যাপন করাসহ অর্থের অভাবে চিকিত্সা করতে পারছে না। ঘটনার দিন বিবাদী জাহাঙ্গীরের নির্দেশে হায়দার আলীর স্ত্রী সালেহা ও তার পুত্র শাহালম নিজের শরীরে ইনজুরি করে ভুরুঙ্গামারী হাসপাতালে তিন দিন ভর্তি থেকে এলাকাবাসীকে জানান তারা বর্তমানেও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
অপরদিকে ঘটনাটিকে ধামাচাপা দিতে বিবাদী জাহাঙ্গীর মরিয়া হয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও ইন্দ্রগড় বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহাদত হোসেন মন্ডলের সহযোগিতা নিয়ে কচাকাটা থানায় জাহাঙ্গীর বাদী হয়ে ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা ও আন্ধারীঝাড় ইউনিয়ন পরিষদের সচিব নির্দোষ নজরুল ইসলামকে জ্বড়িয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করেন এবং অসত্য অভিযোগটি এজাহারে রেকর্ডের পায়তারা করছেন বলে ভুক্তভোগী আবুল কাশেম অভিযোগ করেন।
বিবাদী আবুল কাশেম (০১৭৮৪২৮১০২০) মোবাইলে কথা হলে তিনি বলেন, আমি ও আমার মা সালেহা রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছি। কতো নম্বর বেডে আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেদার ইউনিয়নের টাপুর চর এলাকায় শশুড় বাড়িতে স্ত্রী ও মা সহ আছি। আসেন স্বাক্ষাতে কথা বলবো।
স্থানীয় ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মফিজুল ইসলাম, আইয়ুব আলীসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, হত দরিদ্র আবুল কাশেম, সুরতভান বেগম ও ইসলাম পেটের দায়ে সচিবের ধান কেটে আটি বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পথে জাহাঙ্গীর গংরা তাদের এলোপাতাড়ি মারধর করছে। সুরতভান বেগমকে মেরে পঙ্গু করে।
ভুক্তভোগী আবুল কাশেম বলেন, আমার এক পুত্র সৈইফুর রহমান মিরকি বেরাম রোগে আক্রান্ত। আমি নিজেও বহেরা রোগে অসুস্থ। ছোট ছেলে ইসলামের আয়ে সংসার চলে তাকে মারধর করে আহত করেছে। আমার স্ত্রী সচিবের বাড়িতে কাজ করে জীবন নির্বাহ করতো। এদিকে আমার স্ত্রী পঙ্গু। আমরা মানবেতর জীবন যাপন করছি। বর্তমানে জাহাঙ্গীর গংরা আমাকে কচাকাটা থানা থেকে মামলা তুলে নিতে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছে।
ভুক্তভোগী আবুল কাশেমের স্ত্রী সুরতভান বেগম বলেন, জাহাঙ্গীরের নির্দেশে শাহালম সংঘবদ্ধরা আমাকে বেদম মারধরে পঙ্গু করে। আমি পঙ্গুত্ব জীবন যাপন করছি। প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে তাদের শাস্তি দাবি করছি।
আন্ধারীঝাড় ইউনিয়ন পরিষদের সচিব নজরুল ইসলাম বলেন, সুরতভান বেগম আমার বাড়িতে মাসিক বেতনে কাজ করে আসছে। ঘটনার দিন আবুল কাশেম, সুরতভান বেগম ও ইসলাম আমার ধান কাটতো এবং ধানের আটি নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে তাদের চিৎকারে আমি ঘটনার স্থলে এসে দেখি কাশেমের গতিপথ রুদ্ধ করে জাহাঙ্গীর গংরা এলোপাতাড়ি মারধর করছে। আমি মারধর বন্ধের চেষ্টাসহ উভয় পক্ষকে সরিয়ে দেই। এ জন্য জাহাঙ্গীর আমাকে সাজানো মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। প্রশাসনের সু-দৃষ্টি কামনা করছি।
এ ব্যাপারে সহকারী পুলিশ সুপার (ভুরুঙ্গামারী সার্কেল-ভারপ্রাপ্ত) মো: সুমন রেজা বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।